Tuesday, January 28, 2020

চমৎকারভাবে গুছিয়ে রেফারেন্সসহ তথ্যনির্ভর এই পর্যবেক্ষণটি লিখেছেন Hasan Murshed ভাই। পড়ুন, জানুন,ছড়িয়ে দিন যতটা সম্ভব!

এক।
'বঙ্গবন্ধু ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য বাকশাল করেছিলেন- তাই তাকে হত্যা করা হয়েছিলো, এই প্রচারণা কতোটুকু সত্য?'
এটা ততোটুকুই মিথ্যা যতোটুকু মিথ্যা হচ্ছে - শেখ কামালের ব্যাংক ডাকাতি।
যুদ্ধ পরবর্তী সকল রাষ্ট্রের মতোই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শুরুতে বিশৃংখলা, হতাশা ছিলো। নতুন সরকারকে অভূতপূর্ব সব সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছিলো। জনগনের আকাঙ্ক্ষার সাথে বাস্তবতা মিলছিলোনা। কারন যাই থাকুক '৭৪ এর দুর্ভিক্ষ ছিলো ভয়ানক ব্যাপার।
তবু জনগনের কাছে বঙ্গবন্ধুর কোন বিকল্প ছিলোনা। বাদবাকী রাজনৈতিক নেতা যারা ছিলেন তাদের কাউকেই জনগন তাঁর বিকল্প হিসাবে ভাবছিলোনা। তাঁর জনপ্রিয়তা তখনো আকাশচুম্বী। তখনো হলদু খামে গনভবনে চিঠি যাচ্ছে 'প্রিয় মুজিব ভাই' ।
আওয়ামী লীগের পরেই তখনকার প্রধান দুই রাজনৈতিক দল সিপিবি এবং ন্যাপ মোজাফফর ছিলো বাকশালের অন্যতম অংশীদার। মওলানা ভাসানী, জাসদ এরা মাঠ গরম করলেও জনসমর্থন নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতাচ্যুত করা তাদের নিজেদের কল্পনাতেও ছিলোনা।
সুতরাং ক্ষমতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ন্যুনতম কোন ঝুঁকি ছিলোনা যে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য তাঁকে কিছু করতে হবে। ক্ষমতা নিয়ে এতো টেনশন থাকলে তিনি ১৯৭৩ এর নির্বাচন আয়োজন করতেন না।
দুই।
হ্যাঁ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পেছনে বাকশাল প্রধান নিয়ামক ছিলো। কিন্তু বাকশালের প্রধান অভিঘাত একচ্ছত্র ক্ষমতা বা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা নয় ( ইনফ্যাক্ট একদল ছিলোনা- আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, সিপিবি তখনকার প্রধান তিন দলই বাকশালে ছিলো)। বাকশাল ছিলো প্রথমতঃ এবং প্রধানতঃ একটা অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কার কর্মসূচী।
কমিউনিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর মতো সরকার জনগনের ভূমি দখল করবেনা, ভূমির মালিকানা ব্যক্তিরই থাকবে তবে একজন ব্যক্তি সর্ব্বোচ্চ কতোটুকু ভূমির মালিক হতে পারবে সেটা নির্ধারিত থাকবে। প্রতিটি গ্রামে সমবায় ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। সরকার বীজ, সার, কীটনাশক, জ্বালানী সরবরাহ করবে। জমির মালিক জমি দেবে, সমবায়ের ভূমিহীন সদস্যরা শ্রম দেবে। ফসলের এক অংশ জমির মালিক, এক অংশ শ্রমদাতাগন আরেক অংশ সরকার পাবে।
প্রশাসন চুড়ান্ত বিকেন্দ্রীকরন হবে। প্রতিটি মহকুমা জেলা হবে, থানা পর্যায়ে আদালত গড়ে উঠবে। আমলা, রাজনৈতিক কর্মী, সামাজিক ব্যক্তিত্ব সবাই মিলে প্রশাসন চালাবে- প্রশাসনে আমলাদের একক কর্ত্বত্ব থাকবেনা।
পাকিস্তান আমলের শাসন পদ্ধতিতে সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র নিজেদের সুপ্রীম ক্ষমতার অংশীদার বলে জেনে এসেছিলো। বাঙ্গালী সামরিক ও বেসামরিক আমলারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও তাদের শ্রেনী চরিত্র বদলায়নি।
বাকশাল পদ্ধতি তাদের জন্য বিরাট অসম্মান জনক ছিলো, একই সাথে উঠতি পুঁজিপতিদের জন্যও হুমকি- এদের অনেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা পাতিনেতা।
ফলে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সাথে বাকশালের প্রতি ক্ষুব্দ দেশীয় নানাগোষ্ঠীর সম্মিলিত যোগাযোগ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রধান সুত্র। তাই বাকশাল এড়িয়ে গেলে মুলতঃ বঙ্গবন্ধু হত্যার কারন হিসাবে যেসব প্রপাগান্ডা চালু আছে সেগুলো চ্যালেঞ্জ না করে বরং উস্কে দেয়া হয়।
তিন।
আরেকটা প্রশ্ন এসেছিলো যা এমনিতেই জনপ্রিয় একটা ধারনা। বাকশালের টাইমিং। 'বঙ্গবন্ধু '৭৫ এর বদলে '৭২ এ বাকশাল করলে সবচেয়ে ভালো হতো।'
প্রথম তিনবছর বঙ্গবন্ধু ঠিক তাই করেছেন বিপ্লবোত্তর নতুন রাষ্ট্রে যা যা করা দরকার। শরনার্থী পুনর্বাসন, বীরাঙ্গনা পুনর্বাসন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা, যুদ্ধ বিধ্বস্ত সড়ক। রেল পথ ও ব্রীজ পুনঃনির্মাণ, সমুদ্র বন্দর চালু করা, জাতিসংঘ সহ পৃথিবীর বেশীর ভাগ রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতি আদায়, সংবিধান প্রনয়ন।
এই জরুরী কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার পর তিনি অর্থনীতি, ভূমি ও প্রশাসনের সংস্কার কর্মসূচী হিসাবে বাকশাল শুরু করেছিলেন।
১৯১৭ এর বলশেভিক বিপ্লবের পর বিপ্লবী সরকার ৫ বছর সময় নিয়েছিলো পুনর্গঠনের, ১৯২২ থেকে হাত দিয়েছিলো অর্থনৈতিক সংস্কারে।

Thursday, January 16, 2020



গল্প না সত্য ঘটনা - ভাবলাম লিখেই ফেলি -

যুদ্ধের ডামাডোলে ইরানের বিমান দুর্ঘটনা -
এতে কানাডার সব চেয়ে বেশী যাত্রী নিহত হয়েছে - কানাডার প্রধানমন্ত্রী গতকাল আমেরিকাকে দোষ দিয়েছে - এই হাই টেনশনের কারন আমেরিকা।
গ্রাউন্ড মিলিটারী রাডারের হাতে থাকে সেকেন্ড টাইম রিয়েকশন যদি ফ্লাইট ইনফরমেশন আর চেলেঞ্জ রেস্পন্সে কোন গ্যাপ বা সন্দেহ হয়।
একটু খেয়াল করেন, ১৯৮৮ সালে আমেরিকাও একই কাজ করেছিলো ( ইরাক যুদ্ধের সময়) ইরানের একটি যাত্রী বাহী এয়ারক্রাফট আকাশে মিসাইল এটাক করে এবং এতে ২৭৪ জন যাত্রী সকলেই নিহত হয়।
যাই হোউক - আমার মিলিটারী ফ্লাইট টা ছিল শান্তি কালীন সময়ে - ১/১১ এর পরে - মঈন ফকরের টাইমে।
২০০৭ এর দিকে আমি সহ বাকি ক্রুরা ফিরছিলাম সাউথ এমেরিকার চিলি থেকে।
অনেক দেশ ঘুরে শেষ ষ্টপ ছিলো মাস্কাট। আমি কেপ্টেনের দায়িত্বে।
মাস্কাট থেকে সরাসরি ঢাকা। ফ্লাইট টেইক অফের আগে আমাদের জানানো হয় আবহাওয়া থাকবে প্রতিকুল। ঝড় বৃষ্টি থাকবে ঢাকা কিম্বা কোলকাতার দিকে।
এইসব ফ্লাইট অপারেশনের নিত্য সংগী।
ভারতের নাগপুরের উপর পড়ি ভয়াবহ আবহাওয়ায়। নাগপুরের অনুমতি নিয়ে ফ্লাইট রুটের বাঁয়ে ৩০ মাইল সরে যেতে পারমিশন পেলাম।
ফ্লাইট কনটিনিউ তো হচ্ছেই -টার্গেট- ঢাকা।
ঢাকা থেকে মাত্র ২০০ /২৫০ মাইল দূরে ৪০ মিনিট বাকি - অনেক দিন পর বাসায় যাব একটা আকাংখা - এইসবই একজন পাইলটকে নিজের অজান্তেই কিছু রিস্ক নিতে বাধ্য করে।
যাই হোউক, আবহাওয়া / উচ্চতা এবং দুরত্বের কারনে নাগপুর কন্ট্রোল থেকে আমরা হারিয়ে যাই।
যেহেতু হারকিউলিস বিমান তাই আমাদের উচ্চতা ছিল ২১০০০ হাজার ফিটের মতন। আমাদের জাহাজ বেশী হলে ২৫০০০ ফিট উচ্চতায় যেতে পারে। তাই যোগাযোগের ( ওয়ারলেস) দুরত্বও কমে যায়।
আবহাওয়ার কারনে আমাদেরকে আরো ৩০ মাইল বাঁয়ে সরে যেতে হলো সব মিলিয়ে ৬০ মাইল।
এদিকে আমাদের গন্তব্যও এগিয়ে আসছে। থাকার কথা কোলকাতা বরাবর - কিন্তু গ্রাউন্ড ম্যাপ আর রাডার বলছে আমরা বাংলাদেশের রাজশাহী বরাবর এবং রাজশাহী দেখাচ্ছে মাত্র ৬০ মাইল দূরে রাজশাহী।
সব মিলিটারী বিমানের নিজ দেশ ছাড়া বাকি সব দেশের একটা নির্দিষ্ট পয়েন্ট দিয়ে ঢুকতে/ বের হতে হয়।
এর বাহিরে কিছু করা মানে আপনাকে চেলেঞ্জের মুখে পড়তে হবে - এমন কি সেই দেশে বাধ্যতামুলক অবতরন করতে হবে কিম্বা ক্রু এয়ারক্রাফট সিজ ও করতে পারে।
আমি তো পারমিশন নিয়েছিলাম ৩০ মাইলের কিন্তু জান বাঁচানো ফরজ - আবহাওয়ার কারনে বাঁয়ে কিম্বা পিছনে যাওয়ার কোন গতি ছিলো না।
এক সময় ভারতের কন্ট্রোলের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমরা ইমারজেন্সি ফ্রিকোয়েন্সি মনিটর শুরু করলাম এবং ডিস্ট্রেস ফ্রিকোয়েন্সি সেট ( ০৪ ডিজিটের কোড যেটা সেট করলে মিলিটারী কিম্বা সিভিল রাডার বুঝবে এই বিমান টি কোন না কোন সমস্যায় আছে কিন্তু যোগাযোগ করতে পারছে না) করলাম।
যখন রাজশাহী সিমান্তের ৩০ মাইল কাছে তখন কোলকাতার কল রিসিব করতে সক্ষম হলাম - ওরা আমাদের চেলেঞ্জ এন্ড রেসপন্স দিয়ে কনফার্ম করলো এইটা আমাদের বিমান, যেহেতু রুট থেকে সরে গিয়েছি এবং আমাদের ইমিডিয়েট রাডার ট্রেক দিয়ে গাইড করতে শুরু করলো গতি পথ পাল্টে দিল - কারন আমরা আবহাওয়ার কারনে নিজেদের অজান্তেই ভাওরতের কোন এক মিলিটারী রেস্ট্রিকটেড স্থাপনার উপর চলে যাই।
কোলকাতা আমাদের সতর্ক করে বললো - Immediate call to military Radar ( যে ফ্রিকোয়েন্সী গোপন যেটা কোন পাইলট জানার কথা না). They are tracking You and dangerous situation.
আমাদের গায়ের লোম্বা সব জায়গায় দাঁড়িয়ে গেল - যেহেতু আমি কেপ্টেন বাকি ক্রুদের বুঝতে দেই নাই -
সাথে সাথে কোপাইলট কে বললাম তুমি বিমান চালাও নেভিগেটর কে বললাম আবহাওয়া মনিটর করো - ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার কে বললাম সব ঠিক আছে কিনা খেয়াল রাখ- এইসব মুহুর্ত সল্প সময়ের চোখের নিমিষেই ঘটতে থাকতে এক একটা ঘটনা।
এই ক্রাইসিসে সঠিক সময়ে যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ - যেহেতু মিলিটারী বিমান আমদের বেলায় আবার জিরো টলারেন্স।
আলহামদুলিল্লাহ - সবার সাথে কথা হলো বোঝাতে সক্ষম হলাম কেন কি কারনে আমাদের কে ডাইভারশান বা নির্দিষ্ট রুট থেকে সরে যেতে হয়েছিলো - কোলকাতা রাডার সেইদিন আসলেই অনেক সাহায্য করেছিলো আমাদের কে মিলিটারী রাডারের সাথে সমন্বয় করিয়ে দিল।
আমরা দেশে লেন্ড করলাম সহি সালামতে - সবার চোখে মুখে আতংক কেটে গেল।
আমার সেই ফ্লাইটের সব ক্রু ই ধন্যবাদ পাবার যোগ্য।
ঘটনা টা শান্তিকালীন সময়ে না হয়ে যদি ইরানের মতন হাই টেনশন টাইমে হতো তাহলে ভেবে দেখুন।
সাধারনত আন্তর্জাতিক রুটে বা আকাশে একটা বিমান নির্দিষ্ট রুটের ডানে বামে মাত্র আড়াই মাইল যেতে পারে - আর এই টুকূ দুরত্বে যেতে কয়েক সেকেন্ড টাইম লাগে। অনেক সময় পাইলটের অজান্তেই অনেক কারনে একটি ফ্লাইট সরে যেতে পারে।
তাই আমি বলি,ইরানের বিমান দুর্ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং হাই টেনশন জোনের কো লেটারাল ইম্পেক্ট।
বি দ্র ঃ ইরানের সামরিক কমান্ডাররা কিন্তু বলেছিলো নো ফ্লাই জোন ঘোষনা করতে আগের রাতে- কিন্তু সরকার মানে নাই - না জানি জনগন আবার কি মনে করে।
কার্টেসী - এক্স স্কোয়াড্রন লিডার ওয়াহিদ উন নবী ভাই।

Saturday, January 11, 2020

ইরান vs মুসলিম

আমেরিকা ইরান বিষয়ে সব বাঙালি একাট্টা। সবাই ইরানের পক্ষে। বন্ধুদের মধ্যে তর্ক হচ্ছে,আমি বললাম,আমরা কেন ইরানের পক্ষে?

এক বন্ধু বললো, কি বলছিস তুই? আমরা ইরানের পক্ষে থাকবো না? বেইমান আমেরিকার পক্ষে থাকবো? আমেরিকা তো শয়তানের রাস্ট্র! ইরান মুসলিম। আমরা মুসলিমের পক্ষে আছি।

আমি বললাম, সেটা ভালো কথা। কিন্তু কথা হচ্ছে ইরানে তো শিয়া সরকার। তারা তো সুন্নিদের পছন্দ করে না। আমরাও সুন্নি মুসলমান। শিয়া সরকার ইরানের বহু সু্ন্নিদের অত্যাচার করে মেরে ফেলেছে।

তা মারুক।তবুও আমরা শয়তানের পক্ষে নাই।

আমি আবারও বললাম, ইরানও কিন্ত ফেরেশতা রাস্ট্র নয়। তারা নিজ দেশে বহু সুন্নি মুসলমানকে অত্যাচার করেছে। কুর্দিদের উপর নির্যাতন করেছে। সিরিয়ায় বাসার আল আসাদ লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। পুরো দেশটা তছনছ হয়ে গেছে। তবুও বাসার আল আসাদকে ইরান সাপোর্ট করে টিকিয়ে রেখেছে শুধুমাত্র সে শিয়াপন্হী হওয়ার কারনে।

অন্য বন্ধু বললো, ইরান তো ধর্মের জন্যই লড়ছে।

এটা কোন ধর্ম?এই যে অনাহুত সন্দেহ করে একটা বিমান ভূপাতিত করে পৌনে দুই,শ মানুষকে মেরে ফেলা হলো এর জবাব কে দেবে? কেন তারা বিমান ভূপাতিত করলো,? সেই বিমানে কি ড্রোনাল্ড ট্রাম্প একা বসা ছিল?

একটু আধটু ভুল তো হতেই পারে।

এটা কেমন ভুল? ড্রোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের একজন জেনারেলকে মেরেছে। অপরাধ ট্রাম্প করেছে। আমেরিকান জনগণ এটা মেনে নেয়নি। সেই দেশের বিরোধী দলও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। ড্রোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে সে ইরানের সাথে যুদ্ধে না জড়ায়। বিমানের সব লোক যদি আমেরিকারও হতো, তবু বলবো এদের কে এভাবে মেরে কোন ধর্ম রক্ষা করছে তারা?

নানাজন নানা যুক্তি দাঁড় করাতে লাগলো।

আমি বললাম, সৌদি আরব তো সুন্নি সরকার। আমরাও সুন্নি। সৌদি আরব কখনো চাইবে না, ইরান আমেরিকার সাথে যুদ্ধে জয়লাভ করুক। তাহলে তাদের ক্ষমতা খর্ব হয়ে যাবে। সৌদি আরব যদি ইরানের বিপক্ষে, শয়তান আমেরিকার পক্ষে যুদ্ধে নামে তখন আমরা কি করবো? আমরা কার পক্ষ নিবো? ইরানের পক্ষে নাকি সৌদি আরবের পক্ষে?

এবার দেখি সবাই বিভ্রান্ত হয়ে গেল।

ইরান এবং আমেরিকা একে অপরকে ভালোই হুমকি ধামকি দিয়ে গেলো। যদি যুদ্ধ লেগে যেতো তবে পুরো পৃথিবী ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়তো।অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন অদূর ভবিষ্যতে এই দুই দেশের যুদ্ধ করার সম্ভাবনা কম।শুধু ইসরায়েলের প্ররোচনায় আমেরিকা মাঝে মাঝে লাফালাফি করে। সৌদি আরবও চায় ইরানকে সাইজ করতে।

ইরানের শক্তি কোথায়? তারা হরমুজ প্রণালী নিয়ন্ত্রণ করে। সৌদি আরব, কাতার, ইরাক ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ এই জায়গা দিয়ে তেল রপ্তানি করে। ইরান যদি এই পথ বন্ধ করে দেয়,তাহলে বিপদ। তেলের অভাবে ভারত চীন সহ বহু দেশে বিপর্যয় দেখা দিবে। তেলের দাম আকাশচুম্বী হয়ে যাবে।কেননা পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ তেল এখান দিয়ে রপ্তানী হয়।তেল ছাড়া আমেরিকা যুদ্ধ করবে কীভাবে? ইউরোপও এক্ষেত্রে আমেরিকার পাশে থাকবে না।

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ইরাক এখন আর আমেরিকাকে সহ্য করতে পারছে না, যুদ্ধ লেগে গেলে তারা ইরানের পক্ষে চলে যাবে।ইরাকে বাস করছে ইখন ইরান পন্থী শিয়া সরকার। হিজবুল্লাহ তাদের পাশে থাকবে। পাশে থাকবে সিরিয়াও।

বহুদিন পর আমেরিকা একটা ভালো ধরনের ধাক্কা খেলো।আমেরিকা নিজেও মনে করছে এই মূহুর্তে ইরানের সাথে মোকাবেলা করা সহজ হবে না এবং যুদ্ধ লেগে গেলেও তারা জয়লাভ করতে পারবে না।

ইরানের পক্ষেও একই কথা খাটে। তারাও জয়লাভ করতে পারবে না। মনে রাখতে হবে ইরানের সাথে যুদ্ধ করতে মুখিয়ে আছে ইসরায়েল। ইসরায়েল চাইছে আমেরিকার সাথে ইরানের যুদ্ধ হউক। মাঝে থেকে ফায়দা লুটবে সে।

এগুলো হচ্ছে আধিপত্যের লড়াই। কেউ যদি মনে করে ইরান ধর্মের জন্য যুদ্ধ করছে তাহলে সে ভুল করবে।ইরানও তার আধিপত্য বিস্তার করার জন্য লড়ছে।

এখানে শুধুই ক্ষমতার লড়াই। মানবতা অনুপস্থিত।

চন্দ্র বিজয়ে অবদান রাখা বাংলাদেশির কথা Image may contain: 1 person, hat and closeup

সত্তোরের দশকে পুরো পৃথিবীকে আলোড়িত করে
চাঁদে প্রথম পা রাখেন নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন। ১৯৬৯ সালে সেই চন্দ্র অভিযান পুরো পৃথিবীকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। যার নেপথ্যে কাজ করেছিলেন একজন বাংলাদেশি। তাঁর নাম রফিক উদ্দিন আহমেদ। বাড়ি সিলেটের গঙ্গানগর গ্রামে। এই মানুষ পাখি মিয়া নামেই বেশি পরিচিত। রফিক উদ্দিন আহমেদ পেশায় ছিলেন তড়িৎ প্রকৌশলী। মহাকাশচারীদের অ্যাপোলো ১১ নভোযান থেকে চাঁদে নিয়ে যায় যে লুনার মডিউল, সেটার নকশা প্রণয়ন ও কারিগরি কাজে যুক্ত ছিলেন রফিক উদ্দিন আহমেদ।
রফিক উদ্দিন আহমেদ তখন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রুম্মান অ্যারোস্পেস করপোরেশনের তরুণ কর্মী। সামরিক ও বেসামরিক বিমান তৈরি করত এই প্রতিষ্ঠান। তিনি তখন এফ-১৪ জঙ্গি বিমান তৈরির একটি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্প চলার সময়ই আমাকে এবং সহকর্মী আরও কয়েকজন প্রকৌশলীকে অ্যাপোলো-১১ প্রকল্পের জন্য নির্বাচন করা হয়। নাসার কাজের ধরনটাই এমন, তারা মূল প্রকল্পকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে আলাদাভাবে কাজ করায়। আমাদের প্রতিষ্ঠান পেল লুনার মডিউল প্রকল্পের কাজ।’
লুনার মডিউলের কাজ ছিল মহাকাশচারীদের অ্যাপোলো ১১ থেকে চাঁদে নিয়ে যাওয়া। চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করানো এবং সেখানে তাঁদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শেষ হলে আবার তাঁদের মহাকাশযানে ফিরিয়ে আনা। রফিক উদ্দিন আহমেদ ও তাঁর দলের কাজ ছিল লুনার মডিউলের নকশা তৈরি ও কারিগরি দিকগুলো দেখা। একজন তড়িৎ প্রকৌশলী হলেও তিনি মহাকাশবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। প্রতিষ্ঠান থেকেও পেয়েছেন প্রশিক্ষণ। তাই কাজটি তাঁকে যেমন রোমাঞ্চিত করেছিল, তেমনি নতুন অভিজ্ঞতারও স্বাদ দিয়েছিল। একসময় লুনার মডিউল তৈরি হয়ে গেল। চন্দ্রাভিযানের নভোচারীদের এই যন্ত্র ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব পড়ল রফিক উদ্দিন আহমেদ ও তাঁর দলের ওপর। লুনার মডিউল কীভাবে কাজ করে, কীভাবে এটিকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করতে হয়, সেসব বিষয় শিখিয়ে দেওয়াই ছিল প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য। দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করায় মহাকাশচারীদের সঙ্গে রফিক উদ্দিন আহমদের গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।
শেষমেশ ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই চাঁদের উদ্দেশে পৃথিবী ছাড়ে অ্যাপোলো ১১, চন্দ্র অভিযানের অধিনায়ক ছিলেন নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং, লুনার মডিউলের পাইলট ছিলেন বাজ অলড্রিন। চাঁদের অভিযাত্রীরা পৃথিবীতে সফলভাবে অবতরণের মধ্য দিয়ে কাজ সমাপ্ত হয় আমার।
আর তারই মাধ্যমে রচিত হলো নতুন ইতিহাস। সে ইতিহাসের সঙ্গে গোপনেই জড়িয়ে রইলেন বাংলাদেশের রফিক উদ্দিন আহমেদ। এই মানুষটির বাড়ি সিলেটের গঙ্গানগর গ্রামে। জন্ম ১৯৩৬ সালের ২০ আগস্ট। বাবা ইদ্রিস আলী ছিলেন অবস্থাসম্পন্ন মানুষ। চার ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে রফিক তৃতীয়। গঙ্গানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। এরপর ভর্তি হন সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে। সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং সিলেট এমসি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে ১৯৫৪ সালে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ইন্ডিয়ানা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন তড়িৎ প্রকৌশলে। পড়াশোনা শেষে তড়িৎ প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি নেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সামরিক ও বেসামরিক বিমান তৈরির প্রতিষ্ঠান গ্রুম্মান অ্যারোস্পেস করপোরেশনে। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসে থেকে দেশের জন্য কাজ করেছেন। জাতিসংঘের সামনে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। রফিক উদ্দিন আহমেদের খালাতো ভাই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানী।
লোনার মডিউল নিয়ে একটু বিস্তারিত জানা যাক:
লোনার মডিউলের কাজ কোনো রকম ক্রটি ছাড়াই সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এবং পরবর্তী সময়ে চাঁদের অভিযানটাই সফলভাবে সমাপ্ত হয়। লোনার মডিউল সব মিলিয়ে ১৫টি তৈরি করা হয়, যার মধ্যে ১০টি ব্যবহার করা হয়। ১২ জন মহাকাশচারী এগুলোতে করে চাঁদে ঘুরে আসেন। রফিক উদ্দিন আহমেদ বলছিলেন, ‘লোনার মডিউলকে ঈগল নামে ডাকা হয়। লোনার মডিউল চাঁদের কক্ষপথে পৌছার পর কমান্ড বা সার্ভিস মডিউল থেকে আলাদা হয়ে চাঁদে অবতরণ করে। লোনার মডিউল প্রধানত দুইটি অংশে বিভক্ত, অবতরণ অংশ (উবংপবহঃ) ও আরোহণ অংশ (অংবহঃ)। অবতরণ অংশ কমান্ড বা সার্ভিস মডিউল থেকে আলাদা হওয়ার পর চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করে একটি পূর্ণ মহাকাশযান হিসেবে। কিন্তু নভোচারীরা চাঁদ থেকে ফেরত আসার সময় শুধুমাত্র লোনার মডিউলের উপরের অংশ রকেটের সাহায্যে চাঁদের ভূমি থেকে ফিরে এসে মূল মহাকাশযানের সাথে সংযুক্ত হয়। এই অংশকে আরোহণ অংশ বলা হয়ে থাকে, লোনার মডিউলের অবতরণ অংশ চাঁদের মাটিতে রয়ে যায়। আরোহণ অংশ মূল মহাকাশযানের সাথে সংযুক্ত হওয়ার পর, নভোচারীরা কমান্ড বা সার্ভিস মডিউলে চলে আসেন। আরোহণ অংশ তারপর মূল মহাকাশযান থেকে আলাদা হয়ে চাঁদের কক্ষপথে রয়ে যায়।’ ধারণা করা হয়, পরবর্তী ১ থেকে ৪ মাসের মধ্যে সেটি চাঁদের মাটিতে আছড়ে পরে, যদিও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। চাঁদে প্রথম পা রাখলেন নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন। অ্যাপোলো ১১-এর কমান্ডার নিল এ. আর্মস্ট্রং। লোনার মডিউলের পাইলট ছিলেন এডউইন ই. বাজ অলড্রিন জুনিয়র। ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই চাঁদের উদ্দেশ্যে পৃথিবী ছাড়ে এ্যাপলো ১১। ১৯৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর শেষবারের মতো লোনার মডিউল ব্যবহার করা হয়। অ্যাপলো ১১ প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পর নাসা আরেকটি অভিযান পরিচালনা করে চাঁদে। অ্যাডভান্স রিসার্চের জন্য ‘কমান্ড মডিউল’ নামে আরেকটি মডিউল তৈরি করা হয়। কিন্তু অভিযান চলাকালে সেটিতে ক্রটি দেখা দেয়। তখন ব্যাকআপ হিসেবে লোনার মডিউল ব্যবহার করে অভিযাত্রীদের নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়। এই ব্যাকআপটি না থাকলে সকলেই মারা পরতো।
আমরা এই গল্পগুলো জানিনা। জানার চেষ্টাও হয়তো করিনা। নতুন নতুন ইস্যুর আড়ালে হারিয়ে যায় বাঙ্গালির বিশ্বজয় থেকে চন্দ্রজয়ের গর্বের ইতিহাস।
.
তথ্য: প্রথম আলো, ব্লগ, বিদেশি জার্নাল।
ছবি: ইন্টারনেট।