Thursday, January 16, 2020



গল্প না সত্য ঘটনা - ভাবলাম লিখেই ফেলি -

যুদ্ধের ডামাডোলে ইরানের বিমান দুর্ঘটনা -
এতে কানাডার সব চেয়ে বেশী যাত্রী নিহত হয়েছে - কানাডার প্রধানমন্ত্রী গতকাল আমেরিকাকে দোষ দিয়েছে - এই হাই টেনশনের কারন আমেরিকা।
গ্রাউন্ড মিলিটারী রাডারের হাতে থাকে সেকেন্ড টাইম রিয়েকশন যদি ফ্লাইট ইনফরমেশন আর চেলেঞ্জ রেস্পন্সে কোন গ্যাপ বা সন্দেহ হয়।
একটু খেয়াল করেন, ১৯৮৮ সালে আমেরিকাও একই কাজ করেছিলো ( ইরাক যুদ্ধের সময়) ইরানের একটি যাত্রী বাহী এয়ারক্রাফট আকাশে মিসাইল এটাক করে এবং এতে ২৭৪ জন যাত্রী সকলেই নিহত হয়।
যাই হোউক - আমার মিলিটারী ফ্লাইট টা ছিল শান্তি কালীন সময়ে - ১/১১ এর পরে - মঈন ফকরের টাইমে।
২০০৭ এর দিকে আমি সহ বাকি ক্রুরা ফিরছিলাম সাউথ এমেরিকার চিলি থেকে।
অনেক দেশ ঘুরে শেষ ষ্টপ ছিলো মাস্কাট। আমি কেপ্টেনের দায়িত্বে।
মাস্কাট থেকে সরাসরি ঢাকা। ফ্লাইট টেইক অফের আগে আমাদের জানানো হয় আবহাওয়া থাকবে প্রতিকুল। ঝড় বৃষ্টি থাকবে ঢাকা কিম্বা কোলকাতার দিকে।
এইসব ফ্লাইট অপারেশনের নিত্য সংগী।
ভারতের নাগপুরের উপর পড়ি ভয়াবহ আবহাওয়ায়। নাগপুরের অনুমতি নিয়ে ফ্লাইট রুটের বাঁয়ে ৩০ মাইল সরে যেতে পারমিশন পেলাম।
ফ্লাইট কনটিনিউ তো হচ্ছেই -টার্গেট- ঢাকা।
ঢাকা থেকে মাত্র ২০০ /২৫০ মাইল দূরে ৪০ মিনিট বাকি - অনেক দিন পর বাসায় যাব একটা আকাংখা - এইসবই একজন পাইলটকে নিজের অজান্তেই কিছু রিস্ক নিতে বাধ্য করে।
যাই হোউক, আবহাওয়া / উচ্চতা এবং দুরত্বের কারনে নাগপুর কন্ট্রোল থেকে আমরা হারিয়ে যাই।
যেহেতু হারকিউলিস বিমান তাই আমাদের উচ্চতা ছিল ২১০০০ হাজার ফিটের মতন। আমাদের জাহাজ বেশী হলে ২৫০০০ ফিট উচ্চতায় যেতে পারে। তাই যোগাযোগের ( ওয়ারলেস) দুরত্বও কমে যায়।
আবহাওয়ার কারনে আমাদেরকে আরো ৩০ মাইল বাঁয়ে সরে যেতে হলো সব মিলিয়ে ৬০ মাইল।
এদিকে আমাদের গন্তব্যও এগিয়ে আসছে। থাকার কথা কোলকাতা বরাবর - কিন্তু গ্রাউন্ড ম্যাপ আর রাডার বলছে আমরা বাংলাদেশের রাজশাহী বরাবর এবং রাজশাহী দেখাচ্ছে মাত্র ৬০ মাইল দূরে রাজশাহী।
সব মিলিটারী বিমানের নিজ দেশ ছাড়া বাকি সব দেশের একটা নির্দিষ্ট পয়েন্ট দিয়ে ঢুকতে/ বের হতে হয়।
এর বাহিরে কিছু করা মানে আপনাকে চেলেঞ্জের মুখে পড়তে হবে - এমন কি সেই দেশে বাধ্যতামুলক অবতরন করতে হবে কিম্বা ক্রু এয়ারক্রাফট সিজ ও করতে পারে।
আমি তো পারমিশন নিয়েছিলাম ৩০ মাইলের কিন্তু জান বাঁচানো ফরজ - আবহাওয়ার কারনে বাঁয়ে কিম্বা পিছনে যাওয়ার কোন গতি ছিলো না।
এক সময় ভারতের কন্ট্রোলের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমরা ইমারজেন্সি ফ্রিকোয়েন্সি মনিটর শুরু করলাম এবং ডিস্ট্রেস ফ্রিকোয়েন্সি সেট ( ০৪ ডিজিটের কোড যেটা সেট করলে মিলিটারী কিম্বা সিভিল রাডার বুঝবে এই বিমান টি কোন না কোন সমস্যায় আছে কিন্তু যোগাযোগ করতে পারছে না) করলাম।
যখন রাজশাহী সিমান্তের ৩০ মাইল কাছে তখন কোলকাতার কল রিসিব করতে সক্ষম হলাম - ওরা আমাদের চেলেঞ্জ এন্ড রেসপন্স দিয়ে কনফার্ম করলো এইটা আমাদের বিমান, যেহেতু রুট থেকে সরে গিয়েছি এবং আমাদের ইমিডিয়েট রাডার ট্রেক দিয়ে গাইড করতে শুরু করলো গতি পথ পাল্টে দিল - কারন আমরা আবহাওয়ার কারনে নিজেদের অজান্তেই ভাওরতের কোন এক মিলিটারী রেস্ট্রিকটেড স্থাপনার উপর চলে যাই।
কোলকাতা আমাদের সতর্ক করে বললো - Immediate call to military Radar ( যে ফ্রিকোয়েন্সী গোপন যেটা কোন পাইলট জানার কথা না). They are tracking You and dangerous situation.
আমাদের গায়ের লোম্বা সব জায়গায় দাঁড়িয়ে গেল - যেহেতু আমি কেপ্টেন বাকি ক্রুদের বুঝতে দেই নাই -
সাথে সাথে কোপাইলট কে বললাম তুমি বিমান চালাও নেভিগেটর কে বললাম আবহাওয়া মনিটর করো - ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার কে বললাম সব ঠিক আছে কিনা খেয়াল রাখ- এইসব মুহুর্ত সল্প সময়ের চোখের নিমিষেই ঘটতে থাকতে এক একটা ঘটনা।
এই ক্রাইসিসে সঠিক সময়ে যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ - যেহেতু মিলিটারী বিমান আমদের বেলায় আবার জিরো টলারেন্স।
আলহামদুলিল্লাহ - সবার সাথে কথা হলো বোঝাতে সক্ষম হলাম কেন কি কারনে আমাদের কে ডাইভারশান বা নির্দিষ্ট রুট থেকে সরে যেতে হয়েছিলো - কোলকাতা রাডার সেইদিন আসলেই অনেক সাহায্য করেছিলো আমাদের কে মিলিটারী রাডারের সাথে সমন্বয় করিয়ে দিল।
আমরা দেশে লেন্ড করলাম সহি সালামতে - সবার চোখে মুখে আতংক কেটে গেল।
আমার সেই ফ্লাইটের সব ক্রু ই ধন্যবাদ পাবার যোগ্য।
ঘটনা টা শান্তিকালীন সময়ে না হয়ে যদি ইরানের মতন হাই টেনশন টাইমে হতো তাহলে ভেবে দেখুন।
সাধারনত আন্তর্জাতিক রুটে বা আকাশে একটা বিমান নির্দিষ্ট রুটের ডানে বামে মাত্র আড়াই মাইল যেতে পারে - আর এই টুকূ দুরত্বে যেতে কয়েক সেকেন্ড টাইম লাগে। অনেক সময় পাইলটের অজান্তেই অনেক কারনে একটি ফ্লাইট সরে যেতে পারে।
তাই আমি বলি,ইরানের বিমান দুর্ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং হাই টেনশন জোনের কো লেটারাল ইম্পেক্ট।
বি দ্র ঃ ইরানের সামরিক কমান্ডাররা কিন্তু বলেছিলো নো ফ্লাই জোন ঘোষনা করতে আগের রাতে- কিন্তু সরকার মানে নাই - না জানি জনগন আবার কি মনে করে।
কার্টেসী - এক্স স্কোয়াড্রন লিডার ওয়াহিদ উন নবী ভাই।

No comments:

Post a Comment