Saturday, January 11, 2020

ইরান vs মুসলিম

আমেরিকা ইরান বিষয়ে সব বাঙালি একাট্টা। সবাই ইরানের পক্ষে। বন্ধুদের মধ্যে তর্ক হচ্ছে,আমি বললাম,আমরা কেন ইরানের পক্ষে?

এক বন্ধু বললো, কি বলছিস তুই? আমরা ইরানের পক্ষে থাকবো না? বেইমান আমেরিকার পক্ষে থাকবো? আমেরিকা তো শয়তানের রাস্ট্র! ইরান মুসলিম। আমরা মুসলিমের পক্ষে আছি।

আমি বললাম, সেটা ভালো কথা। কিন্তু কথা হচ্ছে ইরানে তো শিয়া সরকার। তারা তো সুন্নিদের পছন্দ করে না। আমরাও সুন্নি মুসলমান। শিয়া সরকার ইরানের বহু সু্ন্নিদের অত্যাচার করে মেরে ফেলেছে।

তা মারুক।তবুও আমরা শয়তানের পক্ষে নাই।

আমি আবারও বললাম, ইরানও কিন্ত ফেরেশতা রাস্ট্র নয়। তারা নিজ দেশে বহু সুন্নি মুসলমানকে অত্যাচার করেছে। কুর্দিদের উপর নির্যাতন করেছে। সিরিয়ায় বাসার আল আসাদ লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। পুরো দেশটা তছনছ হয়ে গেছে। তবুও বাসার আল আসাদকে ইরান সাপোর্ট করে টিকিয়ে রেখেছে শুধুমাত্র সে শিয়াপন্হী হওয়ার কারনে।

অন্য বন্ধু বললো, ইরান তো ধর্মের জন্যই লড়ছে।

এটা কোন ধর্ম?এই যে অনাহুত সন্দেহ করে একটা বিমান ভূপাতিত করে পৌনে দুই,শ মানুষকে মেরে ফেলা হলো এর জবাব কে দেবে? কেন তারা বিমান ভূপাতিত করলো,? সেই বিমানে কি ড্রোনাল্ড ট্রাম্প একা বসা ছিল?

একটু আধটু ভুল তো হতেই পারে।

এটা কেমন ভুল? ড্রোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের একজন জেনারেলকে মেরেছে। অপরাধ ট্রাম্প করেছে। আমেরিকান জনগণ এটা মেনে নেয়নি। সেই দেশের বিরোধী দলও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। ড্রোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে সে ইরানের সাথে যুদ্ধে না জড়ায়। বিমানের সব লোক যদি আমেরিকারও হতো, তবু বলবো এদের কে এভাবে মেরে কোন ধর্ম রক্ষা করছে তারা?

নানাজন নানা যুক্তি দাঁড় করাতে লাগলো।

আমি বললাম, সৌদি আরব তো সুন্নি সরকার। আমরাও সুন্নি। সৌদি আরব কখনো চাইবে না, ইরান আমেরিকার সাথে যুদ্ধে জয়লাভ করুক। তাহলে তাদের ক্ষমতা খর্ব হয়ে যাবে। সৌদি আরব যদি ইরানের বিপক্ষে, শয়তান আমেরিকার পক্ষে যুদ্ধে নামে তখন আমরা কি করবো? আমরা কার পক্ষ নিবো? ইরানের পক্ষে নাকি সৌদি আরবের পক্ষে?

এবার দেখি সবাই বিভ্রান্ত হয়ে গেল।

ইরান এবং আমেরিকা একে অপরকে ভালোই হুমকি ধামকি দিয়ে গেলো। যদি যুদ্ধ লেগে যেতো তবে পুরো পৃথিবী ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়তো।অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন অদূর ভবিষ্যতে এই দুই দেশের যুদ্ধ করার সম্ভাবনা কম।শুধু ইসরায়েলের প্ররোচনায় আমেরিকা মাঝে মাঝে লাফালাফি করে। সৌদি আরবও চায় ইরানকে সাইজ করতে।

ইরানের শক্তি কোথায়? তারা হরমুজ প্রণালী নিয়ন্ত্রণ করে। সৌদি আরব, কাতার, ইরাক ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ এই জায়গা দিয়ে তেল রপ্তানি করে। ইরান যদি এই পথ বন্ধ করে দেয়,তাহলে বিপদ। তেলের অভাবে ভারত চীন সহ বহু দেশে বিপর্যয় দেখা দিবে। তেলের দাম আকাশচুম্বী হয়ে যাবে।কেননা পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ তেল এখান দিয়ে রপ্তানী হয়।তেল ছাড়া আমেরিকা যুদ্ধ করবে কীভাবে? ইউরোপও এক্ষেত্রে আমেরিকার পাশে থাকবে না।

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ইরাক এখন আর আমেরিকাকে সহ্য করতে পারছে না, যুদ্ধ লেগে গেলে তারা ইরানের পক্ষে চলে যাবে।ইরাকে বাস করছে ইখন ইরান পন্থী শিয়া সরকার। হিজবুল্লাহ তাদের পাশে থাকবে। পাশে থাকবে সিরিয়াও।

বহুদিন পর আমেরিকা একটা ভালো ধরনের ধাক্কা খেলো।আমেরিকা নিজেও মনে করছে এই মূহুর্তে ইরানের সাথে মোকাবেলা করা সহজ হবে না এবং যুদ্ধ লেগে গেলেও তারা জয়লাভ করতে পারবে না।

ইরানের পক্ষেও একই কথা খাটে। তারাও জয়লাভ করতে পারবে না। মনে রাখতে হবে ইরানের সাথে যুদ্ধ করতে মুখিয়ে আছে ইসরায়েল। ইসরায়েল চাইছে আমেরিকার সাথে ইরানের যুদ্ধ হউক। মাঝে থেকে ফায়দা লুটবে সে।

এগুলো হচ্ছে আধিপত্যের লড়াই। কেউ যদি মনে করে ইরান ধর্মের জন্য যুদ্ধ করছে তাহলে সে ভুল করবে।ইরানও তার আধিপত্য বিস্তার করার জন্য লড়ছে।

এখানে শুধুই ক্ষমতার লড়াই। মানবতা অনুপস্থিত।

No comments:

Post a Comment