Thursday, December 26, 2019

রাগ আর ভালোবাসা
রাগ আর ভালোবাসা একটি আরেকটির বিপরীতে হলেও এক জায়গায় মিল আছে দুজনের। দুটিই অন্তহীন।
রাগ যদি মনে পুষে রাখেন, আপনি দগ্ধ হয়ে যাবেন। মনকে ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলুন। বস্তুকে ভালো না বেসে মানুষকে ভালোবাসুন।
ইন্টারনেটের যুগে আমরা বস্তুকে ভালোবাসি, মানুষকে ভুলে যাই।
পাঠক, ভুলে যাবেননা, বস্তু শুধু ব্যবহার করার জন্য আর মানুষ শুধু ভালোবাসার জন্য।
মনকে বলুন আমি অন্যকে ভালোবাসব।
সে যদি অন্ধ বা খোঁড়া হয়, বোকা বা বধির হয় তাতে কি হয়েছে? সে তো মানুষ। হৃদয়ে ভালোবাসা চাঙ্গিঁয়ে তুলুন।
আপনার চিন্তাধারাকে নিয়ন্ত্রণ করুন কারণ সেটাই আপনার ভাষা হয়ে দাঁড়াবে।
আপনার ভাষাকে নিয়ন্ত্রণ করুন সেটাই আপনার আচরণ হয়ে দাঁড়াবে।
আপনার আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করুন কারণ সেটাই আপনার অভ্যাস হয়ে দাঁড়াবে।
আপনার অভ্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করুন কারণ সেটাই আপনার চরিত্র হয়ে দাঁড়াবে।
আপনার চরিত্রকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন কারণ সেটাই আপনার নিয়তি হয়ে দাঁড়াবে।
আবারো বলছি :
আপনি যেই মুহূর্তে আপনার চিন্তাধারাকে পরিবর্তন করবেন সেই মুহূর্তে আপনার জীবন পরিবর্তিত হয়ে যাবে।

Wednesday, December 18, 2019

যদি কাওকে জিজ্ঞাস করা হয় বাংলাদেশ কবে শত্রুমুক্ত হয়, সবাই চোখবন্ধ করে বলবে ১৬ ডিসেম্বর। কিন্ত পুরটা সত্যি নয়। পিকচার এখনো বাকি!
সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি, তথা পাকিস্তানি বাহিনীর গলায় মরন কামড়টা বসানো তখনো বাকি ছিলো। যেখানে যুদ্ধ হয়েছিলো ট্যাংকের সাথে ট্যাংকের, কামানের সাথে কামানের, সৈনিকের সাথে সৈনিকের হাতাহাতি যুদ্ধ। সেদিন এক অতিমানবের আবির্ভাব ঘটেছিলো।
পড়ুন সিনেমাকে হার মানানোর মত সেই ঘটনাটি।
মুক্তিযুদ্ধের_শেষ_অধ্যায় ব্যাটল_ফর_খুলনা
১.
ডেটলাইন খুলনা, ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১। আগের দিন ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে। সমগ্র বাংলাদেশ তখন বিজয়ের আনন্দে উৎসবমুখর থাকলেও দেশের দক্ষিণে তখন চলছে এই সমরের সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ। তখনও মাটি কামড়ে খুলনা দখল করে রেখেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি অংশ, বিভিন্ন স্থানে গড়ে তুলেছে শক্ত প্রতিরোধ। এদিকে গোটা দেশ মুক্ত করা থেকে মাত্র কয়েক পা দূরে মুক্তিবাহিনী, সেই সাথে ভারতীয় সেনাবাহিনী। যুদ্ধটা তখন পরিণত অন্যরকম এক সম্মানের যুদ্ধে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য এটা এক মরণপণ লড়াই, আত্মসম্মানের যুদ্ধও বটে। এদিকে সমস্ত পূর্ব রনাঙ্গনে বিপুল বিজয় পেলেও খুলনায় এসেই প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
ঢাকায় যেহেতু নিয়াজি আত্মসমর্পণ করে ফেলেছে এর আগেই, কাজেই এইখানে প্রবল লড়াই আঘাত করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অহমে। অন্যদিকে নয় মাস ধরে গণহত্যার শিকার বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করতে মুক্তিবাহিনী তখন ব্যাগ্র হয়ে উঠেছে, সারা দেশ সাফল্যের সাথে মুক্ত করতে পারলেও এখানে এসেই আটকে গেছেন তারা। এই যুদ্ধ তখন মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন-মরণের লড়াই।বিভিন্ন কারণে এই যুদ্ধটিকে গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। প্রথম কারণটি আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী অফিসিয়ালি আত্মসমর্পন করলেও খুলনা তখনও মুক্ত হয়নি; কাজেই খুলনা মুক্ত করতেই হবে। দ্বিতীয়ত, খুলনার এই যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি ছিল ট্যাঙ্ক, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী এবং পদাতিক বাহিনীর সমন্বিত অংশগ্রহন। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী সম্মিলিত ভাবেই রণনৈপুন্যের পরিচয় দেয়। এই সময় খুলনার শিরোমণিতে যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধটি সংঘটিত হয়, তার নাম ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় ট্যাঙ্কযুদ্ধগুলোর তালিকায় আছে। ব্যাটল অফ শিরোমণি নামে খ্যাত এই যুদ্ধ সম্পর্কে প্রচুর রোমাঞ্চকর গল্প আছে, আছে মিথও। যেগুলোর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সত্য যা জানা যায়, সেটাও কম রোমাঞ্চকর নয়, বরং অনেক গল্পের চেয়েও শাসরুদ্ধকর মনে হতে পারে। এই পোস্টে রেফারেন্স হিসেবে প্রধানত খুলনার সেই যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি সৈনিকদের জবানী এবং প্রত্যক্ষ্যদর্শী দেশী ও বিদেশী সাংবাদিকদের প্রতিবেদন ব্যবহৃত হয়েছে।
২.
যশোর ক্যান্টনমেন্ট ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। বিমান আক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা সহ যশোর ছিল একটি দুর্ভেদ্য দুর্গ। বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশের সাথে যোগাযোগের যশোরের গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশ-ভারত সম্মিলিত বাহিনীর জন্য যশোরকে শত্রুমুক্ত করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। তবে এখানে প্রবল প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হয় তাদের, দু'দিন একটানা প্রচণ্ড আক্রমণের পরেও যশোর ক্যান্টনমেন্ট ছিল কার্যত অক্ষত। জেনারেল আনসারির অধীনস্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৫৭ ও ১০৭ ব্রিগেড এখানে বেশ শক্ত প্রতিরোধই গড়ে তোলে। তবে শেষ পর্যন্ত ৬ ডিসেম্বর ভোরবেলা পাকিস্তান সেনাবাহিনী যশোর ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করা শুরু করে, কিছুটা রহস্যজনক ভাবেই। আট তারিখ পর্যন্ত চলে এই পিছু হটা। আনসারি ৫৭ ব্রিগেডকে নিয়ে মাগুরার দিকে অগ্রসর হয়, অন্যদিকে ১০৭ ব্রিগেড এগিয়ে যায় খুলনার দিকে। ১০৭ ব্রিগেডের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার মালিক হায়াত খান খুলনাতেই অবস্থান করছিল; বস্তুত, খুলনা থেকে নিজের ব্রিগেডকে নির্দেশ দিত হায়াত খান। যশোরে রয়ে গেল একটি ব্যাটালিয়ন, অগ্রসরমান ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীকে বাধা দিতে। প্রশ্ন হচ্ছে, সুরক্ষিত এই দুর্গ ছেড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কেন সরে গেল?
এই প্রসঙ্গে আত্মসমর্পনের পর জিজ্ঞাসাবাদে হায়াত খান জানায়, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে মার্কিন সপ্তম নৌবহর আসার খবরে আশান্বিত হয়ে তারা খুলনা হয়ে সাগরের দিকে এগিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। শক্তিশালী ক্যান্টনমেন্টে থাকা সত্বেও মূলত নিয়াজির দুর্বল নেতৃত্ব ও ভেঙ্গে পড়ার কারণে পাকিস্তানি সৈনিকেরা বাঁচার কোন আশা দেখেনি। শেষ ভরসা হিসেবেই মার্কিন নৌবহরের আশায় যশোর ক্যাণ্টনমেন্ট ত্যাগ করে তারা ।পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই পশ্চাদপসরণ সব দিক থেকেই অপ্রত্যাশিত ছিল। আট নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর মঞ্জুর ওয়ারলেসে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সর্বপ্রথম জানান, পাকিস্তান সেনাবাহিনী যশোর ছেড়ে অতি দ্রুত খুলনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে; তারা সেটা বিশ্বাস করেননি, সঙ্গত কারণেই।
প্রায় সব সমর নায়কের ধারণা ছিল যশোর ক্যান্টনমেন্টের পতন ঘটাতে কমপক্ষে এক মাস সময় প্রয়োজন হবে, সেখানে এত দ্রুত তাদের এই হাল ছেড়ে দেয়ার ঘটনা প্রথম ধাক্কায় কেউই বিশ্বাস করতে পারেননি। মেজর মঞ্জুর একজন সংবাদবাহককে পাঠিয়ে আবার খবর পাঠান। এবার টনক নড়ে মেজর জেনারেল দলবীর সিংয়ের, নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত হয়ে নেন বিষয়টি । ৭ তারিখ সন্ধ্যাবেলায় যশোর ক্যাণ্টনমেন্ট ছেড়ে খুলনার দিকে অগ্রসর হন দলবির সিং ।এদিকে দশ তারিখে তারিখে খুলনার প্রবেশমুখ ফুলতলায় পৌঁছায় হায়াত খান। এখানে সাময়িক অবস্থান নিয়ে কিছুটা দূরে শিরোমণিকে একটি শক্তিশালী দুর্গে পরিণত করতে সচেষ্ট হয় তারা। সৈনিকদের কাজে লাগিয়ে দেয় হায়াত খান, স্থানীয় বাঙালিদের অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে কাজ করতে বাধ্য করে তারা খুলনা শিল্প এলাকার ইস্টার্ন জুট মিল, আফিল জুট মিল, আলীম জুট মিল সহ প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরি করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
স্থানীয় কেবল ফ্যাক্টরিতে স্থাপন করা হয় অস্থায়ী সদর দফতর। স্থানীয় পাকা ভবনগুলো থেকে বাসিন্দাদের বের করে দিয়ে ব্যারাকে রূপান্তরিত করা হয়। স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, আটরা গিলাতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল হুদার বাড়িতে বসানো যোগাযোগ দফতর, বসানো হয় অস্থায়ী শক্তিশালী ওয়ারলেস এবং টেলিফোন। একটি অস্থায়ী হাসপাতালও বসানো হয়। সব মিলিয়ে শিরোমণিকে একটি ছোট কিন্তু শক্তিশালী ক্যান্টমেন্টে পরিণত করে হায়াত খানের বাহিনী। ফরিদপুর, পটুয়াখালি, বরিশাল থেকে পালিয়ে আশা দলগুলোকেও এখানে জড়ো করা হয় । প্রায় ১৫-২০ গজ পরপর বাংকার খনন করা হয় । চারপাশে প্রচুর ভারী অস্থ্রশস্ত্র সহ ৩২ টি ট্যাঙ্ক মোতায়েন করা হয় । এর সাথে ইপিসিএএফ ও রাজাকার বাহিনীর একটি উইং এবং ১৫০ জন আলশামসও ছিল ।
অন্যদিকে দলবির সিং যশোর থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসছেন, গাইড হিসেবে তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসছেন মেজর এম এ মঞ্জুর কর্তৃক নিয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল। পথে পাকিস্তানিদের রেখে আসা অনেক প্রতিবন্ধক পার হয়ে এসে ১১ ডিসেম্বর ফুলতলা এলাকায় মুক্তিবাহিনীর একাংশ ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর নবম ডিভিশন মুখোমুখি হলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর।মুক্তিবাহিনীর গাইড দল, ভারতীয় ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে শিরোমণিতে রেখে, এই সুযোগে আমরা দেখে আসি খুলনার অন্যান্য অঞ্চল শত্রুমুক্ত করতে কী তৎপরতা চলছে তখন।
৩.
ততদিনে খুলনার মূল শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ জেলার বেশীরভাগ এলাকাই শত্রুমুক্ত হয়েছে, এদিকে ভারতের স্বীকৃতিও পেয়েছে বাংলাদেশ। খুলনায় অবস্থান নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল তখন তুঙ্গে, একমাত্র খুলনা শহর শত্রুমুক্ত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য এখন। খুলনা তখন বিভিন্ন স্থান থেকে সরে আসা পাকিস্তানি সৈনিকদের একটি মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে। শিরোমণিতে ১০৭ ব্রিগেড তো এসে গেছেই, এছাড়াও যেসব জায়গায় এসব পাকিস্তানি সৈনিকরা অবস্থান নেয় সেগুলো হলো - গল্লামারী রেডিও স্তেশন, খুলনা লায়ন্স স্কুল, পিএমজি কলোনী, শিপইয়ার্ড, সাত নম্বর জেটি, টুটপাড়া, নিউফায়ার ব্রিগেড স্টেশন, ওয়াপদা ভবন, গোয়ালপাড়া এবং গোয়ালখালি ।
এই অবস্থায় খুলনা শহর দখলের জন্য অগ্রসর হওয়ার জন্য মেজর জয়নাল আবেদিন খানকে নির্দেশ দেন মেজর মঞ্জুর । জয়নাল আবেদিন তখন মুজাহিদ ক্যাপ্টেন শাজাহানের অধীনস্থ ২০০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল নিয়ে খুলনায় প্রবেশ করেছেন। তাদের সাথে যোগ দেন কপিলমুনি রাজাকার ক্যাম্পের পতন ঘটয়ে আসা মুজিব বাহিনীর একটি শক্তিশালী দল। তারা একত্রিত হয়ে একটি লঞ্চে করে বটিয়াঘাটা পার হয়ে জলমা চক্রাখালি হাইস্কুল ভবনে ক্যাম্প বানিয়ে অবস্থান গ্রহণ করেন। এর মাঝেই, দশ ডিসেম্বর সকালে লঞ্চে বসেই খুলনা আক্রমণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা স্থির করা হয়। মেজর জয়নাল আবেদিনের সাথে এসময় পরিকল্পনা প্রণয়নে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা রহমত উল্লাহ দাদু, শেখ কামরুজ্জামান টুকু, মির্জা খায়বার হোসেন, লেফটেন্যান্ট আরেফিন, ইউনুস আলি ইনু, সাহিদুর রহমান টুকু, স ম বাবর আলী সহ আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ।
১৪ তারিখ মংলা থেকে এসে তাদের সাথে যোগ দিলেন খিজির আলি। দুর্ধর্ষ এই নৌযোদ্ধা ডিসেম্বরের ৮/৯ তারিখে পশুর নদীর পশ্চিম তীরে পাকিস্তানিদের একটি ক্যাম্প দখল করে দু'টি সিক্স পাউন্ডার গান ও একটি মেশিন গান দখল করেন। সিক্স পাউন্ডার গান দু'টির ফায়ারিং পিন ছিল না, খিজির আলী নিজস্ব টোটকা উপায়ে ছেনি ও মুগুর ব্যবহার করে অভিনব কায়দায় এগুলোকে ব্যবহারযোগ্য করে তোলেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন বাংকারে অতর্কিত গ্রেনেড হামলা চালিয়ে পাকসেনাদের হত্যা করে প্রায় ৫০ ক্যান গুলি উদ্ধার করেন। একটি বিকে টাইপ ওপেন বার্জ দখল করে তাতে এই গোলাবারুদ সংযুক্ত করেন খিজির। এর সাথে যুক্ত করা হয় দু'টি স্টিলবডি লঞ্চ - হেমাটাইট ও আলেক্সান্ডার। অনুসরণ করার জন্য দু'টি কাঠের লঞ্চ সংগ্রহ করে তাতে দলের সদস্যদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়, এদের নাম ছিল এম এল আকবর ও এম এল ভাটপাড়া। সব মিলিয়ে ছোট অথচ শক্তিশালী একটি নৌবহর গড়ে তোলেন খিজির। অতঃপর ১৪ ডিসেম্বর খুলনা দখলের চূড়ান্ত যুদ্ধে যোগ দেন তিন।
এই পরিকল্পনাতেই মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের শত্রুর বিভিন্ন অবস্থানে আক্রমণ শানানোর দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়। পরিকল্পনা অনুসারে,
১) ফোহাম উদ্দিন ও নোমান উল্লাহ তাদের বাহিনী নিয়ে সেনের বাজার, রাজাপুর ও রূপসা ঘাটের দিক থেকে খুলনা শহর আক্রমণ করবেন। শিপইয়ার্ড, শিপইয়ার্ড হাসপাতাল ও গোয়ালপাড়া এলাকা থেকে যেন পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণ পরিচালনা করতে না পারে সে ব্যাপারেও তারা ব্যবস্থা নেবেন;
২) বোরহান উদ্দিন তার বাহিনী নিয়ে চন্দনীমহল থেকে আক্রমণ করবেন ক্রিসেন্ট জুট মিল, তীতুমীর নৌঘাঁটি ও গোয়ালপাড়া পাওয়ার স্টেশনে;
৩) কুলটিয়াতে অবস্থান নিয়ে রেডিও স্টেশনে আক্রমণ করবেন ক্যাপ্টেন শাহজাহান ও তার বাহিনী;
৪) ঝাড়ডাঙ্গা ও সাচিবুনিয়ার দিক থেকে লায়ন্স স্কুলে আক্রমণের ভার পড়ে আফজাল হোসেন ও কুতুব উদ্দিনের উপর। গল্লামারীর রাস্তা যাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা ব্যবহার না করতে পারে সেই ব্যবস্থাও তারা গ্রহণ করবেন;
৫) মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি দলের দায়িত্ব থাকবে ভৈরব নদী পার হয়ে মংলার দিকে অগ্রসর হওয়া থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাধা দেয়া;
৬) লেফটেন্যান্ট আরেফিন ও কমান্ডার খিজির আলী একটি গানবোট দিয়ে নদী পথে বিভিন্ন স্থানে শত্রুর অবস্থানের উপরে আক্রমণ চালাবে, স্থলে নিয়োজিত মুক্তিবাহিনীকে প্রয়োজনীয় কভার দেবে;
৭) মেজর জয়নাল আবেদিনের নেতৃত্বে ২০০ মুক্তিযোদ্ধার একটি দল সরাসরি খুলনা শহরে উঠে গিয়ে শহর দখল করবেন। জয়নাল আবেদিনের সহকারী হিসেবে দায়িত্বে থাকলেন স ম বাবর আলী ও রহমত উল্লাহ দাদু।
ঘড়ির কাটায় তখন ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ শুরু হয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে আসছেন খুলনার দিকে, চারদিক থেকে চালানো হবে সাড়াশি আক্রমণ। রাত বারোটা নাগাদ যার যার অবস্থানে পৌঁছে আক্রমণ শুরু করল মুক্তিবাহিনীর গ্রুপগুলো। শুরু হয়ে গেল খুলনা দখলের লড়াই।
৮.
ফুলতলাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি অংশ যে অবস্থানটি নিয়েছিল, সেটা ছিল মূলত একটি ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা। ভারতীয় সেনাবাহিনীকে কিছু সময় আটকে রেখে শিরোমণিতে সরে যাওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়। দলবির সিং এই ধোঁকায় বিশ্বাস করেছিলেন কি না সেটা নিশ্চিত করে বলার কোন উপায় নেই, কিন্তু ফুলতলার অবস্থানটিকে দুর্বল না করে সামনে এগিয়ে যাওয়ারও কোন উপায় ছিল না। অতঃপর ফুলতলার উপরে জোরালো হামলা শুরু করেন দলবির সিং। এর সাথে যোগ দেয় ভারতীয় বিমান বাহিনী। এইখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীও বেশ রণকুশলতার পরিচয় দেয়। ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনীর আক্রমণ বেশ সাফল্যের সাথেই মোকাবেলা করে তারা। উভয় পক্ষেই প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী ফুলতলা থেকে দৌলতপুরে শিরোমণির দিকে সরে আসে। ফুলতলার যুদ্ধ ১২ তারিখ পর্যন্ত স্থায়ী হয়, এইদিন মধ্যরাতে ফুলতলা থেকে শিরোমণিতে সরে আসে হায়াত খানের বাহিনী।
১৩ ডিসেম্বর ফুলতলা এলেন মেজর মঞ্জুর, সাথে ভারতীয় রাজপুত ডিভিশনের এক বিশাল বহর। তার সাথে মুক্তিযোদ্ধা আলকাস, কুদ্দুস, রেজোয়ান ও গণি এলেন গাইড হিসেবে। ফুলতলার চৌদ্দমাইল এলাকায় অবস্থানরত শিখ বাহিনীর সাথে মিলিত হন মঞ্জুর। এবার চূড়ান্ত আক্রমণের পালা। এই উদ্দেশ্যে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর একটি অংশ ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও ট্যাঙ্ক নিয়ে ভৈরব নদী পার হয়ে অপর পারে অবস্থান নেয় যাতে পাকিস্তানি সৈনিকেরা নদী পেরিয়ে পালাতে না পারে। বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে জরো হওয়া মুক্তিযোদ্ধারা ব্যারাকপুর, লাকোহাটি, সিদ্ধিরপাশা, ধূলগ্রামে অবস্থান নেয় একই উদ্দেশ্যে - শত্রুকে পালাতে দেয়া যাবে না। খুলনা-দৌলতপুরের পশ্চিমের এলাকাগুলোতেও বিপুল সৈন্য সমাবেশ ঘটায় মুক্তিবাহিনী।
১৩ তারিখে একটি দুঃখজনক দুর্ঘটনা ঘটে যায়। মেজর গণি ও মেজর মহেন্দ্র সিং এর নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর একটি বিরাট দল শিরোমণিতে ঢুকে পড়ে; তাদের ধারণা ছিল পাক বাহিনী দৌলতপুর থেকে সরে খুলনা শহরে চলে গেছে। জীবন দিয়ে তাদের এই ভুলের মাশুল দিতে হয়। তারা শিরোমণিতে ঢোকা মাত্রই পাকিস্তানি ট্যাঙ্কগুলো গোলাবর্ষণ শুরু করে দেয়। এই অবস্থায় প্রায় কিছুই করার ছিল না তাদের, প্রায় তিনশত ভারতীয় সৈনিক এসময় নিহত হয়। এই বিপুল ক্ষতি মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাদলকে জয়ের ব্যাপারে আরো উদগ্র করে তোলে ।
এদিন দৌলতপুর-শিরোমণি এলাকায় ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ইস্টার্ন জুট মিল এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে হাতাহাতি ও বেয়নেট যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ভারতীয় সৈন্যরা, শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সৈন্যরা পরাজিত হয়ে বন্দী হয়। শিরোমণিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চারটি ট্যাংক প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ শুরু করলেও ভারতীয় বিমান বাহিনীর আক্রমণে সেগুলো বিদ্ধস্ত হয়। শিরোমণি রেলস্টেশনের কাছে একটি পাকিস্তানি ট্রাক প্রচুর গোলাবারুদ নিয়ে এগিয়ে আসছিল, সেটিকে বিমান থেকে বোমা ফেলে ধ্বংস করা হয়। রেল স্টেশনের কাছেই পোস্ট অফিসে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোলাবারুদের একটি গুদাম। প্রচণ্ড বিমান আক্রমণে সেটি গুড়িয়ে যায়। পাক বাহিনীর অস্থায়ী যোগাযোগ দফতর চেয়ারম্যানে নুরুল হুদার বাড়িটি বিমান আক্রমণে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়। পাকিস্তান বিমান বাহিনী আগেই ভেঙ্গে পড়ায় ভারতের বিমান আক্রমণের বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তবে মুসলিম লীগ নেতা মুনসুর সাহেবের জুট প্রেসে শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসা রাজাকারেরা এসময় গুলি করে বিমান ভূপতিত করার চেষ্টা করে। প্রায় সাথে সাথেই পালটা বিমান আক্রমণে এই ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়ে যায় ভারতীয় বিমান বাহিনী।
যুদ্ধের নির্মম কিন্তু অনিবার্য শিকার কোলাটেরাল ড্যামেজ হিসেবে ট্যাঙ্ক ও বিমান হামলায় প্রাণ হারান এলাকার কিছু সাধারণ মানুষ, ক্ষতিগ্রস্থ হয় কল কারখানা। আহতও হয় অনেকে।
১৪ ডিসেম্বর সারাদিনও প্রচণ্ড যুদ্ধ চলে। তবে এই সময় থেকে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে পাকিস্তানিদের ডিফেন্স লাইন। এর বড় কারণ ক্রমাগত যুদ্ধে গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাওয়া। টানা যুদ্ধ করতে গিয়ে খাবারেও টান পড়েছে। খাদ্য ও গোলাবারুদ সরবরাহের সবকটি লাইন অকেজো করে দেয়া হয়েছে ততক্ষণে। ট্রাক বা গাড়িতে এসব দ্রব্য পৌঁছাবার চেষ্টা করলেও সেগুলো ধ্বংস করা করে দেয়া হচ্ছে। কাজেই শিরোমণিতে অবস্থান নেয়া পাকিস্তান সেনাবাহিনী তখন সব দিক দিয়েই কোণঠাসা। ১৫ তারিখে যুদ্ধের তীব্রতা কমে আসে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাধ্য হয় যুদ্ধবিরতিতে যেতে। শিরোমণির ঐতিহাসিক যুদ্ধের প্রথম পর্বও সেই সাথে শেষ হলো।
৫.
এদিকে ঢাকায় ততক্ষণে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু খুলনায় তখনও হাল ছাড়তে নারাজ বিভিন্ন জায়গা থেকে পিছু হটে আসা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দলগুলো। বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে প্রচণ্ড যুদ্ধ। ঢাকায় জেনারেল অরোরার মুখে চিন্তার ভাঁজ, খুলনায় উদ্বিগ্ন দলবির সিং। ব্যাপারটা এখন শুধু একটি এলাকা দখলেই সীমিত নেই, পরিণত হয়েছে ইগোর লড়াইতে। মুক্তিবাহিনীর গ্রুপগুলো তাদের নির্ধারিত অবস্থানে গিয়ে আক্রমণ শুরু করেছে। মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধাদের সাথে যোগ দিয়েছে এলাকাবাসীও।
রাত একটা নাগাদ নিজস্ব নৌবহর ও বাহিনী নিয়ে খিজির আলী পৌঁছলেন মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুরের বাড়ির পেছনে। নদীপথে খিজির আলী এগিয়ে যাবেন তার নৌবহর নিয়ে, আর স্থল্পপথেও সমান্তরালে এগোবেন মেজর জয়নাল আবেদিনের বাহিনী। পরিকল্পনা মেনেই এগিয়ে যেতে থাকেন তারা। খান এ সবুরের বাগান বাড়িতে গোলাবর্ষণ করতে করতে খিজির আলি এগিয়ে এলেন শিপইয়ার্ডের দিকে। শেষ রাতের দিকে শিরোমনি থেকে মেজর মঞ্জুরের কাছ থেকে ওয়ারলেসে নির্দেশ পান জয়নাল আবেদিন ও খিজির। এরপরে শুরু হয় সমন্বিত আক্রমণ।
শিপইয়ার্ড এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি অংশ ট্যাঙ্ক নিয়ে প্রস্তুত ছিল, মুক্তিবাহিনী এসে পৌঁছতেই তারা গোলাবর্ষণ শুরু করে। খিজির আলীর বাহিনীও সমানে জবাব দেয়। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর, খিজির বাহিনীর সিক্স পাউন্ডার গানের সামনে টেকা মুশকিল হয়ে ওঠে পাকিস্তানি সৈনিকদের জন্য। ট্যাঙ্ক ফেলেই পালিয়ে যায় তারা। শিপইয়ার্ড থেকে কিছু সামনে দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির কাছেও কিছু ট্যাঙ্ক মোতায়েন ছিল, একই ভাবে তারাও ট্যাঙ্ক ফেলে পিছু হটে যায়। এর আগে পাকিস্তানি সৈন্যরা বোট ও ফ্লাট ব্যবহার করে রূপসা নদীতে এগিয়ে যাবার পথ বন্ধ করে রেখেছিল। খিজির আলী সেই বাধা সরিয়ে অগ্রসর হতে থাকেন। নদীর তীরে পাকবাহিনীর যেসব বাংকার ছিল সেগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে আসেন খিজির আলী। জেলা প্রশাসকের বাসভবনের কাছাকাছি এসে শত্রুর গুলিতে নিহত হন খিজির বাহিনীর গানারের হেলপার ইব্রাহিম। আহত হন আরো দু'জন। তবে এই বিপর্যয় সত্ত্বেও তাদের গতিতে ছেদ পড়েনি। বীর দর্পেই খিজির তার গানবোট নিয়ে লঞ্চ টার্মিনালের এসে থামেন, বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করেন খুলনায়। খুলনা শহর দখলের এক পর্ব সমাপ্ত হলো ।
ওদিকে জয়নাল আবেদিনের নেতৃত্বে রহমত উল্লাহ দাদু ও স ম বাবর আলী তাদের বাহিনী নিয়ে জলমা চক্রাখালি স্কুল ছেড়ে এগিয়ে আসছে গল্লামারীর দিকে। পথে প্রচন্ড যুদ্ধে দু'জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। ভোর ছটা নাগাদ গল্লামারী পৌঁছে যায় এই দলটি। এই সময় অল্পের জন্য জয়নাল আবেদিন মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যান, বদলে তার হেলমেটটি উড়িয়ে নিয়ে যায় একটি বুলেট। আরো সতর্ক ভাবে এগিয়ে এসে বাগমারায় পৌঁছে যান তারা, পথে আত্মসমর্পণ করে বহু পাকিস্তানি সৈনিক। এসময় এইসব সৈনিকের চোখে মুখে হতাশার ছাপ ছিল স্পষ্ট। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, নিশ্চিত পরাজয় জেনে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্যই তারা আত্মসমর্পণ করেছে।
এদিকে সেই ভোরে জয়নাল আবেদিনের বাহিনীর গোলাবারুদ ফুরিয়ে আসছে। শেষ মুহূর্তে এসে বিপর্যয় আশঙ্কা করে হিসেব কষে গুলি খরচ করা শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধারা। তবে এর পরে আর বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি তাদের, অচিরেই তারা হাদিস পার্ক এলাকায় পৌঁছে গেলেন। ১৭ ডিসেম্বর সকাল ৯ টায় হাদিস পার্কে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন বাবর আলী, তার সাথে যুদ্ধজয়ী শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা।
খুলনা শহর ধরতে গেলে তখন পুরোপুরি শত্রুমুক্ত, শুধু শিরোমণিতে চলছে মরণপণ লড়াই।
৬.
১৫ তারিখ যুদ্ধবিরতির পর আশা করা হয়েছিল, পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর যুদ্ধ চালাবে না। তবে এই আশাকে ভুল প্রমাণ করে ১৬ ডিসেম্বর রাত ৯ টায় আবার কেঁপে উঠলো শিরোমণি রনাঙ্গন। এসময় হঠাৎ করেই তীব্র আক্রমণ চালায় হায়াত খানের বাহিনী। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীও পালটা জবাব দিতে শুরু করে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। দুই পক্ষই সমানে গোলাবর্ষণ করছে, দুই পক্ষেই ক্যাজুয়ালিটি হয়ে চলেছে প্রচুর। রাত তিনটার দিকে হঠাৎ আক্রমণ আরো জোরালো করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, হঠাৎ করে একসাথে বেশ কয়েকজন আঘাতের শিকার হন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন অফিসার সহ ৭ জন্য নিহত ও প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। মুক্তিবাহিনীর ক্ষতি হয়েছে আরো বেশী - নিহত ৩১ জন, আহত প্রায় চার গুন। রাত ৩ টা ১০ মিনিটে মেজর মঞ্জুর এয়ার কভারেজ চেয়ে মেসেজ পাঠালেন মিত্র বাহিনীর হেডকোয়ার্টারে। জানানো হলো, বিমান প্রস্তুত হয়ে আছে দমদম এয়ারপোর্টে, দূরত্ব হিসেব করে বোঝা গেল অন্তত রাতের মাঝে বিমান সাহায্য আসা সম্ভাবনা কম।
প্রচণ্ড বিপর্যয়ের এই মুহূর্তে মেজর হুদাকে সাথে নিয়ে যশোর ক্যান্টনমেন্টে ছুটলেন মেজর মঞ্জুর। সেখানে প্রায় দশ মিনিট ধরে ভারতীয় কমান্ডারের সাথে আলোচনা হয় তাদের। মঞ্জুরের দাবী ছিল, যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে সম্মিলিত বাহিনীর দায়িত্ব তার হাতে ছেড়ে দেয়া হোক। এয়ার কভারেজ ছাড়া এই মুহূর্তে পাকিস্তানি ট্যাঙ্কের সামনে মার খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। কাজেই স্ট্র্যাটেজিতে পরিবর্তন প্রয়োজন। দ্বিধান্বিত ভারতীয় কমান্ডার ইতিস্তত করতে থাকলে মেজর মঞ্জুর তার কোমরের বেল্ট খুলে টেবিলে রাখেন, এর অর্থ জয়ী না হয়ে আর ফিরবেন না তিনি। ভারতীয় কমান্ডার ওয়ারলেসে দলবির সিংয়ের সাথে আলোচনা করে শেষ পর্যন্ত সম্মিলিত বাহিনীর দায়িত্ব তুলে দিলেন মেজর মঞ্জুরের হাতে। বেরিয়ে যাবার আগে তাকে আলিঙ্গন করে শুভকামনা জানাতেও ভুললেন না।যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে আসার আগে নিশ্চিত মৃত্যু ধারণা করে এক সৈনিকের কাছে একটি চিঠি রেখে যান মঞ্জুর। এক বাক্যের এই চিঠিতে তিনি শেষ বিদায় নিয়ে নেন তার স্ত্রীর কাছ থেকে।
এবার শুরু হলো চূড়ান্ত যুদ্ধ। পরিকল্পনার নতুন ছকে শিরোমণির ডানে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের কলামটিকে পেছনে সেকেন্ড ডিফেন্স এনে মেজর হুদাকে এর দায়িত্ব দেন মঞ্জুর। ফ্রন্ট লাইনের সম্মিলিত বাহিনীকে শিরোমণির ডানে ডিফেন্সে পাঠিয়ে দেন, বাম দিকের ও পেছনের তিনটি কলামকে ফ্রন্ট লাইনের ডিফেন্সে নিয়ে আসেন। ডানে ও পেছনে সেই ফাঁকা স্থান পূরণ করে সম্মিলিত বাহিনী। প্রধান সড়কের নিচে লুকিয়ে থাকা মিত্র বাহিনীর ট্যাঙ্কগুলোড় দু'টিকে সংকেত অনুযায়ী শিরোমণি-খুলনার প্রধান সড়কে ও ছ'টিকে ডানদিকের নিচু বেতে গাছের সারির পাশ দিয়ে পাক ডিফেন্সের পেছনে দ্রুত গতিতে পৌঁছে যাবার জন্য প্রস্তুত করেন, প্রচুর ক্যাজুয়ালিটির আশঙ্কা সত্ত্বেও। প্রতিটি ট্যাঙ্কের পেছনে থাকলেন ১২ জন করে সুইসাইড কমান্ডো। এর মাঝেই দ'জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হলেন, আহত হলেন আরো একজন। ভারতীয় বাহিনীরও একজন আহত হলেন।
ভোর পাঁচটার সামান্য আগে শিরোমণিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে আঘাত হানলেন মেজর মঞ্জুর। পঁচিশটিরও বেশী ট্যাঙ্ক, দেড় শতাধিক কামান, কয়েক শত মর্টার নিয়ে সবার আগে এসএসআর হাতে গুলি ছুড়তে ছুড়তে শত্রুব্যূহে ঢুকে গেলেন মঞ্জুর। পূর্বের নির্দেশ অনুসারে দু'টি টি-১৬০ ট্যাঙ্ক শিরোমণির প্রধান সড়ক দিয়ে এবং পাঁচটি একই ট্যাঙ্ক ডান দিক থেকে এগিয়ে গেল দ্রুত গতিতে। এরপরেও সব ঝাঁপসা, শিরোমণির সেই দুর্ভেদ্য পাকিস্তানি দুর্গে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর এই সম্মিলিত দলটির কী পরিণতি হলো, তা বোঝার কোন উপায় নেই তখন আর।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পারলেন মেজর হুদা। তার অধীনস্ত সেকেন্ড লাইনকে দ্রুত ফ্রন্টলাইন প্রতিরক্ষার দায়িত্ব বসিয়ে দিলেন। ডান দিক থেকে ছুটে আসছে মিত্রবাহিনীর ট্যাঙ্ক। প্রায় তিন মাইল এলাকা জুড়ে দুই পক্ষের কামান ও ট্যাঙ্কের গোলাবর্ষণের চিহ্ন ছড়িয়ে পড়লো। আশে পাশের ঘরবাড়ি, গাছপালা গুঁড়িয়ে যাচ্ছে; প্রবল গোলাবর্ষণের আলোতে আকাশ হয়ে উঠেছে ফর্সা। এর মাঝেই মেজর মঞ্জুর তার বাহিনী নিয়ে লড়ছেন। লড়াই চলছে ট্যাঙ্কের সাথে ট্যাঙ্কের, সেই সাথে হাতাহাতি। মুহুর্মুহু সেই আক্রমণের মুখে পিছু হটতে শুরু করে পাকিস্তানি সৈনিকরা। কেউ একজন চিৎকার করে জানিয়ে দেয় - খানেরা পালিয়ে যাচ্ছে। এর পর আর মুক্তিবাহিনী পেছনে তাকায় নি। দ্বিগুন উৎসাহে এগিয়ে গিয়ে গুঁড়িয়ে দিতে থাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুর্গ। ভোর পৌনে ছটা নাগাদ চলে এলো ভারতীয় বিমান বহর। প্রচণ্ড গোলাবর্ষণে শেষ হয়ে গেল ব্রিগেডিয়ার মালিক হায়াত খানের শেষ প্রতিরোধ। ১৫৭ টি মৃতদেহ ও প্রচুর আহত সৈনিক পেছনে রেখে পাঁচ শতাধিক সৈন্য সহ হায়াত খান আত্মসমর্পণ করে মেজর মঞ্জুরের কাছে।
শিরোমণির এই যুদ্ধ নিয়ে উভয় পক্ষেই প্রচুর গল্প চালু আছে। শোনা যায়, মেজর মঞ্জুর দুই হাতে এসএলআর নিয়ে গুলি করতে করতে চলন্ত একটি ট্যাঙ্কের মাঝে ঢুকে গিয়ে সেটা দখল করেন। তবে এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ মেলেনি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ওয়ার করেসপন্ডেন্ট মুসা সাদিক সেই যুদ্ধের একজন প্রত্যক্ষ্যদর্শী ছিলেন। তিনি যে বিবরণ দিয়েছেন তাতেও এরকম কোন ঘটনার উল্লেখ মেলে না। তবে সেই যুদ্ধের আর এক প্রত্যক্ষ্যদর্শী ইউপিআই এর ফটোগ্রাফার ডেভিড কেনারলি যে প্রতিবেদন লিখেছেন তাতে কাছাকাছি অন্য একটি ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় । ভারতীয় এক সৈনিকের জবানিতে কেনারলি জানান - একজন সৈনিক একটি বাংকারে উঠে যান, বাংকারে থাকা পাকিস্তানি এক সৈনিকের হাত থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বাংকার গুঁড়িয়ে দেন। এখন এই ঘটনাটিই মুখে মুখে পরিবর্তিত হতে হতে ট্যাঙ্ক দখলের গল্পে পরিণত হলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, এই গল্পের নায়ক মেজর মঞ্জুর হওয়ার সম্ভাবনাও বাদ দেয়া যায় না। তবে সেটা নিশ্চিত কিছু নয়, সত্য জানার জন্য অন্য কোন প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ জানার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
৭.এর সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায় শিরোমণির ট্যাঙ্ক যুদ্ধ, একই সাথে সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয় খুলনা। বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পুরোপুরি পরাজিত হলো। এর পর গোটা বাহিনীকে সার্কিট হাউজে নিয়ে আসা হয়, সেখানেই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হবে। যদিও ঢাকায় আত্মসমর্পণের পরেও যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য এই বাহিনীর প্রত্যেকের জন্য মৃত্যুদণ্ডই ছিল প্রাপ্য। কিন্তু যেহেতু ইতোমধ্যেই বিপুল সংখ্যক হতাহত হয়েছে এবং পাঁচশতাধিক সৈনিককে হত্যা করা হলে আন্তর্জাতিক জটিলতাও বাড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়, তাই তাদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়া হয়। সার্কিট হাউজে লজ্জাজনক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে চূর্ণ হয় মালিক হায়াত খানের দর্প, সমাপ্তি ঘটে মুক্তিযুদ্ধের শেষ অধ্যায়টিরও।
.
তথ্যসূত্র :
১) স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় - মেজর জেনারেল সুখওয়ান্ত সিং (মাসুদুল হক অনূদিত)
২) স্বাধীনতার দুর্জয় অভিযান - স ম বাবর আলী
৩) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খুলনা জেলা - শেখ মোঃ গাউস মিয়া
৪) মুক্তিযুদ্ধ হৃদয়ে মম - মুসা সাদিক
৫) The Battle of Khulna - Brig (Retd) Muhammad Hayat Khan
.
#সূত্র_প্রীতম
#Photo: BN SWAD

Wednesday, December 4, 2019

প্রখ্যাত সুফি সাধক হযরত কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী


কুতুবুল আকতাব হযরত খাজা সৈয়দ মুহাম্মদ কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী ছিলেন একজন মুসলিম সুফি সাধক। তিনি চিশতিয়া তরিকার সাধক ছিলেন। তিনি খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির শিষ্য এবং খলিফা ছিলেন। তার নামেই দিল্লীর বিখ্যাত কুতুব মিনার উৎসর্গ করা হয়। শিষ্যত্ব গ্রহণ করার আগেই চিশতিয়া তরিকা শুধুমাত্র আজমির এবং নাগাউর এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। দিল্লিতে স্থায়ীভাবে এই তরিকাকে প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। তাঁর দরগাহ (সমাধি) মেহরাউলের জাফর মহলের পাশেই অবস্থিত এবং পুরানো দরগাহ দিল্লিতে অবস্থিত, যেখানে তাঁর ওরশ পালিত হয়। ভারতের অনেক বিখ্যাত শাসক তাঁর ওরশ মহাসমারোহে উদযাপন করতেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন কুতুবউদ্দিন আইবাক, ইলতুতমিশ যিনি কাকীর জন্য “ঘান্দাক কি বাউলি” নামে এক গভীর নলকূপ স্থাপন করেন, শের শাহ সুরি যিনি একটি বড় গেইট তৈরী করেন, বাহাদুর শাহ ১ যিনি দরগাহের পাশে মতি মসজিদ নির্মাণ করেন, ফারুকশিয়ার যিনি মার্বেলের স্ক্রিন এবং মসজিদ নির্মাণ করেন। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত শিষ্য এবং খলিফা হলেন ফরিদউদ্দিন গঞ্জেশকার যিনি আবার দিল্লির বিখ্যাত সাধক নিজামউদ্দিন আউলিয়ার পীর (সূফি গুরু)। নিজামউদ্দির আউলিয়ার শিষ্য হলেন মুসলিম সুফি সাধক কবি আমির খসরু এবং নাসিরুদ্দিন চিরাগ-ই-দিল্লি এর পীর।
প্রাথমিক জীবন
কুতুব উদ্দিন বখতেয়ার কাকি ১১৭৩ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ কিরগিন্তানের উশ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। ষোলতম শতাব্দিতে মোগল সম্রাট আকবরের উজির আবুল ফজল ইবনে মোবারক রচিত কুতুবউদ্দিনের জীবনী ‘‘আইন-ই- আকবর” তে উল্লেথ করা হয়, তাঁর পিতার নাম কামালুদ্দিন, কুতুবউদ্দিনের দেড় বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। খাজা কুতুবউদ্দিন এর আসল নাম বখতিয়ার এবং পরবর্তে কুতুবউদ্দিন নামটা দেয়া হয়। তিনি হোসাইন ইবনে আলী মাধ্যমে হয়ে হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর বংশের সাথে মিলিত হয়েছেন। তার মা, যিনি নিজেই একজন শিক্ষিত মহিলা ছিলেন, তাঁর শিক্ষার জন্য শাইখ আবু হিফসকে নিয়োগ দেন। মঈনুদ্দিন চিশতি তার ভ্রমণের সময় যখন আউশ দিয়ে যাচ্ছিলেন,খাজা বখতিয়ার তাঁর হাতে বায়াত দান করেন এবং তাঁর থেকে খেলাফত গ্রহণ করেন। এভাবেই তিনি মঈনুদ্দিন চিশতির প্রথম খলিফা হিসেবে নিযুক্ত হন।
দিল্লি গমন
দিল্লী সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা ইতুতমিশের (১২১১-১২৩৬) এর অবসরের সময় নিজ পীরের, মঈনুদ্দিন চিশতি, একান্ত ইচ্ছায় খাজা বখতিয়ার দিল্লিতে চলে যান এবং সেখানেই বসবাস করতে থাকেন। বখতিয়ারের আধ্যাত্বিক ক্ষমতা ও দক্ষতা এবং মানবতার অপার মহিমা অবলোকন করে প্রচুর মানুষ প্রায় তাঁর সাক্ষাত লাভে প্রতিদিনি আসা যাওয়া করতেন। তিনি এই আধ্যাত্বিক পথে সাধারণ মানুষকে বায়াত দানও শুরু করে দিয়েছিলেন।
উদারতা ও মানবতা
ফলাফলের বা প্রতিদানের আশা না করে অভাবগ্রস্থদের সাহায্য করার মতাদর্শের বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। তাঁর বিশিষ্ট শিষ্য, ফরিদউদ্দিন গঞ্জেশকার , তাঁকে কবচের (তাবিজ) বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করেন যেগুলো ছিল বির্তকিত কেননা এগুলো ইসলামে মূর্তিপূজার মত ধর্মীয় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এর উত্তরে কাকি বলেন, ইচ্ছা বা বাসনার পরিপূর্ণতা হওয়া কোন কিছুর উপর নির্ভর করে না, কবচ বা তাবিজে আল্লাহর নাম এবং তাঁর কথা বা আয়াত রয়েছে এবং এগুলো মানুষকে দেয়া যাবে। সেমায় নিমগ্ন হয়ে তিনি চিশতিয়া তরিকার আধ্যাত্বিক সঙ্গীতের ঐতিহ্যকে বজায় রাখেন এবং আরো সমৃদ্ধ করেন। ধারণা করা হয় যে হিন্দু ধর্মে ভক্তি নিবেদনের সঙ্গীতের সাথে সুরের সমন্বয় করা হয়, যাতে স্থানীয় মানুষদের সাথে সর্ম্পক স্থাপনের সহায়ক হিসেবে কাজ করে এবং দুই সম্প্রদায়ের মাঝে পারষ্পরিক সমন্বয় সহজ হয়।
যেভাবে ওফাত লাভ করেন
১৪ রবিউল আউয়াল ৬৩৩ হিজরীতে (২৭ নভেম্বর ১২৩৫ খ্রিস্টাব্দ) তিনি একটি সেমা মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন যেখানে কবি আহমদ-এ-জাম নিম্নোক্ত পংক্তিটি গেয়ে শুনান:
"যারা আত্মসর্ম্পণের খঞ্জরে নিহত হয়েছে,
অদৃশ্য থেকে তাঁরা প্রতিনিয়ত নব জীবন প্রাপ্ত হয়।"
খাজা বখতিয়ার কাকি এই আধ্যাত্বিক পঙক্তি দ্বারা এতটাই পরমা্নন্দ লাভ করলেন যে তিনি ততক্ষণাৎ মূর্ছা গেলেন। ঐ আধ্যাত্বিক পরমানন্দের মাঝেই চারদিন পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর দরগাহ, (মাজার), দিল্লির মেহরুলে অবস্থিত কুতুব মিনার কমপ্লেক্সের নিকটে জাফর মহলের পাশে অবস্থিত। তাঁর জোর নির্দেশ ছিল, মৃত্যুর পর তাঁর নামাজে জানাজার নেতৃত্ব সে ব্যক্তিই দিবেন, যিনি কখনও কোন হারাম কাজ করেননি এবং আসরের সালাত এর সুন্নত কখনও ছাড়েননি।
উপাধির ঘটনা ও প্রাপ্ত উপাধি
কাকি নামটি দিল্লীর দিল্লির একটি ঘটনার পর তাঁর উপাধি হিসেবে যুক্ত হয়। ঘটনাসুরে, তিনি তাদের চরম দরিদ্রতা, দারিদ্র সত্ত্বেও স্থানীয় রুটিওয়ালা থেকে ঋণ না নিতে তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিষেদ করেন। পরবর্ তিনি স্ত্রীকে বলেন, যখনই প্রয়োজন হবে তখন ঘরের এক কোণা থেকে যেন কাক (এক ধরনের রুটি) নেন। এরপর, যখনই প্রয়োজন হত আশ্চর্জনকভাবে তারঁ স্ত্রী ঘরের কোণা থেকে কাক পেয়ে যেত। ইতিমধ্যে রুটিওয়ালা এটা ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল যে, কেন খাজা ঋণ নেয়া বন্ধ করে দিল। তিনি চিন্তা করলেন হয়ত তিনি প্রায়শ খাজার সাথে রাগারাগি করতেন, সেজন্য খাজা ঋণ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে, রুটিওয়ালার স্ত্রী কুতুবউদ্দিনের স্ত্রীর কাছ থেকে এর কারণ জানতে চাইলেন। তিনি তাকে কাক এর আশ্চর্ জনক ঘটনাটি বর্ণা করলেন। এই গোপন রহস্যটি উন্মোচিত হওয়ার পর যদিও কাক আসা বন্ধ হয়ে যায়, ঐ দিন থেকে মানুষ কুতুবউদ্দিকে কাকি নামে সম্বোধিত করতে থাকে।
কুতুব-উল-আকতাব
মালিক- উল - মাশায়খ
রাইস-উস-সালেকীন
সিরাজ-উল-আউলিয়া

Sunday, November 24, 2019

Image result for হেলিকপ্টার ও মোরগ

হেলিকপ্টার ও মোরগ

---------
একদিন আমাদের সাথে পাশের বাড়ির জ্যাঠিদের প্রচন্ড ঝগড়া হলো। তাই প্রথানুযায়ী দুই তিনদিন কেউ কারো বাড়িতে যাতায়াত করবে না। তাকাবে না। সামনে পরে গেলে শুধু মনে মনে গালি দিবে আর গোখরা সাপের মতো মুখে ফুসফুস করবে। এই ছিলো নিয়ম।
আরেকটা নিয়ম ছিলো, কারোর ছাগল, গরু, হাঁস মুরগী যদি আরেকজনের বাড়িতে যাতায়াত করে তবে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।
সেদিন বিকালে উঠানে বসে আমি আর আমার ছোট বোন মুড়ি খাচ্ছিলাম। হঠাৎ শুনি ঘরের পেছনের দিকের টিনের বেড়ায় ধুম করে একটা শব্দ হলো। সাথেই একটা মুরগীর মৃত্যু চিৎকার। বুঝলাম ঘটনা ঘটে গেছে। হাতে একটা কঞ্চি নিয়ে বীর যোদ্ধার মতো দাদীকে ঘরের পেছন থেকে হেঁটে আসতে দেখে আরো শিউর হলাম যে শত্রুপক্ষের এক সৈনিক অলরেডি আহত হয়েছে। সুতরাং যুদ্ধের স্থায়িত্ব আরো কিছুদিন বেড়ে গেলো।
তারপর সন্ধ্যায় মুরগীর ঘরে উঠার সময় হলে জানা গেলো দাদী যে মুরগীকে শত্রুপক্ষের ভেবে আক্রমণ করেছিলেন, ওটা আসলে আমাদের মুরগী ছিলো। আমাদের একমাত্র লাল ঝুটিওয়ালা মোরগ। 😥
এবার শুরু হলো গৃহযুদ্ধ। আমার মা এবং আমার দাদীর মধ্যে। দর্শক হিসাবে পাশের বাড়ির জ্যাঠিকে দূর থেকে তাকিয়ে কয়েকবার মুখ টিপে হাসতে দেখা গেলো।
আজ বহুদিন পর মুরগী মারার এই ঘটনাটি মনে পরার একমাত্র কারণ হচ্ছে, একটু আগে নিউজে দেখলাম- "পাকিস্তানের ভেবে নিজেদের হেলিকপ্টার ধ্বংস করে ফেলেছে ভারত"।
বিরাট খবর। দর্শক হিসাবে এবার আমাদের কী করা উচিত? কাঁদবো নাকি পাশের বাড়ির জ্যাঠির মতো মুখ টিপে হাসবো বুঝতে পারছিনা।
দাদীর কথা মনে করে এই মুহূর্তে আমি নষ্টালজিক, আপনারা কিছু একটা করতে পারেন।

Saturday, November 9, 2019

ইমাম আলি (আঃ)

প্রশ্ন -
যদি ইমাম আলি (আঃ) ই আল্লাহ কতৃক মনোনীত ও রাসুল (সাঃ) ঘোষিত বৈধ খলীফা / ইমাম / উত্তরসূরী হয়ে থাকেন , তাহলে কেন নিজের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি মহানবী (সাঃ) এর ওফাতের পরে তাঁর স্থলে বসে থাকা খলীফাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেননি / অস্ত্রধারণ করেননি / যুদ্ধ ঘোষণা করেননি ?

জবাব -

নবীকরীম (সাঃ) এর উত্তরাধিকারী / ইমাম / খলীফা কেবলমাত্র ইসলামি সাম্রাজ্যের অধিপতি হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় । যদিও হযরত আবুবকর - ওমর ইসলামি সাম্রাজ্যের অধিপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তথাপিও ইমাম আলি (আঃ) তাঁর বৈধ খেলাফাত / ইমামাতের পদ থেকে বঞ্চিত ছিলেন না ।
কিন্ত এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে , কেন ইমাম আলি (আঃ) তদানীন্তন খলীফাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেননি ?
এই প্রশ্নের অনেকগুলি কারন আছে ।
তার মধ্য থেকে এখানে কতকগুলি দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ্‌ ।
কারন -
আমরা পবিত্র কোরআন থেকে পেতে পারি । যখন হযরত মুসা নবী (আঃ) ৪০ রাতের জন্য বনী ইসরায়েলদের থেকে দূরে চলে গিয়েছিলেন তখন তিনি নিজ ভাই হযরত হারুন (আঃ) কে তাঁর উত্তরাধিকারী নিয়োগ করে যান ।
কিন্ত মুসা (আঃ) এর বিদায় নেওয়ার সাথে সাথে জনগণ তাঁর আদেশ-উপদেশ ভুলে বসে এবং সত্যপথ হতে বিচ্যুত হয়ে পড়ে ।
যাইহোক , এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত মুসা (আঃ) ও তাঁর উত্তরাধিকারীর মধ্যকার কথোপকথন আমরা পবিত্র কোরআন হতে যা জানতে পারি -
" --- মূসা বললেন , হে হারুন , তুমি যখন তাদেরকে পথ ভ্রষ্ট হতে দেখলে , তখন তোমাকে কিসে নিবৃত্ত করল ? আমার পদাঙ্ক অনুসরণ করা থেকে ? তবে তুমি কি আমার আদেশ অমান্য করেছ ? তিনি বললেন , হে আমার জননী-তনয় , আমার শ্মশ্রু ও মাথার চুল ধরে আকর্ষণ কর না , আমি আশঙ্কা করলাম যে , তুমি বলবে , তুমি বনী-ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ এবং আমার কথা স্মরণে রাখনি --- ।"
সূরা - ত্বাহা , আয়াত ৯২-৯৪ ।
উপরোল্লিখিত আয়াতগুলি থেকে প্রতীয়মান হয় যে , হযরত হারুন (আঃ) কেন পথভ্রষ্ট , সত্যবিচ্যুত জনগণের বিরুদ্ধে সশস্ত্র কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি ।
কারন এটাই ছিল যে , যদি হযরত হারুন (আঃ) অস্ত্রধারণ করতেন তাহলে বনী ইসরায়েলের মধ্যে পারস্পরিক বিভেদ-দ্বন্দ্ব-অনৈক্য-হানাহানি ঘটত । আর এই প্রকাশ্য ফেতনার দরুণ সকলেই তাঁকে অভিযুক্ত করত ।
প্রসিদ্ধ হাদিস অনুযায়ী মহানবী মুহাম্মাাদ (সাঃ) এর নিকট হযরত আলী (আঃ) স্থান ঠিক ঐরূপ , যেরূপ মুসা (আঃ) এর নিকট তাঁর ভাই হারুনের (আঃ) স্থান ছিল , শুধুমাত্র ব্যতিক্রম এটাই যে রাসুল (সাঃ) এর পর আর কোন নবী রাসুল আসবে না । এখান থেকে অনুমান করতে অসুবিধা হয় না যে , কেন সশস্ত্র কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে ইমাম আলি (আঃ) সম্পূর্ন নীরব ছিলেন ?
কারন তিনি জানতেন যে , তিনি যদি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করতেন তাহলে দ্বীনে ইসলাম এবং নব্যগঠিত ইসলামি সাম্রাজ্য এক নিমেষেই ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়ে যেত ।
ঐযুগের বহিঃশত্রুরা ইসলামকে ক্ষতিসাধন করার জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনাতে লিপ্ত ছিল ।
এমতাবস্থায় , তরবারি উন্মোচনের অর্থ মুসলমানদের মধ্যে ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধে বেঁধে যাওয়া ।
সদ্য ইসলাম কবুল করা অনেকেও এই সুযোগে যুদ্ধে নিহত নিজ পরিজনের প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হত । সেক্ষেত্রে মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে বিভেদ , দ্বন্দ্ব , ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা প্রকাশ্যে ভয়ঙ্কর রূপ ধারন করত । ফলে মুসলমানেরা দূর্বল হয়ে পড়ত । আর এই দূর্বলতার সুযোগে ফাঁদ পেতে থাকা বিজাতীয় শত্রুরা খুব সহজেই ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে ধ্যুলিস্যাৎ করে দিত ।
ইতিহাস সাক্ষী , মহানবী (সাঃ) এর পরে সবচেয়ে বেশী যিনি ইসলামের খেদমত করেছেন তিনি হলেন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) ।
আলী (আঃ) এর তলোয়ারের নিকট ইসলাম আজও ঋণী । এটা বলা মোটেও অতিরঞ্জিত করা হবে না যে , ইসলামের চারাগাছটি রোপণ করা হয়েছিল হযরত আলী (আঃ) এর গৃহেই ।
হযরত আলী (আঃ) এর পিতা যরত আবু তালিব (আঃ) ইসলাম প্রচার ও প্রসারে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করে যাচ্ছিলেন । ইসলামেরই স্বার্থে ইমাম আলী (আঃ) বহুকষ্টে নির্বাসনের কঠিন জীবনগুলি অতিবাহিত করেছেন । ক্ষুধার্ত থেকেছেন কখনও বা ঘাস / গাছের পাতা খেয়ে নিজের ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করেছেন । তারপর নিজের পুরো জীবনটাকেই ইসলামের স্বার্থে উৎসর্গ করে দিয়েছেন ।
অতঃপর মহানবী (সাঃ) এর ওফাতের পরে তাঁর এই ধৈর্যধারণের মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে কঠিন ধ্বংসাত্মক পরিণাম থেকে বাঁচিয়েছেন ।
এখানে এই কাহিনীটির উল্লেখ করা মনে হয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না -
একই শিশুর দাবী নিয়ে যখন দুইজন নারীর মধ্যে কলহ বেঁধেছিল এবং কোনমতেই সমাধান করা যাচ্ছিল না যে , আসলেই শিশুটি কার ।
তখন জল্লাদকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তীক্ষ্ণ তলোয়ার দিয়ে শিশুটিকে দুটুকরো করে দিতে ।
তখন সেই শিশুর প্রকৃত মা কেঁদে উঠেছিল এবং আর্তনাদের সুরে এই কাজ হতে বিরত থাকতে বলেছিল । (প্রকৃত মা পেয়ে গেলেন)
প্রকৃত মা শিশুটিকে অন্যের / বিজাতীয় লোকের নিকট দিয়ে দিতে রাজি কিন্ত শিশুটির কোন ক্ষতি দেখতে নারাজ ।
এই ঘটনা , ইমাম আলি (আঃ) এর ঐসময়ের ঘটনার সাথে সামঞ্জস্যশীল ।
প্রকৃতই তিনি চান নি কষ্ট করে তিলে তিলে গড়ে ওঠা ইসলাম কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক । অন্যথায় জনগণ আজও অবধি তাঁকে এই বলে অভিযোগ / দোষারোপ করত যে , নিজের ক্ষমতা দখলের জন্য হযরত আলী (আঃ) ইসলামকে ক্ষতিসাধন / ধ্বংস করে দিয়েছেন । (নাউজুবিল্লাহ)
তাছাড়া ইমাম আলি (আঃ) মহানবী (সা) কর্তৃক বিশেষভাবে নির্দেশিত ছিলেন , ইসলামের স্বার্থে ঐসব ব্যক্তিদের বিরুদ্বে যুদ্ধ না করতে ।
এই ধরনের নির্দেশ ও উপদেশ মহানবী (সাঃ) তাঁর কতিপয় সাহাবাদেরকেও দিয়েছেন । মহানবী (সাঃ) এর সাবধান বাণী ছিল এবিষয়ে ।
এখানে আর একটি বিষয় উল্লেখ্য , অবৈধ ঐসব খলীফারা প্রকাশ্যে ইসলামের বিরোধিতা করেনি যেমনটি ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া (লানত) করত ।
সুতরাং ইমাম আলি (আঃ) নিজ ধৈর্যশক্তির কঠিন পরীক্ষা দিলেন ।
এবং সেইসাথে নবী (সাঃ) এর প্রকৃত খলীফা / উত্তরাধিকারী হিসাবে নিজ দায়িত্ব পালন করে চললেন । যদিও মহানবী (সাঃ) এর ওফাতের পর থেকে ২৪ বছর পর্যন্ত ইসলামি সাম্রাজ্যের ক্ষমতা তাঁর নিকট থেকে অবৈধ ভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল , তথাপিও বৈধ খলীফা / উত্তরাধিকারী হিসাবে তাঁর দায়িত্ব যথারীতি পালন করে যাচ্ছিলেন ।
ইহার পরেও কেউ যদি পুনরায় এই যুক্তি প্রদান করেন যে , ইমাম আলি (আঃ) প্রথম তিন খলীফার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করেননি , সুতরাং প্রথম তিন খলীফা অবৈধ ছিলেন না বরং বৈধ ছিলেন ।
তাদেরকে আমি পাল্টা প্রশ্ন করব , যদি ইমাম আলি (আঃ) প্রথম তিন খলীফার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন তাহলে কি আপনারা তাদেরকে অবৈধ বলে মানতে পারতেন বা মানতেন ?
আপনাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই , ইমাম আলি (আঃ) কে মূয়াবীয়া এবং উম্মুল মোমেনীন মা আয়েশা - তালহা - যুবাইর সহ কতিপয় স্বনামধন্য সাহাবীর (!) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়েছিল ।
আপনারা কি ইমাম আলি (আঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এইসব সাহাবীদেরকে (!) ভ্রান্ত বা অবৈধ বলতে পারেন ??
পুনশ্চ , কারও মনে হয়ত একটি সংশয় থেকেই যেতে পারে , হযরত আলি (আঃ) মুসলমানদের মধ্যকার পারস্পরিক যুদ্ধের ঘোর বিরোধী ছিলেন ।
তাহলে কেন তিনি মূয়াবীয়া এবং মা আয়েশা প্রমুখের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন ?
আমি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে , ইমাম আলি (আঃ) ঐ যুদ্ধগুলি শুরু করেননি ।
ইতিহাস সাক্ষী যে , মূয়াবীয়া , মা আয়েশা প্রমুখ ইমাম আলি (আঃ) এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পদক্ষেপ গ্রহণ করে ।
ইতিহাস আরও সাক্ষী যে , যুদ্ধের সূচনা মা আয়েশা ও মূয়াবীয়ার তরফ থেকেই হয়েছিল ।
ইমাম আলী (আঃ) কে শুধু বাধ্য হয়েই মোকাবিলা করতে হয়েছিল ।
হাদীস শরিফে আল্লাহর নবী ফরমান
"আনা মাদিনাতুল এলমে ওয়াআলিও
বাবুহা"
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। রাসূল (দঃ) ইরশাদ করেছেনঃ
আমি হলাম ইলমের শহর। আর আলী
(রাঃ) হল এর দরজা।
সুতরাং যে ব্যক্তি শহরে প্রবেশ করতে
চায়, সে যেন দরজা দিয়ে আসে।
{মুস্তাদরাকে হাকেম ..... {সহীহ
বুখারী, হাদিস নং-৬৯১৯, সুনানে আবু
দাউদ, হাদিস নং-৩৫৭৬, সহীহ মুসলিম,
হাদিস নং-৪৫৮৪}.
** আজ একই ভাবে মোহাম্মদী ইসলামে ডঃসৈ কুদরত এ খোদা মাঃআঃ তিনার " মহান মোর্শেদ " কে জগতবাসির কাছে প্রতিষ্ঠিত করা ও তিনার দাওয়াত পৌছানোর জন্য ধর্যের সাথে ,সামাজিক ও যান্ত্রিক আঘাত এর পর আঘাত স্বয্য করে, অঘাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
আশা করি যে , দীর্ঘ দিনের লালিত একটি বিভ্রান্তির রহস্য জাল থেকে পরিস্কার হতে পেরেছেন ।
সকলেই ভাল ও সুস্থ থাকুন 

Wednesday, November 6, 2019

কোথা থেকে আমাদের আগমন, কোথায় আমাদের গমন
একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ে দেখুন
অনেক অজানা রহস্য উন্মোচিত হবে !
একটু চিন্তা করুন
কোথায় থেকে আমাদের আগমন, কোথায় আমাদের গমন, এ ব্যাপারে আমরা খুব বেশি চিন্তা করিনা ।
মৃত্যুর পর কেয়ামত পর্যন্ত আমাদেরকে যেখানে অবস্থান করতে হবে, তার জন্য আমাদের প্রয়োজন আমরা যে ভাবে যে ত্বরিকা মোতাবেক ধর্ম পালন করি তা বিশুদ্ধভাবে জেনে পালন করা এবং জানার জন্য আগ্রহ সৃষ্টি করা । এর জন্য প্রয়োজন জ্ঞান অর্জন, জ্ঞান অর্জন করতে হলে কুরআন হাদীসের আলোকে আমাদেরকে অধ্যয়ন করতে হবে, গবেষণা করতে হবে ।
সূফী সাধনায় সাধকের জন্য যে সমস্ত ধাপ গুলো রয়েছে তা বড়ই বিশাল ।
সুফী সাধনায় পাঁচটি ধাপ রয়েছে। যথা-শরীয়ত, তরীকত, মারেফত, হাকিকত, ওয়াহ্দানিয়াত । শরীয়ত ছাড়া বাকী চারটি ধাপকেই তরীকতের পর্যায়ভুক্ত বলে গণ্য করা হয় । কুরআন হাদিসের আলোকে সুফী সাধকগণ সুফী সাধনায় এই পাঁচটি ধাপ সঠিকভাবে অতিক্রম করতে পারলে সুফী সাধনার সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত হয় বলে উল্লেখ রয়েছে ।
সূফী সাধনার প্রথম ধাপ শরীয়ত : শরীয়ত শব্দটি ‘সারয়া’ শব্দ থেকে উদ্ভুত । ‘সারয়া’ শব্দের আভিধানিক অর্থ সহজ সরল পথ, প্রধান সড়ক ইত্যাদি । আবার শরীয়ত শব্দের আভিধানিক অর্থ প্রকান্ড নদী, প্রবাহিত জলস্রোত, বৃহত্তম জন সড়ক প্রভৃতি । ইসলামের পারিভাষিক অর্থে শরীয়ত হলো কুরআন সুন্নাহ (হাদীস) ইজমা (মতৈক্য) এবং কিয়াস (অনুসরণ যোগ্য) প্রমানাদি দ্বারা গৃহীত ইসলামের জীবন বিধান বা জীবন ব্যবস্থা। অর্থাৎ আল্লাহ প্রদত্ত যেসব বিধি বিধান সমূহ হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর মাধ্যমে মানব জাতির প্রতি নির্দেশ ও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, একেই ইসলামের পরিভাষার শরীয়ত বলা হয়। ফেকাশাস্ত্রের ইমামগণ কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা মানব জাতির জীবন ব্যবস্থা যেভাবে নির্দেশ ও নির্ধারণ করে গিয়েছেন তাকেই শরীয়ত বলা হয়। ইসলামের ফেকা শাস্ত্রে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এমনকি আন্তর্জাতিক জীবন বিধান পর্যন্ত নির্দেশিত হয়েছে । ইসলামের এই নির্দিষ্ট জীবন বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ কেননা পবিত্র কুরআনের ভাষায় ঘোষিত হয়েছে যে ইসলামের জীবন ব্যবস্থা ব্যতিরেকে অন্যকোন রকম জীবন ব্যবস্থাই আল্লাহর নিকট গৃহীত নয় ।
ইসলামে শরীয়ত ব্যবস্থা অনুযায়ী পরিচালিত হবার পিছনে যে উদ্দেশ্য তা হলো মানবজাতির ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন এবং আন্তর্জাতিক জীবনে যাতে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিধান করা যায় এবং জীবনের স্থিতিশীলতা যাতে রক্ষা করা যায়।
শরীয়ত পন্থীদের জন্য শরীয়তের পাঁচটি কার্য সম্পাদন করা ফরজ। যেমন- ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ্ব ও যাকাত।
হজ্ব এবং যাকাত ধনীলোকদের জন্য ফরয সকলের জন্য নয়। শরীয়ত পন্থীরা যখন শরীয়তের যাবতীয় অনুশাসন মেনে চলে এবং শরীয়তের নির্দেশাবলী তাদের জীবনে বাস্তবায়িত করেন। শরীয়তের উদ্দেশ্যাবলী জীবনে বাস্তবায়িত যখন হয়ে উঠে তখনই তার জন্য শরীয়তের শিক্ষা থেকে তরীকতের দীক্ষা নেবার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। শরীয়ত থেকে তরীকতে শিক্ষানেবার সাধনাকেই বলে সুফী সাধনার পথ । শরীয়ত ও ত্বরীকত একটি অপরটির সম্পূরক। তরীকত শরীয়তের বাহ্যিক ধর্মানুষ্ঠানগুলো আভ্যন্তরীন বিশুদ্ধতা, পরিপক্কতা, সার্থকতা ও সফলতা এনে তরীকত শরীয়ত পন্থীকে মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছে দেয় । যেহেতু তরীকত শরীয়ত পন্থীকে তার ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে বাঁচিয়ে রাখার উপায় এবং উপকরণ হিসাবে কাজ করে থাকে এজন্যই শরীয়ত পন্থীকে তরীকত ব্রতী হওয়া আবশ্যক। শরীয়ত পন্থীগণ যখন তরীকতের উচ্চ স্তরে পৌঁছাতে সক্ষম হন, তখন তিনি তার মাশুকের সাথে মিলন কামনায় অধিকতর ব্যাকুল হয়ে উঠেন । মাশুকের সান্নিধ্য লাভে নিজেকে ধন্য করে নিতে চান । প্রেমময়ের প্রেমে প্রেমিকের মন প্রাণ তখন ছটপট করতে থাকে বিরহ ব্যথায় । তখন তিনি সারাক্ষণ আল্লাহ পাকের আরাধনায়-উপসনায় নিমগ্ন থাকতে ভাল বাসেন । তিনি তখন জাগতিক লোভ লালসা ও মায়ামোহ থেকে নিরাসক্ত হয়ে পড়েন । প্রেমিক তখন প্রেমময়ের প্রেমে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চান । তখন শরীয়ত তরীকত দ্বারা অর্থবহ হয়ে উঠে । তাই শরীয়ত হলো দেহ, তরীকত হলো প্রাণ বা আত্মা । ইসলামের বাহ্যিক জীবন ব্যবস্থার নাম শরীয়ত । আর আত্মার উৎকর্ষ সাধনের নাম ত্বরিকত ।
সুফী সাধনার দ্বিতীয় ধাপ তরীকত : তরীকত শব্দটি তারীক শব্দ থেকে উদ্ভূত। তারিক শব্দের আভিধানিক অর্থ পথ বা পথ চলা । আর তরীকত শব্দের অর্থ পথ চলার নিয়ম কানুন । শরীয়ত থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তরীকতের পথ ধরে মারফত, হাকীকত ও ওয়াহ্দানিয়াতের লক্ষ্যবিন্দুতে পৌঁছা যায় তাকেই তরীকত বলা হয়। শরীয়ত থেকে মারেফতে উত্তীর্ণ হতে হলে যে পথ অনুসরণ করতে হয় সেই অনুসৃত পথের নামই তরীকত । তরীকতপন্থী সালেকের জন্য তরীকতের অজানা-অচেনা পথ চলার জন্য একজন দিশারী বা মুর্শিদের প্রয়োজন । মুর্শিদ তাঁকে পথ দেখিয়ে তাঁর গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেন । আবার শরীয়ত পন্থীরা যখন তরীকতের পথে চলতে শুরু করেন তখন তাকে ছালেক নামে অভিহিত করা হয় । ছালেক মুর্শিদের নিকট থেকে মারেফত জগতের বহু রহস্য জেনে নেন । তরীকতের সাধন-ভজনকালে ছালেকের নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়, নানা প্রশ্নের উদ্ভব ঘটে, নতুন নতুন তত্ত্ব ও তথ্য উদ্ঘাটিত হতে থাকে। আশেক আর মাশুক মিলন স্বাদে আত্মবিভোর হয়ে যায় । মাশুকের মিলন বাসনা থেকেই হৃদয়ে সৃষ্টি হয় আল্লাহপাকের স্মরণ । ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় মহানবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) আল্লাহর প্রেমে সারাক্ষণ নিমগ্ন থাকতেন । তিনি আল্লাহর স্মরণে সর্বক্ষণ ডুবে থাকা অবস্থায় সংসার ধর্ম করতেন। প্রত্যেক সাহাবাই রাছুলের হাতে হাত রেখে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন । এই বায়আত নবুয়ত (রেসালত) রাষ্ট্রীয় খেলাফত প্রভৃতি অর্থেই বহাল ছিল । বায়আত এখন পীর-মুরীদ অর্থে বহুল প্রচলিত । রাসুলে পাক (সাঃ) ছিলেন সমগ্র মানব জাতির দিশারী । তাঁর দেয়া দিশা থেকেই ওলিগণ লাভ করতে পেরেছেন সত্যের সন্ধান, পেয়েছেন বেলায়তের উত্তরাধিকারী । তাই তরীকত পন্থীদের কর্তব্য কামেল পীর বা মুর্শিদের নিকট বায়েত গ্রহণ করা । তার মুর্শিদের দেওয়া ছবক নিয়মিত পালন করা । পীরের দেয়া শর্ত পালনে সক্ষম মুরিদকেই তরিকতের গোপন রহস্য সম্পর্কে মুর্শিদ অবহিত করে থাকেন । তরীকত হলো রিয়াজাত-মুশাহিদার পথ, আত্মসংযম ও কঠোর সাধন ভজনের পথ । তরীকত আলমে মালাকুতের অন্তর্ভুক্ত । আলমে মালাকুতকে বলা হয় খোদায়ী জগত, ফেরেশতা জগত, আত্মজগত । এই আলমে মালাকুতে প্রবেশ করতে হলে মানব চরিত্রের কতগুলো মন্দ স্বভাব পরিহার করিতে হয় । যথা-কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মিথ্যা, হিংসা- বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, আত্মঅহংকার, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা, জাগতিক ধন সম্পদ, ঐশ্বর্য, কৃপনতা, লোক দেখানো উপাসনা, অবৈধ কার্যকলাপ মিথ্যা, প্রতারণা, পণ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানো, ওজনে কম দেওয়া, ওজনে বেশি নেওয়া, অধিক মুনাফার আশায় পণ্যদ্রব্য গুদাম জাত করা, রাহাজানী, নরহত্যা, অপহরণ, মদ্যপান প্রভৃতি ।
তরিকতের প্রচলিত ৭ (সাত) আরকান এবং ৬ (ছয়) আহকাম রয়েছে ৭টি আরকান হলো
(১) আল্লাহকে জানার মত সময়উপযোগী জ্ঞানার্জন । (২) জাগতিক লোভ লালসা বিসর্জন । (৩) দুঃখ দৈন্যে ধৈর্য ধারণ (৪) আল্লাহ পাকের অনুগ্রহের বিনিময়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ (৫) হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি ভয়ভীতি রাখা (৬) আল্লাহর স্মরণে সর্বক্ষণ নিমগ্ন থাকা (৭) মুরাকাবার মাধ্যমে স্রষ্টা ও সৃষ্টির ধ্যান ধারণায় মগ্ন থাকা ।
তরিকতের ৬ ছয় আহকাম হলো (১) আল্লাহর মারফত লাভ (২) দানশীলতা (৩) সত্যবাদিতা রক্ষায় অটল থাকা (৪) ভাগ্যলিপির উপর দৃঢ় আত্মবিশ্বাস রাখা (৫) আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা বজায় রাখা । (৬) পাশব প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামরত অবস্থায় দৃঢ়পদ থাকা ।
এছাড়াও কম কথা, কম ঘুম ও কম খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, নির্জন বাস করা । নৈতিক চরিত্রের উন্নতি সাধনের মাধ্যমে আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করাই ত্বরীকতের মুখ্য উদ্দেশ্য । সূর্য যেমন মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে সূর্যরশ্মি বা সূর্যের কিরণ থেকে আমরা বঞ্চিত হয়ে পড়ি, অনুরূপভাবে মানব আত্মাও পাশব প্রবৃত্তি দ্বারা তমসাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ।
সূফী সাধনার তৃতীয় ধাপ মারেফত : মারেফত শব্দটি উরফুন শব্দ থেকে উদ্ভূত । উরফুন শব্দের আভিধানিক অর্থ জানা, কোন বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করা। মারেফত শব্দের পারিভাষিক অর্থ জানা/শোনা ও নিজের অভিজ্ঞতা দ্বারা যে বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করা হয়, তাকেই মারেফত বলা হয়। তরিকত শাস্ত্রমতে মারেফত শব্দের বিশদ ব্যাখ্যা হল, বিশ্ব সৃষ্টির পরম সত্তা মহান আল্লাহ ও তাঁর সুবিশাল সৃষ্টি জগত এবং আপন সত্তাকে জানার নামই মারেফত । নিজ এবং নিরাঞ্জনাকে জানার নামই মারেফত।
হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে ‘‘মান আরাফা নাফচাহু ফাকাদ আরাফা রাববাহু অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজেকে জানতে পেরেছে সে তার প্রভূকে জানতে পেরেছে ।
তরিকতের ভাষায় মারফত অর্থ নূরে মারফত বা নুরে এলাহী তথা মহান আল্লাহ্ পাকের জ্যোতিময় দীপ্তি, পরম জ্যোতিময় সত্তার পরিচিতি লাভ, পরম প্রেমময় মহান আল্লাহ্ পাকের পূত-পবিত্র নূরের সাথে পরিচিত হওয়াকেই মারেফত বলে । মারেফতের অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছতে হলে চারটি স্তর অতিক্রম করা অপরিহার্য। (১) ইমান : অদৃশ্য বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন (২) তলব : অদৃশ্য বিষয় বস্ত্তর অনুসন্ধান কার্যে লিপ্ত হওয়া (৩) ইরফান : অদৃশ্য বিষয়বস্ত্ত সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা। (৪) ফানাফিল্লাহ : অদৃশ্য বস্ত্ততে উপনীত ও উন্নীত হওয়া । অর্থাৎ পরম প্রেমাম্পদের জ্যোতিময় সত্তার আলোকে নিজের ক্ষুদ্রতম সত্তাকে আলোকিত করে তোলা । মারেফতে পরিজ্ঞাত ব্যক্তিকে বলা হয় আরেফ বা সুফী । এই পথ অনুসরণ করেই মুসলিম বিশ্বে অগণিত সুফীর আর্বিভাব ঘটেছে । আশেক আর মাশুকের মিলন কামনাই সুফি সাধনার মর্মকথা । অদৃশ্য বস্ত্তর ধ্যান ধারণায় রত অবস্থায় সাধনা করতে করতে সুফীর হৃদয়ে এমন এক অবস্থায় সৃষ্টি হয় যা তত্বজ্ঞানের নেত্র দ্বারা সৃষ্টি জগতের পরম সত্বা মহান আল্লাহর সিফাতকে প্রত্যক্ষভাবেই অনুভব এবং উপলব্ধি করতে সক্ষম হন । এইরূপ নির্ভুল উপলব্ধির নামই ইরফান, বা আত্মোপলব্ধি জ্ঞান । সুফিগণ সাধনা বলে যখন জ্ঞানের চরম পরম সীমায় উন্নীত হয়ে থাকেন তখন তারা মহাজ্ঞানী রাববুল আলামীনের প্রদত্ত জ্ঞান প্রভায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেন । তখন তাদের ক্ষুদ্রতম জ্ঞানসত্তা মহান জ্ঞানসত্তায় মিশে কোন প্রকার ব্যবধানে দেখতে পান না । সৃষ্টি জগতের বিভেদ রেখা ভুলে গিয়ে সব একাকার দেখতে পান এরই নাম ফানাফিল্লাহ বা আল্লাহতে ফানা হয়ে যাওয়া । মারেফত হলো আল্লাহর জরাতে বিচরণ ধর্মী একটি জগত । এই জগত চেনা-অচেনা , জানা-অজানা, আলো-আঁধার মেশা একটি দ্বিধা-দ্বন্দের জগত । এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মাঝেই পরম প্রেমময়ের দর্শন লাভের আকাঙ্খা এবং তাকে জানার ব্যাকুলতা বার বার হানা দিতে থাকেন । এমনিভাবে মুর্শিদের সাহায্যে মারেফতের গোপন রাজ্যে প্রবেশ করে আত্ম বিভোর হয়ে থাকেন । যে সত্যে তিনি উপনীত হন, সে পরম সত্যের সন্ধান তিনি লাভ করে থাকেন, আর নিজের চিন্তা ভাবনার মধ্যে সীমিত থাকেন, নিজে নিজেই বহু কিছু উপলব্ধি করতে থাকেন যা ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না । সেই পরম সত্যের ধারণা প্রকাশ করা ভাষাজ্ঞানের বর্ণনাতীত । কেননা তা অনির্বাচনীয়, অপূর্ব, অপরূপ যা অব্যক্ত, অনন্ত ও অসীম। মারেফতে উত্তীর্ণ হতে পারলে আত্মদর্শন লাভ করা যায় পরম সত্তার পরিচিতি পাওয়া যায়। দেহের মাঝে দেহীর অবস্থান, তাই আত্মতত্ত্ব নির্ভর করছে দেহ তত্বের উপর । দেহতত্বের উপর বিজয়ী হতে পারলেই আত্মতত্বে উন্নীত হওয়া যায় । আত্মতত্বের উপনীত হতে পারলেই পরম তত্বের বা পরম সত্তায় উপনীত হওয়া যায় ।
সুফী সাধানায় চতুর্থ ধাপ হাকীকত : হাক্কুন শব্দ থেকে হাকীকুন এবং হাকীকুন শব্দ থেকে হাকীকত শব্দটির উৎপত্তি। যার আভিধানিক অর্থ বাস্তব, ধ্রুবসত্য, পরম সত্তা, সার বিষয়বস্ত্ত ইত্যাদি । ইহা খোদাতায়ালার গুণবাচক বিশেষণের মধ্যে একটি বিশেষণ ও বটে। হাকীকুন শব্দের আভিধানিক অর্থ-পরম সত্য বিষয়, যে পরম সত্য বিষয় সম্পর্কে পরিজ্ঞাত হওয়া যায় তাকেই হাকীকত বলা হয় । আবার তরীকতের অভিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হবার নামই হাকীকত । ইহা সুফী সাধনার চতুর্থ স্তর বা ধাপ । সুফি বা আরেফ এই স্তরে উত্তীর্ণ হতে পারলে পরম সত্যের সন্ধান ও স্বরূপ লাভ করিতে পারেন, তথা আত্মপলব্ধি করতে সক্ষম হন । এই পরম প্রেমাম্পদের ভালবাসায় নিজের অস্তিত্ববোধ হারিয়ে যায় । মহান রাববুল আলামীনের সুমহান সত্তায় আত্মবিলোপিত হয়ে পড়েন । ইহা ফানাফিল্লাহের স্তর । এই স্তরে উন্নীত আশেক তার মাশুকের প্রেমে উম্মাদনায় আত্ম বিভোর হয়ে পড়েন। একটি চিরন্তন অস্তিত্বের সন্ধান লাভ করতে পারেন। এ প্রসঙ্গে পারস্য কবি দেওয়ান হাফেজ বলেছেন, খোদার প্রেমে যে হৃদয় অনুরঞ্জিত, অবধারিত মরণেও হয়না তাঁর মরণ, সে যে চির জীবিত চির অমর। ফানাফিল্লার স্তর থেকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ন্যায় স্বাভাবিক কর্মজীবনে রত থাকার নামই বাকাবিল্লাহ, বাকাবিল্লাহর প্রকৃত অর্থ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবন আদর্শ সুপ্রতিষ্ঠিত করা, তারই ন্যায় ধর্মে কর্মে সুস্থিত থেকে কেবল হৃদয়ে প্রেমময়ের চিরন্তন প্রেমে জাগিয়ে তোলা। খোদা পাকের সন্তুষ্টি লাভ করা ছাড়া সুফী জীবনে দ্বিতীয় কোন উদ্দেশ্যে নিহিত থাকেনা। খোদা পাকের গোপন প্রেমে যে প্রেমিক মগ্ন তাঁরই অবস্থান হাকিকতে। অর্থাৎ সত্যের সন্ধান লাভ করার নামই হাক্কিকত। নিখিল সৃষ্টির অন্তরালে যে পরম সত্য বা সত্তা লুকিয়ে আছে, সেই পরম সত্তায় উত্তীর্ণ হবার নামই হাকিকত।
এই পরম
সত্যের উপলব্ধি জ্ঞান লাভ হয় পাঁচ প্রকার অনুসন্ধান পদ্ধতি দ্বারা যেমন (১) বুদ্ধি (২) অভিজ্ঞতা (৩) বিচার বিশ্লেষণ ৪) বিবর্তন মুখী মতবাদ (৫) প্রজ্ঞাবাদ।
ছালেক শরীয়তগত জ্ঞান, তরিকতগত অভিজ্ঞতা এবং মারেফতের পরিচিতি গত জ্ঞানের সমন্বয়ে আধ্যাত্মিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে অন্তদৃষ্টি সম্পন্ন মৌলজ্ঞান লাভ করে থাকেন। ফানাফিল্লাহ মানে হাকীকতে উন্নীত হয়ে তার নিজের বুদ্ধি জ্ঞান, অনুভূতি ইত্যাদি মহান সত্তার হারিফে ফেলা। যেমন এক বিন্দু জল মহাসাগরে মিশে গেলে যেমন হয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-ওহে পরিতৃপ্ত আত্মা তোমার প্রভুর প্রতি সন্তুষ্টি চিত্তে এবং সন্তুষ্টি প্রাপ্ত অবস্থায় প্রত্যাবর্তন কর আর আমার প্রকৃত দাসদের অর্ন্তভুক্ত হয়ে জান্নাতে প্রবেশ কর। হাকিকতে উত্তীর্ণ সাধককে কামেল (পরিপূর্ণ মানব) বা আরেফ বিল্লাহ বলা হয়। রাসুলূল্লাহ (সাঃ) বলেন হাকীকত আমার অবস্থান সমূহ। হযরত শাহ বু আলী কলন্দর বলেছেন, হে সাধক, যতদিন পর্যন্ত তোমার আমিত্ববোধ বাকী থাকবে ততদিন পর্যন্ত তুমি তাঁর পরম বন্ধুতে পরিণত হতে পারবেনা, আর যখন তোমার আমিত্ববোধের বিলুপ্তি ঘটবে, তখনই তুমি আল্লাহর পরম বন্ধুতে পরিণত হতে পারবে। মুরাকাবা মুশাহেদার মাধ্যমে আল্লাহ পাকের একাত্ববোধ মিশে যাওয়া সম্ভব হয়। এই স্তরে উত্তীর্ণ সাধককেই সবার আগে মরতে হয়, হিসাব নেবার আগে হিসাব নিতে হয়। পরিশেষে বলতে চাই হাকিকত হলো একমাত্র আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোন অস্থিত্ববোধ হৃদয়ে না থাকার নামই হাকিকত।
সুফী সাধনার পঞ্চম ধাপ ওয়াহ্দানিয়াত :ওয়াহেদুন শব্দ থেকে ওয়াহ্দানিয়াত শব্দের উদ্ভব ঘটেছে। ওয়াহেদ শব্দের অর্থ এক, আবার ওয়াহ্দানিয়াত শব্দের অর্থ একত্ব, যার দ্বিতীয় নাই। ওয়াহ্দানিয়াত ও হাকিকত একই বিষয়। আল্লাহর একত্ব অনাদি, অনন্ত যেই সত্তাতে কোন সংমিশ্রণ নেই, ইহা তরিকত সাধনায় সর্বশেষ স্তর। সালেক তরিকতের সকল পথ পেরিয়ে যেখানে এসে উপনীত হন। এটাই তাঁর পথ চলার অভিষ্ট লক্ষ ওয়াহদানিয়াত আলমে হাহুতের অন্তভূক্ত। আলমে হাহুত আল্লাহ পাকের নির্জন অবস্থানের নাম। তিনি চিরঞ্জীবি প্রকৃতি শূন্য অবস্থায় অবস্থান করছেন, তিনি নিঃসঙ্গ অবস্থায় আপনাতে আপনি আত্মা বিভোর ও স্থিতিশীল। আদিতে একমাত্র তিনিই ছিলেন আর কেউ ছিল না। ওয়াহদানিয়াতে উত্তীর্ণ ছালেক বা আরেফ সব কিছু বিলীন করে দিয়ে, নিজেকে ভুলে গিয়ে আল্লাহর সত্তায় স্থিতি লাভ করে থাকেন। এ অবস্থা সম্পর্কে মাওলানা রুমী বলেন তুমি যদি নিজেকে বিলীন করে দিয়ে আল্লাহর তাওহীদে অবস্থান করতে পার তাহলে তুমি তার পরম বন্ধু রূপে তাঁরই সত্তায় অবস্থান করতে পারবে।
হুজুর পাক (সাঃ) নবী হওয়ার পূর্বে ২৫ বৎসর বয়স থেকে ৪০ বৎসর বয়স পর্যন্ত আরবের হেরা পর্বতের গুহায় একাধারে বিরতিহীনভাবে ১৫ বৎসর গভীর সাধনার পরে নবুয়ত লাভ করেন। এরপর থেকে আল্লাহর বাণী শরীয়ত, তরিকত , মারেফত, হাকিকত, ওয়াহ্দানিয়াত পৃথিবীতে জারী হয়। অতএব, আল্লাহর রাসুল বেলায়তের সর্ব উচ্চ মোকাম অর্জন করে যে বিধান রেখে গেছেন তাই হলো শরীয়ত, তরীকত, মারফত, হাকিকত ওয়াহ্দানিয়াত। কাজেই ইমান, নামাজ, রোজা, হজ্ব, জাকাত ইত্যাদি পালন করতঃ কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী কামেল পীরের নির্দেশিত পথে তরীকত কাজের অনুশীলন করলেই আল্লাওয়ালা হওয়া যায়।
আলকোরআনে সুরা মায়েদাতে উল্লেখ আছে- তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকের এক একটি চলার পদ্ধতি এবং বিশেষ পথ রয়েছে।

আলী

রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেনঃ-
আদমের সৃষ্টির চার হাজার বছর আগে আল্লাহর সান্নিধ্যে আমি আর আলী একই নূর ছিলাম। তারপর যখন আল্লাহ্ আদম'কে সৃষ্টি করলেন তখন সে নূর'কে দুই টুকরো করলেন। তার এক টুকরো হলাম আমি আর অপর টুকরো হলো আলী।
(ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৬২/১১৩০, আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১২০)
" নবীর পরে রেসালতের কাজে আলী হলেন তাঁর একমাত্র যোগ্য প্রতিনিধি। মহানবী জীবনের প্রথম ও শেষতম হজ্জ্ব করে জন্মভূমী মক্কা'কে চিরবিদায় জানিয়ে, মদিনা যাবার পথে ১৮ই জিলহজ্জ তারিখে গাদি'রে খুম নামক ইস্থানে। সোয়া লক্ষ অনুসারীর সামনে আলী'কে পরবর্তী নেতারূপে তুলে ধরেন। সেদিন' ওমর, আবু বক্কর, ওসমান'সহ সবাই লাইন ধরে মাওলারূপে একে একে আলীর(আঃ) হাতে হাত রেখে বায়াত গ্রহন করেছিলেন। তার পূর্বে উপস্থিত জনতার সামনে মঞ্চে আলীকে(আঃ) দুই বাহু ধরে শূন্যে তুলে ধরে মহানবী(সাঃ) বলেছিলেন,আমি যার মাওলা আলী তার মাওলা। হে আল্লাহ্, তুমি তাকে বন্ধুরূপে গ্রহন কর' যে আলী'কে বন্ধুরূপে গ্রহন করে, তাকে শত্রুরূপে গ্রহন কর' যে তাঁর সাথে শত্রুতা করে, এবং সাহায্য কর তাঁকে যে সাহায্য করে, এবং লাঞ্চনা দাও তাঁকে যে লাঞ্চনা দেয়"।।
সূত্রঃ- তিরমিজী, ২য় খন্ড-পৃষ্ঠা-ঃ ২৩৩, আল্ বেদায়া ও নেহায়া, ৭ম খন্ড-পৃষ্ঠাঃ- ২৪৪"।

একটি সতর্কতা মূলক পোস্ট

No photo description available.


16 বছরের একটি ছেলে সম্প্রতি মারা গেছে। তিনি এবং তাঁর ভাই একই ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন।

গভীর রাতে তার বমি পেয়ে উঠল। তার ভাই বলেছিলেন যে তিনি তার হাতটি তার মুখের কাছে ধরে বাথরুমে গিয়েছিলেন।
বমি করার পরে শ্বাস নিতে অসুবিধার অভিযোগ করেন তিনি। পরে মারা যান।
..... এখন ডাক্তার ঘোষণা করেছেন যে তিনি বিছানা বা গালিচা নষ্ট না করার জন্য টয়লেটে পৌঁছা পর্যন্ত তিনি তার বমি ধরে রেখেছিলেন, এবং এটাই তাকে দম বন্ধ করেছিল। বমিটি সরাসরি তার বাতাসের পাইপ এবং শ্বাস প্রশ্বাসের ট্র্যাকের মধ্যে চলে যায়।
..... সুতরাং, আমাদের উচিত বাচ্চাদের যেখানে বমি লাগে সেখানে করতে দেওয়া। বাথরুমে না পৌঁছানো পর্যন্ত আমাদের কখনই তাদের বমি ধরে রাখতে বাধ্য করা উচিত নয়। কার্পেটটি সর্বদা ধুয়ে নেওয়া যাবে তবে আমরা কোনও শিশুকে ফিরে পেতে পারি না একবার শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে।

শুধু শিশু নয় বড়দেরও এমন হতে পারে..
...
দয়া করে এই বার্তাটি পাস করুন। এটি তথ্যবহুল এবং এটি একটি জীবন বাঁচাতে পারে।

Sunday, November 3, 2019

নিজেকে জানোঃ তুমি ছাগু কেমন ছাগু!  ছাগুদের অবশ্যপাঠ্য





প্রিয় ছাগু, আজ বাংলাদেশের জন্মদিন। এই দিনে তুমি কতো বড়ো বেজন্মা তা জানার অপূর্ব সুযোগ নিয়ে এসেছে আলিম আল রাজি। সুযোগ হেলায় হারিয়ো না।


মগবাজার থেকে তো বেশ ভালোই সাপোর্ট পাচ্ছো। প্রশিক্ষনও পাচ্ছো নিয়মিত। কিন্তু এতে কি তোমার পারফরম্যান্স-এর উন্নতি হয়েছে? নাকি উলটা অবনতি হয়েছে?
এই পোস্ট-টির মাধ্যমে তুমি তোমার পারফরম্যান্স সম্পর্কে একটা ধারনা নিতে পারবে।
তাহলে যাওয়া যাক মূল পোস্টে।

নির্দেশিকাঃ
নিচে কয়েকটি প্রশ্ন আছে। প্রতিটা প্রশ্নের জন্য আছে তিনটি করে উত্তর। তোমাকে এই উত্তর গুলোর মধ্য থেকে একটা চয়েজ করতে হবে। তারপর পোস্টের শেষের দিকে থাকা মার্ক্স-এর সাথে মিলাতে হবে। তারপরেই তুমি বুঝে যাবে ছাগু হিসেবে তুমি কোন অবস্থায় আছো।
শুরু করা যাক...

১। ৫ টা রাজাকারের নাম বলো।
ক- রাজাকার! এটা কি জিনিষ?
খ- আমার তো তখন জন্মই হয় নি!
গ- দেখুন। আমাদের প্রথমে ঐ সময়কার পরিস্থিতিটা বুঝতে হবে। এই প্রসঙ্গে আমি এখনো নিরপেক্ষ। ব্লা ব্লা ব্লা

২। গোলাম আজম সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলো
ক- কি আর বলবো! এই মহান নেতা সম্পর্কে ভাবলেই পায়জামা ভিজে যায়! উনারে নিয়া চুদুর বুদুর মার্কা কিছু বললে কল্লা ফেলে দিবো।
খ- একজন ভালো মানুষ। তার বিরুদ্ধে কেউ কোন অভিযোগ দেখাতে পারবে না।
গ- উনি কে তা আমি বিচার করার কে? মহাকালই উনার অবদানের কথা বিচার করবে।

৩। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তোমার কি অভিমত?
ক- কৈ? কিসের মুক্তিযুদ্ধ? সব তো ছিলো গন্ডগোল আর ভারতের চক্রান্ত।
খ- সংক্ষেপে বলা সম্ভব না। পুরো প্রেক্ষাপট আলোচনা করতে হবে।
গ- হুম। মুক্তিযুদ্ধ ভালো জিনিষ। বেশ ভালো।(মুখে ভাবের ছাপ)

৪। ফাকিস্তান রাষ্ট্রটি সম্পর্কে তোমার কি অভিমত?
ক- পাকিস্তান না বলে ফাকিস্তান বলায় আমার পিতৃনাভুতিতে আঘাত লেগেছে।
খ- কোন সময়ের সাপেক্ষে বলবো? ৭১? না ২০১১?
গ- দেখুন। মুক্তবাজার অর্থনীতির এই যুগে আপনি বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মধ্যে খুব বেশী মোটা বিভাজন রেখা আকতে পারবেন না।

৫। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে তোমার মতামত কি?
ক- সব আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক চাল।
খ- অতীত টেনে এনে জাতীকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র।
গ- আগে আমাদের বুঝতে হবে বিচার কি নিরপেক্ষ হচ্ছে? আর নিরপেক্ষ হলে কতোটুকু হচ্ছে। ব্লা ব্লা ব্লা।

৬। তোমার প্রিয় ব্লগ কোনটি?
ক- ভয়েস অফ পাকিস্তান
খ- সোনা ব্লগ
গ- দেখুন। যেখানে আছে ভাষার চর্চা সেখানেই আছি আমি। কোন বিশেষ পছন্দ নেই। তবে সোনা ব্লগ ইদানিং ভালো করছে।

৭। পাকিস্তান ক্রিকেট দল সম্পর্কে তোমার কি অভিমত?
ক- আহ! উহ! উহু!
খ- অনেক ভালো ক্রিকেট খেলে।
গ- ক্রিকেট হলো ক্রিকেট। এখানে পাকিস্তান ক্রিকেট আর বাংলাদেশ ক্রিকেট বলতে কিছু নেই।

৮। ২৬ মার্চ রাতে কি করেছো?
ক- ইয়াহিয়া খানের কথা চিন্তা করে স্বপ্নদোষ হয়েছে কালকে।
খ- আসলে ইতিহাস নিয়ে হুট করে আমি কোন কথা বলতে চাই না।
গ- কি আর করবো? ঘুমিয়েছি। এটা কি বিশেষ কোন রাত নাকি?

৯। ছাত্র শিবির সম্পর্কে তোমার কি অভিমত।
ক- আদর্শের সৈনিক।
খ- ছাত্রলীগ অনেক খারাপ।
গ- খারাপ কি!

১০। গোলাম আজমের মুখে মুতি। এ ব্যাপারে তোমার কি অভিমত?
ক- আপনে ভারতের দালাল। আপনে নাস্তিক। আপনে দুনিয়ার বদ।
খ- একজন সম্মানিত ব্যাক্তির মুখে আপনি মুততে পারেন না এভাবে।
গ- কোনভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়।



নম্বরঃ
"ক" উত্তরের জন্য রয়েছে ২ নম্বর
"খ" উত্তরের জন্য ৪ নম্বর এবং
"গ" উত্তরের জন্য রয়েছে ৬ নম্বর


তোমার স্কোর ও ফলাফল

>>১০-২৫
তুই অতি নিম্ন মানের ছাগু। নিজে খা পো এটা এতো সহজে স্বীকার করতে নাইরে ছাগলা। তোর বাপরা কি এতো সহজে স্বীকার করে? তাদের দেখে শিখতে পারস না? মগবাজার তোরে হুদাই ট্যাকা দিতেছে।

>>২৫-৪০
তুমি আসলে একটা ছুপা ছাগু। কিন্তু জানোতো ল্যাঞ্জা ইজ আ টাফ থিং টু হাইড। মুচড়ামুচড়ি করে মুখ ঢাকলেও ল্যাঞ্জা ঠিকই বের করে দিছো। এবার যাও দূরে গিয়া মরো।

>>৪০-৬০
হে হে। সুশীল ছাগু যে! কিন্তু সুশীলরা সবার আগে ধরা খায় ছাগু মিয়া! “হতেই পারো তিনকোনা/ করবো তোমায় আজ ভুনা 
Image result for গোলাম আযম

Sunday, October 13, 2019

মোজাদ্দেদ কাকে বলে??


মোজাদ্দেদ কাকে বলে??

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি হযরত রাসুল পাক (সাঃ) হতে শুনেছি যেঃ "আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতের (মঙ্গলের) জন্য প্রত্যেক শতাব্দী শেষে এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন, যিনি দ্বীনকে তাজদীদ করবেন। " তাজদীদ অর্থ কোন জিনিসকে নতুন করা অর্থাৎ সংস্কার করা। এখানে দ্বীনকে নতুন করা - এর অর্থ দ্বীনে যে সকল কুসংস্কার বা বেদায়াত প্রবেশ করবে তা হতে তিনি দ্বীনকে মুক্ত করবেন। অর্থাৎ কোরআন ও হাদীসের নির্ধারিত সীমা রেখার মধ্যে মানুষকে আবদ্ধ করার চেষ্টা করবেন। যিনি এরূপ কাজ করেন তাকে বলা হয় "মোজাদ্দেদ "।
.
-আবু দাউদ শরীফ

আল্লাহর পরিচয়

আল্লাহর পরিচয় 

দুনিয়াতে থেকেই আমাদেরকে সাধনা করতে হবে কিভাবে আমরা রাসূলের পরিচয় লাভ করবো, আল্লাহর পরিচয় লাভ করবো। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের পরিচয় লাভ করলে আমরা কামিয়াব হবো, আমরা বিজয়ী হবো।

We've to go through diligent spiritual meditation so as to we can experience the identity of the Prophet(SM),we can experience the identity of Allah in this very earthly life.Our ultimate success and victory surely lies in experiencing the identity of Allah and His Prophet(SM).
Image result for আল্লাহর পরিচয়

Saturday, October 12, 2019

মোর্শেদ

মোর্শেদ ঐ ব্যাক্তিকে বলে যিনি নিজে সাধনা করে আল্লাহ ও রাসুল (স:) কে পেয়েছেন, এবং তার অনুসারীদের আল্লাহ পর্যন্ত পৌছে দিতে সক্ষম।

Friday, October 11, 2019

সর্বকালের সর্বশ্র্রেষ্ঠ অনুসরনীয় ও অনুকরনীয় ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

হাদিসে কুদসিতে এরশাদ

হয়েছে,

"লাওলাকা লামা খালাক্তুল
আফ্লাক।"
অর্থাৎ "(হে হাবিব!)
আমি আপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম
না।" (সিররুল-আসসার,
পৃষ্ঠা-৭০)
কুরআনে আল্লাহ্ এরশাদ
করেন,
"ওআমা আরসালনাকা ইল্লা- রাহামাতাল্লিল
আলামিন।"
অর্থাৎ
"আমি আপনাকে জগত-
সমূহের রহমত
হিসাবে প্রেরণ করেছি।" (সূরা- আল
আম্বিয়া; আয়াত-
১০৭) "আলম" শব্দ'টি এক
বচন
এর বহু বচন হল
"আলামিন"। "আলম"
বলতে একটা পৃথিবী-
কে বুঝায় আর "আলামিন"
বলতে সমগ্র পৃথিবী-
কে বোঝায়।
আর আল্লাহ্ হযরত রাসুল (সাঃ)- কে বলেছেন, "
"ওআমা আরসালনাকা ইল্লা-
রাহামাতাল্লিল
আলামিন।"( "আমি আপনাকে সমগ্র
জগত-সমূহের রহমত
হিসাবে প্রেরণ করেছি।")
কুরআনে আল্লাহ্ ফরমান,
"আল
হামদুলিল্লাহি রাব্বিল
আলামিন।"
অর্থাৎ, "সকল প্রশংসা আল্লাহ্-
তাআলার যিনি জগত-
সমূহের প্রতি-পালক"।
(সূরা-আল ফাতিহা-১)
অর্থাৎ, আল্লাহ্ যেমন
একটা পৃথিবীর জন্য নয় সমগ্র সৃষ্টি জগতের
মালিক, তদ্রুপ রাসুল
(সাঃ)- হলেন
সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য
রহমত। অথচ অন্য
নবীদের কে শুধু মাত্র
পৃথিবী নামক গ্রহের
জন্য, তাও নির্দিষ্ট
সম্প্রদায়ের জন্য
পাঠানো হয়েছিল।
কিন্তু হযরত রাসুল(সাঃ)
সারা জাহানের জন্য
প্রেরিত হয়েছেন।
যা কপনাতেও ভাবা যায়
না তিনি কতো বর
মহামানব। আমদের মাথার সাধারণ ব্রেইন
দিয়ে কখনোই হযরত
রাসুল(সাঃ)-এর
মর্যাদা বিচার
করতে পারব না । হযরত
রাসুল(সাঃ) বলেছেন, "মহিমান্নিত
আল্লাহ্
সর্ব-প্রথম আমার নূর
সৃষ্টি করেছেন।"
(তাফসীরে-রুহুল বয়ান,
২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৭০) রাসুল(সাঃ) আরো বলেন,
"আদম যখন কাদা মাটি-
তে ছিল তখনও
আমি নবী ছিলাম"। -(আল-
হাদিস)
আমরা জানি সর্ব-প্রথম আল্লাহ্ আদম(আঃ)-
কে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন,
অথচ হযরত রাসুল(সাঃ)-
কে আদম
সৃষ্টির বহু
পূর্বে আল্লাহ- তাআলা সৃষ্টি করেছেন।
সুতরাং রাসুল(সাঃ)-
হলেন নূরের তৈরি,
যেহেতু আদম(আঃ)- ই প্রথম
যাকে আল্লাহ্
মাটি দিয়ে বানিয়েছেন। এর
আগে আল্লাহ্
মাটি দিয়ে কাওকে তৈরি করেননি।
তাই হযরত রাসুল(সাঃ)
বলেছেন,
"আমি আদম(আঃ)-এর সৃষ্টির ১৪- হাজার বৎসর পূর্ব
হতে আল্লাহ্র
সম্মুখে নূর-
হিসাবে অবস্থান
করেছিলাম।"
(তাফসীরে-রুহুল বয়ান, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৭০)
***তাই রাসুল(সাঃ) হলেন
নূরের*** রাসুল(সাঃ)- শুধু
উম্মতে মোহাম্মদীর
জন্যই শাফায়াত-
কারী নন, তিনি সকল নবী- রাসুলদেরও
শাফায়াত-
কারী এবং সাক্ষীদাতা।
রাসুল(সাঃ) কোন নবী-
রাসুলদের
অনুমতি না দিলে তারা তাদের নিজ উম্মতের জন্যও
শাফায়াত বা সুপারিশ
করতে পারবে না। তাই
কুরআনে এরশাদ
হয়েছে, "বিচার
দিবসে আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে তাদের
একজন (নবী) সাক্ষী দাড়
করব
এবং আপনাকে [রাসুল
(সাঃ)] আমি তাদের
সত্তায়নকারী সাক্ষী হিসাবে আনয়ন করব।" (সুরা-আল নামল;
আয়াত-৮৯) তাই
চিন্তা করে দেখুন,
আমাদের দয়াল রাসুল
(সাঃ)-এর সম্মান-
মর্যাদা কতো বেশি। হযরত রাসুল(সাঃ)
ফরমান, আল্লাহ্-
তাআলা সর্ব-প্রথম আমার
নূর সৃষ্টি করেছেন,
আমি আল্লাহ্র নূর
থেকে আর সমগ্র সৃষ্টি - রাজি আমার নূর থেকে।"
তাইতো আল্লাহ্
হাদিসে কুদসিতে বলেছেন,
"আমি আমার
চেহারা মুবারকের নূর
দ্বারা হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-কে সৃষ্টি করেছি।"
(সিররুল-আসসার, পৃষ্ঠা-৩)
আমাদের নবীজির
মর্যাদা কতো বেশি,
রাসুল(সাঃ)- আল্লাহ্র
কতো প্রিয়...... আল্লাহ্ বলেন, "হে রাসুল
(সাঃ)! নিশ্চয়ই
যারা আপনার
কাছে বায়াত গ্রহণ
করেছে, তারা আল্লাহ্র-
ই কাছে বায়াত গ্রহণ করেছে। তাদের
হাতের উপর
রয়েছে আল্লাহ্র হাত।
(অথচ সাহাবায়ে-
কেরাম দেখেছেন
তাদের হাতের উপর রয়েছে রাসুল(সাঃ)-এর
হাত) ।" (সূরা- আল
ফাতাহ-৪৮;
আয়াত-১০) আল্লাহ্
অরো বলেন,
"হে মাহবুব(সাঃ)! আপনি বদরের
যুদ্ধে যে কঙ্কর নিক্ষেপ
করেছেন,
তা আপনি নিক্ষেপ
করেননি; বরং আল্লাহ্
নিজেই নিক্ষেপ করেছেন।" (অথচ
সাহাবায়ে- কেরাম
দেখেছেন রাসুল(সাঃ)
বালি নিক্ষেপ করেছেন)
(সূরা- আল আনফল;
আয়াত-১৭) তাই দেখা যায় রাসুল
(সাঃ)-এর হাতই ছিল
আল্লাহ্র হাত।
তিনি যুগে যুগে এই
পৃথিবীতে আগমন
করে মানব- জাতিকে উদ্ধার
করে থাকেন। আর তাই
রাসুল(সাঃ)-হলেন
"হায়াতুন্নবি"........
ইবনে আব্বাস (রাঃ)-
হতে বর্ণিত। তিনি ফরমান, " হযরত
রাসুল(সাঃ)
নবীগণের পৃষ্ঠ-
দেশে বার বার জগতের
বুকে তাসরিফ গ্রহণ
করেছেন, পরিশেষে তিনি স্বীয়-
মাতা আমিনা(আঃ)-এর
কোলে তাশরিফ গ্রহণ
করেন।" (তাফসীরে-
দুররে মানসুর- ১৯ত্ম
খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৩২) তিনি যে সকল নবীগণের
সাথে ছিলেন তা আয়াত
দ্বারাই বোঝা যায়।
হযরত রাসুল(সাঃ) বলেন,
"আমি আদম সন্তানদের
প্রত্যেক যুগের উত্তম শ্রেণীতে প্রেরিত
হয়েছি; অতঃপর ওই
যুগে প্রেরিত
হয়েছি যে যুগে আমি বর্তমানে আছি।" (বুখারি শরীফ
১ম খণ্ড,
পৃষ্ঠা-৫০৩; মেশকাত- শরীফ-এর ৫১১পৃষ্ঠা,;
মুসনাদে-আহমদ ৯ম খণ্ড,
পৃষ্ঠা-২৫ & ২৬;
তাফসীরে মাজারি ১ম
খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৩৪) হযরত
রাসুল(সাঃ)- যে সব নবীর মাঝে ছিলেন,
তিনি যে নূরের
এবং আদম(আঃ) থেকে শুরু
করে এক লাখ ২৪-হাজার
নবি-
রাসুলদের সবার মাঝে যে তিনি ছিলেন
তা কুরআনের পরিষ্কার
দলিল-প্রমান
পাওয়া যায়। রাসুল
(সাঃ) যে সব নবীর
মাঝে ছিলেন এবং তিনি সব কিছু
প্রত্যক্ষ করেছেন
তা আল্লাহ্ "আলাম-তারা"
শব্দ টি দ্বারা প্রকাশ
করেছেন। আল্লাহ্
পবিত্র কুরআনে বলেছেন,
"আলামতারা কাইফাফা আলা রাব্বুকা..........."
অর্থাৎ,
আপনি কি দেখেন নাই
আমি কিভাবে "আদ-সামুদ"
জাতি-কে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম। এই
ঘটনা রাসুল(সাঃ)-এর
জন্মের
বহু আগের ঘটনা। রাসুল
(সাঃ)
যদি সেখানে উপস্থিত না থাকতেন,
তাহলে কিভাবে আল্লাহ্
বলেন
"আপনি কি দেখেন নাই" ।
আর এই "আলামতারা" অর্থ
"আপনি কি দেখেন নাই"। যখন আল্লাহ্ নবীদের
ঘটনা বর্ণনা করছিলেন
তখন
রাসুল(সাঃ)-কে উদ্দেশ্য
করে "আলামতারা"
অর্থাৎ, "আপনি কি দেখেন নাই"
শব্দটি ব্যবহার
করেছেন।
(বিঃদ্রঃ- কুরআনে ৩১-
বার আল্লাহ্
"আলামতারা" অর্থাৎ, "আপনি কি দেখেন নাই"
শব্দটি ব্যবহার
করেছেন) এতে স্পষ্ট
বোঝা যায়
হযরত রাসুল(সাঃ)-সকল
যুগে সকল নবি-রাসুলদের মাঝে ছিলেন, আছেন
এবং থাকবেন।
তাইতো তিনি বলেছেন,
"আমি আদম সন্তানদের
প্রত্যেক যুগের উত্তম
শ্রেণীতে প্রেরিত হয়েছি; অতঃপর ওই
যুগে প্রেরিত
হয়েছি যে যুগে আমি বর্তমানে আছি।"
তাই রাসুল(সাঃ)-হলেন
সৃষ্টি-জগতের
সর্বকালের, সর্ব-শ্রেষ্ঠ মহা-মানব...... ****রাসুল
পাক (সাঃ)-
যে সর্বকালের, সর্ব-
শ্রেষ্ঠ মহা-মানব
তা খ্রিস্টান-
বিধর্মীরা পর্যন্ত অকপটে স্বীকার
করতে বাধ্য
হয়েছেন। খ্রিস্টান ও
পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি:
প্রখ্যাত ইংরেজ
বৈজ্ঞানিক মি. এডওয়ার্ড টিম্বার
প্রৃথিবীর
মহাপুরুষগণের
মধ্যে শ্রেষ্ঠ ১৭ জন
মহাপুরুষের
নাম the faith and Favour পুস্তকে লিপিবদ্ধ
করেছেন।
তন্মধ্যে প্রিয় নবিজীর
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর নাম প্রথমে স্থান পেয়াছে। নোবেল
বিজয়ী চিন্তাবিদ
প্রখ্যাত সাহিত্যিক
জর্জ বার্নার্ডশ
রাখঢাক না করেই
বলে গিয়েছেন, বিশ্ববাসী!
যদি তোমরা নিজেদের
সমস্যা সমাধান
করতে চাও
এবং সর্বাঙ্গীন সুন্দর
জীবন ব্যবস্থা কামনা করো,
তবে বিশ্ব-সংসারের
নিয়ন্ত্রন ভার
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর হাতে ছেড়ে দাও।
বিশিষ্ট ঐতিহাসিক
জোসেফ হেল বলেন,
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এমনই একজন মহান ব্যক্তি ছিলেন,
যাকে না হলে বিশ্ব
অসম্পুর্ন
থেকে যেতো।
তিনি নিজেই নিজের
তুলনা। তাঁর কৃতিত্বময় ইতিহাস মানব জাতির
ইতিহাসে এক সমুজ্জল
অধ্যায়
রচনা করেছে।
আমেরিকার
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে­­ র
ইহুদী প্রফেসর জুল
ম্যাসারমান
বলতে বাধ্য হয়েছেন
যে,
সর্বকালের সর্বশ্র্রেষ্ঠ অনুসরনীয়
ও অনুকরনীয় ব্যক্তিত্ব
হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

★★★প্রচলিত ইসলাম বনাম মোহাম্মাদী ইসলাম আসলে এর সঠিক নাম করন কোনটি ?★★★

★★★প্রচলিত ইসলাম বনাম মোহাম্মাদী ইসলাম
আসলে এর সঠিক নাম করন কোনটি ?★★★

বিশ্বনবী সরওয়ারে কায়েনাত মুফাখ্খারে মওজুদাত হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) মানব জাতির মুক্তির জন্য যে ধর্ম প্রবর্তন করেছেন, তা-ই হলো মোহাম্মাদী ইসলাম। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত আছেঃ-ইসলামের স্তম্ভ হলো পাঁচটিঃ ১/ কালেমা ২/ নামায ৩/ রোজা ৪/হজ্ব ৫/ যাকাত। ( বোখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ পৃষ্টা - ১২) হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ) এর - এ ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ধর্মই হলো ' মোহাম্মাদী ইসলাম '। আদম ( আঃ) থেকে শুরু করে ঈসা ( আঃ) পর্যন্ত অসংখ্য নবি - রাসূল ইসলাম নামক এ শান্তির বার্তা পথ ভোলা মানুষদের কাছে পৌছে দিয়েছেন, এবং মুক্তির পথ সুগম করে মানুষ অনাবিল শান্তি লাভ করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেনঃ-"নিশ্চয় ইসলাম আল্লাহর একমাত্র মনোনিত ধর্ম " ( সূরা আলে ইমরান - ৩: আয়াত: -১৯) অত্র আয়াতে আল্লাহ সকল নবী - রাসূলদের ধর্মকেই ইসলাম বলে অাখ্যায়িত করেছেন। তবে সকলের ধর্মের কর্ম কান্ড এক নয়, অর্থাৎ একেক জনের ধর্মের শরীযত একেক রকম ছিলো। এবং একেক নবীর উম্মতের কলেমাও একেক রকম ছিলো। যেমন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আদম শফিউল্লাহ,- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু নূহ নাবিইয়্যুল্লাহ,- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ, ইত্যাদি। সর্ব শেষে আখেরী নবীর উম্মতের কালেমা হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ( সঃ)। আখেরী নবীর আগমনের মাধ্যমে ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করে ( সূরা আল মাযেদাঃ৫:আয়াত:-৩) বিভিন্ন নবীদের ধর্মের শরীযত ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার কারনে বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীরকারকগন একেক নবীর ধর্মকে বা শরীযতকে একেক নাম করন করেন, যেমন শরীযতে আদম,বা দ্বীনে আদম, দ্বীনে নূহ,দ্বীনে ইব্রাহীম, ও দ্বীনে মোহাম্মাদী। যারই ফল শ্রুতিতে আইন শাস্ত্রে ইসলামী জীবন বিধান Mohamadan Law হিসাবে পৃথিবীময় স্বীকৃতি লাভ করেছে। মানে মোহাম্মদী আইন বা মোহাম্মদী শরীয়ত। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায়,মোহাম্মদী ইসলামের স্বর্ণ যুগ ছিলো ৫৩ বছর। নবীজি ( সঃ) এর নবুয়তী জীবনের ২৩ বছর এবং খোলাফায়ে রাশেদীনদের ৩০ বছর। এ দীর্ঘ সময় ধর্ম মোহাম্মদী ইসলাম নামেই বহুল প্রচলিত ছিলো, কিন্তু উমাইয়া শাসনামল থেকে যখন ইসলামী খেলাফতের নাম পরিবর্তন করে উমাইয়া শাসন হিসাবে আখ্যায়িত করা হলো, তখন থেকে এ ধর্মের নাম 'মোহাম্মদী ইসলাম ' থেকে মোহাম্মদ নাম বাদ দিয়ে শুধু ইসলাম রাখা হয়, এবং তখন থেকেই উম্মতে মোহাম্মদী চক্রান্তের বেড়াজালে পতিত হয়। এবং কান্ডারী বিহীন ইসলাম পালন করে আজ আমরা মোহাম্মদী ইসলাম নাম শুনলে চমকে উঠি। অথচ দুনিয়াতে যত ধর্ম, মতবাদ, মাযহাব, তরিকা, ও যত আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হযেছে তা ঐ সব আদর্শ প্রবর্তকদের নামানুসারেই নাম করন করা হয়েছে, যেমন : প্রথমে হাদিস বিশারদগনদের নামে হাদীসের কিতাবের নাম করন করা, ১ / ইমাম বোখারীর নামে, বোখারী শরীফ, ২/ ইমাম তিরমিজির নামে, তিরমিজি শরীফ, ৩ আবু দাউদ শরীফ, ৫ / মুসলিম শরীফ, ৬ / ইবনে মাজা শরীফ, ইত্যাদি ইত্যাদি। তেমনি ভাবে তেমনি মাজহাবের ইমামদের নামেও স্বীয মাজহাবের নামকরন করা হয়, যেমন: ১/ হানাফী ২/ শাফেয়ী ৩/ মালেকী ৪/ হাম্বলী। তেমনি ভাবে, তরিকার ক্ষেত্রেও, ১/ ক্বাদরীয়া ২ / চিশতীয়া ৩ / নক্শবন্দীয়া ৪/ মোজাদ্দেদীযা। ইত্যাদি। বাংলাদেশেও ১/ জামায়েত ইসলাম ২ /হেফাজত ইসলাম, তাবলিগ জামাত, ৪ / দাওয়াতে ইসলাম,ইত্যাদি নামে ধর্মকে বিভক্ত করা হয়। কিন্ত আজব ব্যাপার,,, যখনই" মোহাম্মাদী ইসলাম" বলাহয় তখনি আমাদের তা বুঝতে ও চিনতে খুবই কষ্ট হয়। এজন্য সূফী সম্রাট ( মাঃ আঃ) হুজুর বলেন: যিনি আমাদের শান্তির ধর্ম " ইসলাম" দিলেন তার নামে ধর্মের নামকরন ( মোহাম্মদী ইসলাম) করার অযৌক্তিকতা কোথায়? কারন উপরে উল্ল্যেখিত সকল সপ্রদায় তাদের নিজ নিজ নামে তাদের বিধান বা আইনের নাম করন করেছেন।

এরিস্টটল

এরিস্টটল

ছোট্ট একটি গ্রিক কলোনিতে জন্মগ্রহণ করেন এরিস্টটল (৩৮৪-৩২২ বিসি)। চিকিৎসক পিতা আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের দাদার রাজকীয় চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন। যদিও তিনি প্লেটোর ছাত্র ছিলেন কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই প্লেটোর সাথে তার মতবিরোধ আছে। তিনি চার বছর আলেকজান্ডারের শিক্ষকতা করেন। এরপর ৩৩৪ সালে এথেন্সে ফিরে গিয়ে লাইসিয়াম প্রতিষ্ঠা করেন।
এরিস্টটল দার্শনিক অপেক্ষা বিজ্ঞানী হিসেবে বেশি পরিচিত। প্রকৃতির প্রতি ছিল তার গভীর আগ্রহ। তিনিই প্রথম প্রাণী ও উদ্ভিদ এই দুটি শ্রেণীতে জীবজগতকে বিভক্ত করেন। তিনি প্রাণীর অঙ্গসংস্থানবিদ্যা ও আচরণ সম্পর্কে গবেষণা করেছেন। দর্শন সম্পর্কিত প্রথম বই এরিস্টটল রচনা করেন। ল্যাটিন ভাষায় এই বইটি ‘ডি অ্যানিমা’ (De Anima) নামে পরিচিত।


প্লেটোর মতো তিনিও তিন ধরনের আত্মার কথা বলেন। যদিও দুজনের মতবাদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। তিন ধরনের আত্মার মধ্যে একটি উদ্ভিদ প্রাণ। দ্বিতীয়টি প্রাণী, যার মধ্যে মৌলিক চাহিদা, আনন্দ, কষ্ট এই অনুভূতিগুলো থাকবে। সর্বশেষ হচ্ছে মানবিক আত্মা। যেখানে চাহিদার আগে কারণ অগ্রগণ্য।

জ্ঞান চর্চার জন্ম দর্শন থেকেই। চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যে যে দূরত্ব তা ব্যাখ্যা করে দর্শন। মানুষের চাহিদার কোনো শেষ নেই কিন্তু দর্শন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে চাহিদার পরিধি। দর্শন বদলে দিতে পারে জীবনের গতি, আগ্রহের দিক। তৈরি করতে পারে কালের মহামানব। সক্রেটিস, এরিস্টটল, প্লেটো এরাই তার প্রমাণ।

 সক্রেটিস

সক্রেটিস ছিলেন সত্যের পূজারি। জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত তিনি সত্য সাধনা করে গেছেন। তিনি বেশ কিছু মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। এর মধ্যে একটি মেনো (Meno)। মেনো হচ্ছে অনন্ত আত্মার সাথে মিলন সম্পর্কিত মতবাদ। সক্রেটিসের মতে, অনন্ত আত্মা গভীর জ্ঞানের অধিকারী। কিন্তু প্রতিবার পুনর্জন্ম হওয়ার সাথে সাথে দেহের সাথে অনন্ত আত্মার বিচ্ছেদ ঘটে, একই সাথে বিচ্ছেদ ঘটে জ্ঞানেরও। তাই জ্ঞান অন্বেষণ না করে অনন্ত আত্মার জ্ঞান মনে করার চেষ্টা করাই শ্রেয়।

 সক্রেটি-এর সাথে দেখা হওয়ার দিনব্যাপী খেলা চলমান গ্রিসের সমৃদ্ধশালী রাজ্য রাষ্ট্রের ডাক্তার আরও বেশি করে হেমলকের জন্মভূমি হয়ে গেলেন তার ছাত্রদের প্রতিবেদনে তার বক্তব্য রাখতে হবে, প্রতিবেদনের সাথে তার প্রতিবেদনের সত্যতা পাওয়া যাবে না সত্যই এই পূজারীর ইতিহাস তৈরি করা হয়েছে বিস্তৃত ঘটনাটি ঘটে

 
আছেন কোথায় স্বর্গপুরে
কেউ নাহি তার ভেধ জানে
কেন জিজ্ঞাসিলে খোদার কথা
দেখায় আসমানে।।
পৃথিবী গোলাকার শুনি
অহর্নিশি ঘোরে আপনি।
তাইতে হয় দিন-রজনী
জ্ঞানী গুনী তাই মানে।।
একদিকেতে নিশি হলে
অন্যদিকে দিবা বলে
আকাশতো দেখে সকলে
খোদা দেখে কয়জনে।।
আপন ঘরে কে কথা কয়
না জেনে আসমানে তাকায়
লালন বলে কেবা কোথায়
বুঝিবে দিব্যজ্ঞানে।।

Image result for লালন

লালনগীতি

রাঙ্গা চরণ যেন ভুলিনে
গুরু সুভাব দাও আমার মনে।।
তুমি নির্দয় যাহার প্রতি
সদাই ঘটে তার কুমতি।
তুমি মনরথের হংসরথি
যথা লও যাই সেখানে।।

তুমি মনের মন তরী
তুমি তন্ত্রের তন্ত্রী।
তুমি যন্ত্রের যন্ত্রী
না বাজাও বাজবে কেনে।।
আমার জন্ম অন্ধ মন নয়ন
তুমি বৈদ্য সচেতন।
চরণ দেখবো আশায় কয় লালন
জ্ঞানঅঞ্জন দাও মোর নয়নে।।


Related image
As we study in a school in order to purify our knowledge regarding outer world, the same way we're to go to a Spiritual Guide to purify our inner-self.We need to go in contact with a Spiritual Guide to have the learning of spiritual world.If you approach learning about soul,then you’ll find peace in worship.



জাহের শুদ্ধ করার জন্য আমরা যেমন স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করি। তেমনি বাতেন শুদ্ধ করার জন্য মোর্শেদের কাছে যেতে হয়। আত্মার বিদ্যা শিক্ষা করার জন্য মোর্শেদের কাছে যেতে হয়। আত্মা সম্পর্কে অগ্রসর হলে আপনি ইবাদতে শান্তি পাবেন।

 Image result for আত্মার

আল্লাহর দেওয়া পুরস্কার পূর্নিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগী

আজ ১৯/০৮/২০১৬, শুক্রবার। 
দেওয়ানবাগ শরীফের বাবে রহমতে আয়োজিত সাপ্তাহিক বিশেষ আশেকে রাসূল (সঃ) মাহফিল ও ‘আল্লাহর দেয়া পুরস্কার ॥ পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগী’ উপলক্ষে মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, যুগের ইমাম, আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভকারী, হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব লাভকারী, আল্লাহ্র দেয়া পুরস্কার পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি, সূফী সম্রাট হযরত মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাদ্দাজিল্লুহুল আলী) হুজুর কেব্লাজান আশেকে রাসূল ও মুক্তিকামী মানুষের উদ্দেশ্যে যে বাণী মোবারক প্রদান করেন তার সংকলন]
=================================
নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লিয়ালা রাসূলিহিল কারিম। সম্মানিত আশেকে রাসূলেরা আপনারা আমার সালাম গ্রহণ করুন। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
সম্মানিত আশেকে রাসূলেরা, আজ আল্লাহর দেয়াা পুরস্কার পুনিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগী অনুষ্ঠানে আমরা সালাতুস শুকুর নামাজ আদায় করেছি। হযরত রাসুল (সঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন শুভ সংবাদ পেলে শুকরিয়া আদায়ের জন্য দুই রাকাত নামাজ পড়তেন। পূর্নিমার চাঁদের অনুষ্ঠানটা কি আমাদের জন্য একটা শুভসংবাদ নয়। আমরা প্রতি মাসে পূর্নিমার চাঁদ আসলে সালাতুস শুকুরের দুই রাকাত নামাজ আদায় করি।
সম্মানিত আশেকে রাসূলেরা, আমাদের জীবনে কিছু ঘটনা আছে যেগুলোর সাথে অন্যদের মিল নেই। ফলে অনেকে এটার বিরোধীতা শুরু করে দেয়, না জেনে না বুঝে। সংস্কার করতে গিয়ে আমারা যখন ধর্মে প্রবিষ্ট ভুলগুলো সংশোধন করেছি তখন একটা শ্রেণী আমাদের বিরোধিতা শুরু করে। পরে অবশ্য সেটা মেনে নিতে বাধ্য হয়। যখন কোন ঘটনা ঘটে তখন তার ব্যাখ্যা আমাদের দিতে হয়, বলতে হয়। এটা আল্লাহর বিভিন্ন লিলা-খেলা। যেভাবে তিনি তাঁর ধর্ম প্রচার করতে চান ধর্ম সেইভবেই প্রচারিত হবে।
সম্মানিত আশেকে রাসূলেরা, হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে সকল মানুষই আল্লাহকে পাওয়ার জন্য নবী-রাসূলদের কাছে গিয়েছে। পরবর্তীতে অলী-আল্লাহদের কাছে গেছে। আমাদের বাংলাদেশে অলী-আল্লাহরা এসে আমাদের পূর্ব পুরুষদের মুসলমান বানিয়েছেন। গ্রাম বাংলায় এখনো জমিনের পুরনো দলিলের মধ্যে লেখা দেখতে পাবেন শ্রী শ্রী আব্দুল করিম, শ্রী শ্রী আব্দুল রহিম। এতে করে বুঝা যায় আমরা অন্য ধর্ম থেকে মুসলমান হয়েছি। এদেশের মানুষ অলী-আল্লাহদের মাধ্যমে ই ইসলাম গ্রহণ করেছে, তারপর আজকের এই অবস্থায় এসেছে।
সম্মানিত আশেকে রাসূলেরা, হযরত রাসুল (সঃ)-এর জামানায় যারা ধর্ম গ্রহণ করেছিল তারা রাসুল এর অনুসরন করেছেন। হযরত রাসূল (সঃ)-এর কথাগুলোই পরবর্তীতে হাদীস হিসেবে সংকলিত হয়েছে।
সম্মানিত আশেকে রাসূলেরা, ইসলাম শান্তির ধর্ম। শান্তির ইসলাম দেহে থাকে না আত্মায় থাকে। অন্তর দ্বারা শান্তিপেতে হয়। সঠিক ইসলাম পালন করলে আপনার হৃদয়টা প্রশান্তি লাভ করবে। কোন টেনশন আপনাকে স্পর্শ করবে না। আপনি যে রাস্তায় চলা-ফেরা করেন কোন টেনশন লাগে। কিন্তু অন্যদের দেখেন তাদের কাছে কেমন লাগে। এ শান্তিটা তো আত্মা থেকে আসে। আর এই শান্তি আনতে হলে শান্তির চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির কাছে যেতে হয়। নবী-রাসুলগন যারা মূর্তি পুজা করতো এদেরকে শান্তির চরিত্রের শিক্ষা দিয়েছেন। এই শান্তির চরিত্র লাভ করার পরই তারা শান্তির চরিত্রে চরিত্রবান হয়েছে। সুন্দর চরিত্র কিতাব পড়ে হয় না, চরিত্রবান ব্যক্তির প্রয়োজন। নবুয়াতের যুগে নবী-রাসূলগণ মানুষকে চরিত্রবান করেছেন। আর বেলায়েতের যুগে আওলিয়ায়ে কেরাম মানুষকে চরিত্রবান করছে। নিজের দোষ ক্রটি দূর করতে না পারলে সে চরিত্রবান হবে কি করে। এখন আপনাদের আশেকে রাসূল এর সংখ্যা অনেক। সবাইকে চেনা কঠিন। সুতরাং নিয়মিত আশেকে রাসুল এর চরিত্র অর্জন করতে চেষ্টা করেন।
সম্মানিত আশেকে রাসূলেরা, কিছু কিছু লোক আছে আশেকে রাসূল এর কথা আমরা যা আলোচনা করি সেটা শুনে। কিন্তুশোনা, বলা, আর আমল করা এক নয়। একটা শ্রেণী আছে যারা মানুষকে প্রতারিত করতে চেষ্টা করে। অলী-আল্লাহর দরবারে খারাপ ভালো দুই শ্রেনীর মানুষই আসে। সাধনা করতে করতে সেই খারাপ মানুষটা ভাল হয়ে যা। কিন্তুসাধনা করত হবে। আমাদের এখানে বাইরে থেকে বিভিন্নলোক আসে আমরা তরিকার বিধান অনুযায়ী সবক দিয়ে দেই। কিন্তু কিছু লোক ওয়াজিফা নিয়ে আলমারীতে রেখে দেয়। এখন স্কুলে ভর্তি হলেই কি মানুষ শিক্ষিত হয়ে যায়? তাদের কি নিয়মিত পড়ালেখা করতে হবে না? কিছু কিছুলোক আমাদেরও আছে বিপদগামী হয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলে। আপনারা যারা আপনাদের দয়ার মা’র রওজায় যান তাদের কাছে কি খারাপ লাগে, অশান্তিলাগে? যাদের কাছে অশান্তি লাগে খারপা লাগে তারা তো সঠিক পথে নেই। এই সব বিষয় নিয়ে একটা শ্রেনী ফেইসবুকে উল্টা-পাল্টা কথা লিখে। কিন্ত আমার সামনে আসে না। এরা মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলে, চালউ তোলে মিথ্যা কথা বলে। আশেকে রাসুল দবি করে কিন্তু আমার সাথে দেখা করে না। আমি এগুলোকে বের করে দিয়েছি। কর্মদোষেই এরা দরবার থেকে বিতারিত। আমার মোর্শেদের দরবারাও আমি এমন দেখেছি কর্ম দোষের কারণে দরবার থেকে বের হয়ে গেছে। এইগুলো আল্লাহর শক্র, আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর শত্রু, আমাদের শত্রু। এরা বিপদগামী। এরা শয়তানের চেয়ে খারাপ। এরা মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে। আমি আপনাদের কাছে আগেও বলেছি এরা বিদেশে পাঠানোর কথা বলে আপনাদের কাছ থেকে টাকা নেয়। সেই টাকা নিয়ে আত্মসাত করে। সুতরাং এগুলোকে প্রশ্রয় দিবেন না। এগুলো সকল নবী-রাসূল এর যুগে মানুষ শয়তান হিসেবে কাজ করেছে। এর াই মানুষ শয়তান। এরাই বিভ্রান্তি সৃস্টি করে। হযরত রাসুল (সঃ)-এর যুগে এমন মানুষ শয়তান ছিল।
সম্মানিত আশেকে রাসূলেরা, সমাজের একটা শ্রেনী বলে হযরত রাসুল (সঃ) ৭০ তালিওয়ালা জামা পড়তেন। এটা রাসুল (সঃ)-এর যুগে কিছু মানুষ শয়তান প্রচার করেছিল এখনো কিছু মানুষ শয়তান এটাই প্রচার করছে। আমি আপনাদের ভিডিও সিডির মাধ্যমে দেখিয়েছি রাসুল (সঃ) স্বর্ণের সিংহাসনে বসতেন। হযরত রাসূল (সঃ) কুলকায়েনাতের রহমত। রাসূল (সঃ) গরীব ছিলেন, ৭০ তালিওয়ালা জামা পড়তেন এগুলো মিথ্যা কথা। চক্রান্তকারী সবযুগে ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। এদের থেকে আপনারা সাবধান থাকবেন।
সম্মানিত আশেকে রাসূলেরা, ময়ময়সিংহের ত্রিশালের বাবে বরকতে আমি আমার শাশুড়ির রওজা শরীফ বানিয়েছি কারো কাছ থেকে কোন টাকা নিয়েছি? আমার স্ত্রী রওজা আমি বানাবো আমি কি কারো কাছে টাকা পয়সা চেয়েছি। যারা আপনাদের কাছে রওজার নাম করে টাকা চায় তারা প্রতারক। আমি আপনাদের এই বিষয়গুলো বলার কারণ হলো ফেইসবুকে এই প্রতারক চক্র মিথ্যা অপপ্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে আপনারা এদের কথা বিশ্বাস করবেন না। আপনাদের সাবধান করছি আপনারা যাতে করে এদের ধোঁকায় না পড়েন, এদের মায়া কান্না দেখে। আপনি সিরাতুল মোস্তাকিমে আছেন, তাই আপনি সরল বিশ্বাসী। এরা আপনাদের দুর্বল স্থানে আঘাত করে প্রতারিত করতে চেষ্টা করবে আপনারা সতর্ক থাকেবেন।
সম্মানিত আশেকে রাসূলেরা, আপনারা পূর্ণিমার চাঁদের অনুষ্ঠান করে শান্তি পান? আমরা শুকরিয়া আদায় করে দুই রাকতা নামাজ পড়ি। আমাদের নামে একটা বদনাম আছে আমারা মিলাদে কিয়ামের সময় দাঁড়িয়ে ‘ইয়া নবী সালামুআলাইকুর’ স্থলে মিলাদে ‘ইয়া ইমাম সালামুআলাইকা’ বলি। ঘটনা হলো কেউ এম এ পাশ করলে তাকে কেউ বলে কি- মেট্রিক পাশ অথবা আই এ পাশ? আল্লাহ রাসূল (সঃ)-কে প্রথমে নবী বলেছেন। এরপর রিসালাত যখন আসছে তখন রাসূল (সঃ)-কে বলেছেন- হে রাসুল। যখন তিনি ইমামুল মুরসালিন হলেন অর্থাৎ উনি যখন মেরাজে যান তখন সেখানে বায়তুল মোকাদ্দাসে তিনি সকল নবী-রাসুলদের ইমাম হয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়িয়ে ছিলেন। ঐখান থেকে তিনি ‘ইমামুল মুরসালিন’। সকল নবী-রাসূলগণের ইমাম। আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল (সঃ)-এর এটা সর্বশেষ র‌্যাংক। তখন আমরা বলেছি- ‘ইয়া ইমাম সালামুআলাইকা।
সম্মানিত আশেকে রাসূলেরা, আমি কোরআন দিয়েই প্রমান করেছি আল্লাহর আকার আছে। আমি তাফসীরে ‘সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ লিখেছি। কোরআনের আয়াত দিয়েই প্রমান করেছি আল্লাহর আকার আছে। এলমে তাসাউফ, এলমে মারেফত। সকল নবী-রাসুল গন এই বিদ্যাটা চর্চা করেই আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করেছেন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) থেকে যে আমাদের ধর্ম এসেছে এটা আমরাও জানতাম না। এখন দেখছি সকল নবী-রাসুল গন এক সুতায় গাঁথা। মাদ্রাসায় তো আমিও পড়েছি কিন্তু সিলেবাসে যা আছে শুধু তাই পড়েছি। কোরআনের প্রতিটি আয়াতের গবেষণা করার সুযোগ আছে কি আমাদের। আমরা এখন তাফসীর লিখতে গিয়ে প্রতিদিনই নতুন নতুন বিষয়ের সম্মুখিন হচ্ছি।
সম্মানিত আশেকে রাসূলেরা, সবই তো বিজ্ঞান। এক বিজ্ঞান পড়ে ডাক্তার হলেন। আরেক বিজ্ঞান পড়ে ইঞ্জিনিয়ার হলেন। আরেক বিজ্ঞান পড়ে মহাকাশ বিজ্ঞানী হলেন। তাসাউফের বিদ্যা দিয়ে সকল নবী-রাসূল গণ আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করেছেন। হযরত নূহ (আঃ) কিভাবে নৌকা বানাবেন আল্লাহ তা শিখিয়ে দিয়েছেন। হযরত দাউদ (আঃ) লোহাকে ব্যবহার করে অস্ত্র তৈরি করেছেন। আল্লাহ তাদের কাছে বসে থেকে শিক্ষা দিয়েছেন।
সম্মানিত আশেকে রাসূলেরা, আমাদের সমাজে প্রচলন আছ জিব্রাইল রাসুল (সঃ)-এর শিক্ষক। জিব্রাইল কি আদম (আঃ) সেজদা করেনি? তাহলে সে রাসূল এর শিক্ষক হলো কি করে? আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে রাসূল! আমি আপনাকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছি।’ তাহলে হযরত রাসূল (সঃ)-কে জিব্রাইল কিভাবে কোরআন শিক্ষা দিলো? রাসুল (সঃ) বলেন, ‘আমি শিক্ষক রূপে প্রেরিত হয়েছি।’ যিনি শিক্ষক হিসাবে জন্ম হলেন তিনি কি করে জিব্রাইলের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। আমরা এই বিষয়গুলো তাফসীরে লিখছি। আপনারা তাফসীর পড়লে জানতে পারবেন। আমাদে জানা দরকার আল্লাহ কি বলেছেন এবং রাসুল কি বলেছেন। আগে আল্লাহ সম্পর্কে জানেন তারপর মানেন। না জেনে মানার কোন মূল্য নেই। আগে চেষ্টা করেন ক্বালব থেকে শয়তান তাড়াতে। হযরত ওমর (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর কাছে গিয়ে বলেন, ইয়া রাসূল্লালাহ! আমি নামাজে দাঁড়ালে দুনিয়ার কথা মনে আসে। তখন রাসূল (সঃ) তার বুকে হাত রাখলেন। এরপর বললেন এখন। তখন ওমর (রাঃ) বললেন, এখন শুধু আমার নিজের কথা মনে আসে। রাসূল (সঃ) আবার তার বুকে হাত রাখলেন এবং এরপর জিজ্ঞাসা করলেন এখন। তখন ওমর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল্লালাহ (সঃ) এখন আল্লাহ ছাড়া আর কিছুই মনে আসে না। এভাবেই আল্লাহর রাসূল (সঃ) তাসাউফের শিক্ষা দিয়েছেন।
সম্মানিত আশেকে রাসূলেরা, আমাদের তাফসীরটা মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। এতে সব কথা পাবেন যা আগে কখানো শুনেননি। এগুলো আমাদের জানার প্রয়োজন আছে। জানেন তারপর পালন করেন। আমরা আসছি দরবারে ঈমানদার হওয়ার জন্য, মুনেন হওয়ার জন্য, আল্লাহকে পাওয়ার জন্য, হযরত রাসূল (সঃ)-কে পাওয়ার জন্য। আমি কতটুকু আল্লাহকে পেলাম, রাসূল (সঃ)-কে পেলাম, কতটুকু ঈমানদার হতে পারলাম এগুলো আমাদের চিন্তা করা দরকার। আমার মোর্শেদের দরবারে মোর্শেদের পর আমার স্থান ছিল। আমিই সেখানে সবক দিতাম। ১২ বছর কাজ করেছি। আমার আল্লাহ আমাকে দয়া করেছেন। এখনো যদি কেউ আমরা মোর্শেদের কথা এসে আমাকে বলে যে, উনি এই বিষয়ে এই কথা বলেছেন। আমি বলে দিব কোনটা উনার কথা আর কোনটা আপনি সংযোগ করেছেন। তরিকাটা হলো সহবতের । তরিকা কাছে থেকে শিখতে হয় তাহলে ভুল কম হয়। মানুষ শয়তান থেকে সাবধান থাকেন কারণ মানুষ শয়তানই মানুষকে বেশি বিপথগামী করে
আসুন মহান আল্লাহর সাহায্য চাই। তিনি যেন দয়া করেন আমাদের কবুল করে নেন। আমিন।