চমৎকারভাবে গুছিয়ে রেফারেন্সসহ তথ্যনির্ভর এই পর্যবেক্ষণটি লিখেছেন Hasan Murshed ভাই। পড়ুন, জানুন,ছড়িয়ে দিন যতটা সম্ভব!
এক।
'বঙ্গবন্ধু ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য বাকশাল করেছিলেন- তাই তাকে হত্যা করা হয়েছিলো, এই প্রচারণা কতোটুকু সত্য?'
'বঙ্গবন্ধু ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য বাকশাল করেছিলেন- তাই তাকে হত্যা করা হয়েছিলো, এই প্রচারণা কতোটুকু সত্য?'
এটা ততোটুকুই মিথ্যা যতোটুকু মিথ্যা হচ্ছে - শেখ কামালের ব্যাংক ডাকাতি।
যুদ্ধ পরবর্তী সকল রাষ্ট্রের মতোই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শুরুতে বিশৃংখলা, হতাশা ছিলো। নতুন সরকারকে অভূতপূর্ব সব সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছিলো। জনগনের আকাঙ্ক্ষার সাথে বাস্তবতা মিলছিলোনা। কারন যাই থাকুক '৭৪ এর দুর্ভিক্ষ ছিলো ভয়ানক ব্যাপার।
তবু জনগনের কাছে বঙ্গবন্ধুর কোন বিকল্প ছিলোনা। বাদবাকী রাজনৈতিক নেতা যারা ছিলেন তাদের কাউকেই জনগন তাঁর বিকল্প হিসাবে ভাবছিলোনা। তাঁর জনপ্রিয়তা তখনো আকাশচুম্বী। তখনো হলদু খামে গনভবনে চিঠি যাচ্ছে 'প্রিয় মুজিব ভাই' ।
আওয়ামী লীগের পরেই তখনকার প্রধান দুই রাজনৈতিক দল সিপিবি এবং ন্যাপ মোজাফফর ছিলো বাকশালের অন্যতম অংশীদার। মওলানা ভাসানী, জাসদ এরা মাঠ গরম করলেও জনসমর্থন নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতাচ্যুত করা তাদের নিজেদের কল্পনাতেও ছিলোনা।
সুতরাং ক্ষমতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ন্যুনতম কোন ঝুঁকি ছিলোনা যে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য তাঁকে কিছু করতে হবে। ক্ষমতা নিয়ে এতো টেনশন থাকলে তিনি ১৯৭৩ এর নির্বাচন আয়োজন করতেন না।
সুতরাং ক্ষমতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ন্যুনতম কোন ঝুঁকি ছিলোনা যে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য তাঁকে কিছু করতে হবে। ক্ষমতা নিয়ে এতো টেনশন থাকলে তিনি ১৯৭৩ এর নির্বাচন আয়োজন করতেন না।
দুই।
হ্যাঁ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পেছনে বাকশাল প্রধান নিয়ামক ছিলো। কিন্তু বাকশালের প্রধান অভিঘাত একচ্ছত্র ক্ষমতা বা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা নয় ( ইনফ্যাক্ট একদল ছিলোনা- আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, সিপিবি তখনকার প্রধান তিন দলই বাকশালে ছিলো)। বাকশাল ছিলো প্রথমতঃ এবং প্রধানতঃ একটা অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কার কর্মসূচী।
কমিউনিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর মতো সরকার জনগনের ভূমি দখল করবেনা, ভূমির মালিকানা ব্যক্তিরই থাকবে তবে একজন ব্যক্তি সর্ব্বোচ্চ কতোটুকু ভূমির মালিক হতে পারবে সেটা নির্ধারিত থাকবে। প্রতিটি গ্রামে সমবায় ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। সরকার বীজ, সার, কীটনাশক, জ্বালানী সরবরাহ করবে। জমির মালিক জমি দেবে, সমবায়ের ভূমিহীন সদস্যরা শ্রম দেবে। ফসলের এক অংশ জমির মালিক, এক অংশ শ্রমদাতাগন আরেক অংশ সরকার পাবে।
প্রশাসন চুড়ান্ত বিকেন্দ্রীকরন হবে। প্রতিটি মহকুমা জেলা হবে, থানা পর্যায়ে আদালত গড়ে উঠবে। আমলা, রাজনৈতিক কর্মী, সামাজিক ব্যক্তিত্ব সবাই মিলে প্রশাসন চালাবে- প্রশাসনে আমলাদের একক কর্ত্বত্ব থাকবেনা।
কমিউনিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর মতো সরকার জনগনের ভূমি দখল করবেনা, ভূমির মালিকানা ব্যক্তিরই থাকবে তবে একজন ব্যক্তি সর্ব্বোচ্চ কতোটুকু ভূমির মালিক হতে পারবে সেটা নির্ধারিত থাকবে। প্রতিটি গ্রামে সমবায় ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। সরকার বীজ, সার, কীটনাশক, জ্বালানী সরবরাহ করবে। জমির মালিক জমি দেবে, সমবায়ের ভূমিহীন সদস্যরা শ্রম দেবে। ফসলের এক অংশ জমির মালিক, এক অংশ শ্রমদাতাগন আরেক অংশ সরকার পাবে।
প্রশাসন চুড়ান্ত বিকেন্দ্রীকরন হবে। প্রতিটি মহকুমা জেলা হবে, থানা পর্যায়ে আদালত গড়ে উঠবে। আমলা, রাজনৈতিক কর্মী, সামাজিক ব্যক্তিত্ব সবাই মিলে প্রশাসন চালাবে- প্রশাসনে আমলাদের একক কর্ত্বত্ব থাকবেনা।
পাকিস্তান আমলের শাসন পদ্ধতিতে সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র নিজেদের সুপ্রীম ক্ষমতার অংশীদার বলে জেনে এসেছিলো। বাঙ্গালী সামরিক ও বেসামরিক আমলারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও তাদের শ্রেনী চরিত্র বদলায়নি।
বাকশাল পদ্ধতি তাদের জন্য বিরাট অসম্মান জনক ছিলো, একই সাথে উঠতি পুঁজিপতিদের জন্যও হুমকি- এদের অনেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা পাতিনেতা।
বাকশাল পদ্ধতি তাদের জন্য বিরাট অসম্মান জনক ছিলো, একই সাথে উঠতি পুঁজিপতিদের জন্যও হুমকি- এদের অনেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা পাতিনেতা।
ফলে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সাথে বাকশালের প্রতি ক্ষুব্দ দেশীয় নানাগোষ্ঠীর সম্মিলিত যোগাযোগ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রধান সুত্র। তাই বাকশাল এড়িয়ে গেলে মুলতঃ বঙ্গবন্ধু হত্যার কারন হিসাবে যেসব প্রপাগান্ডা চালু আছে সেগুলো চ্যালেঞ্জ না করে বরং উস্কে দেয়া হয়।
তিন।
আরেকটা প্রশ্ন এসেছিলো যা এমনিতেই জনপ্রিয় একটা ধারনা। বাকশালের টাইমিং। 'বঙ্গবন্ধু '৭৫ এর বদলে '৭২ এ বাকশাল করলে সবচেয়ে ভালো হতো।'
প্রথম তিনবছর বঙ্গবন্ধু ঠিক তাই করেছেন বিপ্লবোত্তর নতুন রাষ্ট্রে যা যা করা দরকার। শরনার্থী পুনর্বাসন, বীরাঙ্গনা পুনর্বাসন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা, যুদ্ধ বিধ্বস্ত সড়ক। রেল পথ ও ব্রীজ পুনঃনির্মাণ, সমুদ্র বন্দর চালু করা, জাতিসংঘ সহ পৃথিবীর বেশীর ভাগ রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতি আদায়, সংবিধান প্রনয়ন।
এই জরুরী কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার পর তিনি অর্থনীতি, ভূমি ও প্রশাসনের সংস্কার কর্মসূচী হিসাবে বাকশাল শুরু করেছিলেন।
১৯১৭ এর বলশেভিক বিপ্লবের পর বিপ্লবী সরকার ৫ বছর সময় নিয়েছিলো পুনর্গঠনের, ১৯২২ থেকে হাত দিয়েছিলো অর্থনৈতিক সংস্কারে।
এই জরুরী কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার পর তিনি অর্থনীতি, ভূমি ও প্রশাসনের সংস্কার কর্মসূচী হিসাবে বাকশাল শুরু করেছিলেন।
১৯১৭ এর বলশেভিক বিপ্লবের পর বিপ্লবী সরকার ৫ বছর সময় নিয়েছিলো পুনর্গঠনের, ১৯২২ থেকে হাত দিয়েছিলো অর্থনৈতিক সংস্কারে।
No comments:
Post a Comment