ইমাম আলি (আঃ)
প্রশ্ন -
যদি ইমাম আলি (আঃ) ই আল্লাহ কতৃক মনোনীত ও রাসুল (সাঃ) ঘোষিত বৈধ খলীফা / ইমাম / উত্তরসূরী হয়ে থাকেন , তাহলে কেন নিজের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি মহানবী (সাঃ) এর ওফাতের পরে তাঁর স্থলে বসে থাকা খলীফাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেননি / অস্ত্রধারণ করেননি / যুদ্ধ ঘোষণা করেননি ?
যদি ইমাম আলি (আঃ) ই আল্লাহ কতৃক মনোনীত ও রাসুল (সাঃ) ঘোষিত বৈধ খলীফা / ইমাম / উত্তরসূরী হয়ে থাকেন , তাহলে কেন নিজের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি মহানবী (সাঃ) এর ওফাতের পরে তাঁর স্থলে বসে থাকা খলীফাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেননি / অস্ত্রধারণ করেননি / যুদ্ধ ঘোষণা করেননি ?
জবাব -
নবীকরীম (সাঃ) এর উত্তরাধিকারী / ইমাম / খলীফা কেবলমাত্র ইসলামি সাম্রাজ্যের অধিপতি হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় । যদিও হযরত আবুবকর - ওমর ইসলামি সাম্রাজ্যের অধিপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তথাপিও ইমাম আলি (আঃ) তাঁর বৈধ খেলাফাত / ইমামাতের পদ থেকে বঞ্চিত ছিলেন না ।
কিন্ত এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে , কেন ইমাম আলি (আঃ) তদানীন্তন খলীফাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেননি ?
এই প্রশ্নের অনেকগুলি কারন আছে ।
তার মধ্য থেকে এখানে কতকগুলি দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ্ ।
কারন -
আমরা পবিত্র কোরআন থেকে পেতে পারি । যখন হযরত মুসা নবী (আঃ) ৪০ রাতের জন্য বনী ইসরায়েলদের থেকে দূরে চলে গিয়েছিলেন তখন তিনি নিজ ভাই হযরত হারুন (আঃ) কে তাঁর উত্তরাধিকারী নিয়োগ করে যান ।
কিন্ত মুসা (আঃ) এর বিদায় নেওয়ার সাথে সাথে জনগণ তাঁর আদেশ-উপদেশ ভুলে বসে এবং সত্যপথ হতে বিচ্যুত হয়ে পড়ে ।
যাইহোক , এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত মুসা (আঃ) ও তাঁর উত্তরাধিকারীর মধ্যকার কথোপকথন আমরা পবিত্র কোরআন হতে যা জানতে পারি -
" --- মূসা বললেন , হে হারুন , তুমি যখন তাদেরকে পথ ভ্রষ্ট হতে দেখলে , তখন তোমাকে কিসে নিবৃত্ত করল ? আমার পদাঙ্ক অনুসরণ করা থেকে ? তবে তুমি কি আমার আদেশ অমান্য করেছ ? তিনি বললেন , হে আমার জননী-তনয় , আমার শ্মশ্রু ও মাথার চুল ধরে আকর্ষণ কর না , আমি আশঙ্কা করলাম যে , তুমি বলবে , তুমি বনী-ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ এবং আমার কথা স্মরণে রাখনি --- ।"
সূরা - ত্বাহা , আয়াত ৯২-৯৪ ।
উপরোল্লিখিত আয়াতগুলি থেকে প্রতীয়মান হয় যে , হযরত হারুন (আঃ) কেন পথভ্রষ্ট , সত্যবিচ্যুত জনগণের বিরুদ্ধে সশস্ত্র কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি ।
কারন এটাই ছিল যে , যদি হযরত হারুন (আঃ) অস্ত্রধারণ করতেন তাহলে বনী ইসরায়েলের মধ্যে পারস্পরিক বিভেদ-দ্বন্দ্ব-অনৈক্য-হানাহানি ঘটত । আর এই প্রকাশ্য ফেতনার দরুণ সকলেই তাঁকে অভিযুক্ত করত ।
প্রসিদ্ধ হাদিস অনুযায়ী মহানবী মুহাম্মাাদ (সাঃ) এর নিকট হযরত আলী (আঃ) স্থান ঠিক ঐরূপ , যেরূপ মুসা (আঃ) এর নিকট তাঁর ভাই হারুনের (আঃ) স্থান ছিল , শুধুমাত্র ব্যতিক্রম এটাই যে রাসুল (সাঃ) এর পর আর কোন নবী রাসুল আসবে না । এখান থেকে অনুমান করতে অসুবিধা হয় না যে , কেন সশস্ত্র কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে ইমাম আলি (আঃ) সম্পূর্ন নীরব ছিলেন ?
কারন তিনি জানতেন যে , তিনি যদি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করতেন তাহলে দ্বীনে ইসলাম এবং নব্যগঠিত ইসলামি সাম্রাজ্য এক নিমেষেই ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়ে যেত ।
ঐযুগের বহিঃশত্রুরা ইসলামকে ক্ষতিসাধন করার জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনাতে লিপ্ত ছিল ।
এমতাবস্থায় , তরবারি উন্মোচনের অর্থ মুসলমানদের মধ্যে ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধে বেঁধে যাওয়া ।
সদ্য ইসলাম কবুল করা অনেকেও এই সুযোগে যুদ্ধে নিহত নিজ পরিজনের প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হত । সেক্ষেত্রে মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে বিভেদ , দ্বন্দ্ব , ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা প্রকাশ্যে ভয়ঙ্কর রূপ ধারন করত । ফলে মুসলমানেরা দূর্বল হয়ে পড়ত । আর এই দূর্বলতার সুযোগে ফাঁদ পেতে থাকা বিজাতীয় শত্রুরা খুব সহজেই ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে ধ্যুলিস্যাৎ করে দিত ।
ইতিহাস সাক্ষী , মহানবী (সাঃ) এর পরে সবচেয়ে বেশী যিনি ইসলামের খেদমত করেছেন তিনি হলেন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) ।
আলী (আঃ) এর তলোয়ারের নিকট ইসলাম আজও ঋণী । এটা বলা মোটেও অতিরঞ্জিত করা হবে না যে , ইসলামের চারাগাছটি রোপণ করা হয়েছিল হযরত আলী (আঃ) এর গৃহেই ।
হযরত আলী (আঃ) এর পিতা যরত আবু তালিব (আঃ) ইসলাম প্রচার ও প্রসারে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করে যাচ্ছিলেন । ইসলামেরই স্বার্থে ইমাম আলী (আঃ) বহুকষ্টে নির্বাসনের কঠিন জীবনগুলি অতিবাহিত করেছেন । ক্ষুধার্ত থেকেছেন কখনও বা ঘাস / গাছের পাতা খেয়ে নিজের ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করেছেন । তারপর নিজের পুরো জীবনটাকেই ইসলামের স্বার্থে উৎসর্গ করে দিয়েছেন ।
অতঃপর মহানবী (সাঃ) এর ওফাতের পরে তাঁর এই ধৈর্যধারণের মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে কঠিন ধ্বংসাত্মক পরিণাম থেকে বাঁচিয়েছেন ।
এখানে এই কাহিনীটির উল্লেখ করা মনে হয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না -
একই শিশুর দাবী নিয়ে যখন দুইজন নারীর মধ্যে কলহ বেঁধেছিল এবং কোনমতেই সমাধান করা যাচ্ছিল না যে , আসলেই শিশুটি কার ।
তখন জল্লাদকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তীক্ষ্ণ তলোয়ার দিয়ে শিশুটিকে দুটুকরো করে দিতে ।
তখন সেই শিশুর প্রকৃত মা কেঁদে উঠেছিল এবং আর্তনাদের সুরে এই কাজ হতে বিরত থাকতে বলেছিল । (প্রকৃত মা পেয়ে গেলেন)
প্রকৃত মা শিশুটিকে অন্যের / বিজাতীয় লোকের নিকট দিয়ে দিতে রাজি কিন্ত শিশুটির কোন ক্ষতি দেখতে নারাজ ।
এই ঘটনা , ইমাম আলি (আঃ) এর ঐসময়ের ঘটনার সাথে সামঞ্জস্যশীল ।
প্রকৃতই তিনি চান নি কষ্ট করে তিলে তিলে গড়ে ওঠা ইসলাম কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক । অন্যথায় জনগণ আজও অবধি তাঁকে এই বলে অভিযোগ / দোষারোপ করত যে , নিজের ক্ষমতা দখলের জন্য হযরত আলী (আঃ) ইসলামকে ক্ষতিসাধন / ধ্বংস করে দিয়েছেন । (নাউজুবিল্লাহ)
তাছাড়া ইমাম আলি (আঃ) মহানবী (সা) কর্তৃক বিশেষভাবে নির্দেশিত ছিলেন , ইসলামের স্বার্থে ঐসব ব্যক্তিদের বিরুদ্বে যুদ্ধ না করতে ।
এই ধরনের নির্দেশ ও উপদেশ মহানবী (সাঃ) তাঁর কতিপয় সাহাবাদেরকেও দিয়েছেন । মহানবী (সাঃ) এর সাবধান বাণী ছিল এবিষয়ে ।
এখানে আর একটি বিষয় উল্লেখ্য , অবৈধ ঐসব খলীফারা প্রকাশ্যে ইসলামের বিরোধিতা করেনি যেমনটি ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া (লানত) করত ।
সুতরাং ইমাম আলি (আঃ) নিজ ধৈর্যশক্তির কঠিন পরীক্ষা দিলেন ।
এবং সেইসাথে নবী (সাঃ) এর প্রকৃত খলীফা / উত্তরাধিকারী হিসাবে নিজ দায়িত্ব পালন করে চললেন । যদিও মহানবী (সাঃ) এর ওফাতের পর থেকে ২৪ বছর পর্যন্ত ইসলামি সাম্রাজ্যের ক্ষমতা তাঁর নিকট থেকে অবৈধ ভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল , তথাপিও বৈধ খলীফা / উত্তরাধিকারী হিসাবে তাঁর দায়িত্ব যথারীতি পালন করে যাচ্ছিলেন ।
ইহার পরেও কেউ যদি পুনরায় এই যুক্তি প্রদান করেন যে , ইমাম আলি (আঃ) প্রথম তিন খলীফার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করেননি , সুতরাং প্রথম তিন খলীফা অবৈধ ছিলেন না বরং বৈধ ছিলেন ।
তাদেরকে আমি পাল্টা প্রশ্ন করব , যদি ইমাম আলি (আঃ) প্রথম তিন খলীফার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন তাহলে কি আপনারা তাদেরকে অবৈধ বলে মানতে পারতেন বা মানতেন ?
আপনাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই , ইমাম আলি (আঃ) কে মূয়াবীয়া এবং উম্মুল মোমেনীন মা আয়েশা - তালহা - যুবাইর সহ কতিপয় স্বনামধন্য সাহাবীর (!) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়েছিল ।
আপনারা কি ইমাম আলি (আঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এইসব সাহাবীদেরকে (!) ভ্রান্ত বা অবৈধ বলতে পারেন ??
পুনশ্চ , কারও মনে হয়ত একটি সংশয় থেকেই যেতে পারে , হযরত আলি (আঃ) মুসলমানদের মধ্যকার পারস্পরিক যুদ্ধের ঘোর বিরোধী ছিলেন ।
তাহলে কেন তিনি মূয়াবীয়া এবং মা আয়েশা প্রমুখের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন ?
আমি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে , ইমাম আলি (আঃ) ঐ যুদ্ধগুলি শুরু করেননি ।
ইতিহাস সাক্ষী যে , মূয়াবীয়া , মা আয়েশা প্রমুখ ইমাম আলি (আঃ) এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পদক্ষেপ গ্রহণ করে ।
ইতিহাস আরও সাক্ষী যে , যুদ্ধের সূচনা মা আয়েশা ও মূয়াবীয়ার তরফ থেকেই হয়েছিল ।
ইমাম আলী (আঃ) কে শুধু বাধ্য হয়েই মোকাবিলা করতে হয়েছিল ।
হাদীস শরিফে আল্লাহর নবী ফরমান
"আনা মাদিনাতুল এলমে ওয়াআলিও
বাবুহা"
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। রাসূল (দঃ) ইরশাদ করেছেনঃ
আমি হলাম ইলমের শহর। আর আলী
(রাঃ) হল এর দরজা।
সুতরাং যে ব্যক্তি শহরে প্রবেশ করতে
চায়, সে যেন দরজা দিয়ে আসে।
{মুস্তাদরাকে হাকেম ..... {সহীহ
বুখারী, হাদিস নং-৬৯১৯, সুনানে আবু
দাউদ, হাদিস নং-৩৫৭৬, সহীহ মুসলিম,
হাদিস নং-৪৫৮৪}.
** আজ একই ভাবে মোহাম্মদী ইসলামে ডঃসৈ কুদরত এ খোদা মাঃআঃ তিনার " মহান মোর্শেদ " কে জগতবাসির কাছে প্রতিষ্ঠিত করা ও তিনার দাওয়াত পৌছানোর জন্য ধর্যের সাথে ,সামাজিক ও যান্ত্রিক আঘাত এর পর আঘাত স্বয্য করে, অঘাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
আশা করি যে , দীর্ঘ দিনের লালিত একটি বিভ্রান্তির রহস্য জাল থেকে পরিস্কার হতে পেরেছেন ।
সকলেই ভাল ও সুস্থ থাকুন
সকলেই ভাল ও সুস্থ থাকুন
No comments:
Post a Comment