*গাদিরে-খুম এর ঘটনা*
“গাদির” অর্থ জলাশয়। জায়গার নাম খুম।রসুলুল্লাহ (আ) জীবনে একবার মাত্র হজ্ব পালন করেছিলেন। মক্কা শহরকে চির বিদায় জ্ঞাপন করে তিনি জন্মস্থান ত্যাগ করলেন। এই জন্য ইহাকে বিদায় হজ্ব বলা হয় এবং তাঁর দেওয়া এই ভাষনকে “বিদায় ভাষন” বলা হয়, যেহেতু ইহা ছিল জন্মভূমির প্রতি শেষ ভাষন।
মক্কায় অবস্থিত সকলকে বিদায় সম্ভাষণ করে নিজে এহরামের পোশাক না ছেড়েই মদীনার পথে রওনা হলেন। প্রায় সোয়া লক্ষ লোক তাঁর সহযাত্রী ছিলেন।
পথে ১৮ই জিলহজ্ব তারিখে শনিবার দিন জোহর এবং আছরের নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী “জুফায়” যখন তিনি ‘গাদিরে খুম’ নামক জায়গায় উপস্থিত হলেন তখন এই আয়াত নাজেল হইলঃ-
হে রসুল, আপনার রব হইতে যাহা নাজেল করা হয়েছে তা পোউছাইয়া দেন। আর যদি তা না করেন তা হলে তাঁর (আল্লাহর) রেসালাত পৌছাইয়া দেওয়া হল না। আল্লাহ আপনাকে মানব মন্ডলী হতে লইয়া আসবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফের দলকে হেদায়েত করেন না (সুরা মায়েদাঃ৬৭)। ইহা কোরানের সব শেষের আগের আয়াত। শেষ কথাটির প্রকৃত অনুবাদ হইলঃ আল্লাহ আপনাকে মনুষ্য হইতে (সরাইয়া) তাঁর সাথে লাগাইয়া লইতেছেন বা লইবেন।
“গাদির” অর্থ জলাশয়। জায়গার নাম খুম। খুমের জলাশয়ের নিকটবর্তী হইলে উক্ত আয়াত এইরুপে নাজেল হয়েছিলঃ “ইয়া আইউহার রাসুল বাল্লেগ মা উনজিলা ইলাইকা মির রাব্বেকা আন্না আলীউন মাওলাল মোমেনীন। অইন লাম্ তাফআল ফালা বাল্লাগতা রেসালাহু। আল্লাহু ইয়া, সেমুকা মিনান নাস”।
ইহা হতে “আন্না আলীউন মাওলাল মোমেনীন” কথাটি কোরান হতে বাদ দেয়া হয়েছিল ওসমানের (র) প্রকাশনা হতে। মুসা নবীর সঙ্গে যেমন হারুনের নাম কোরানে উল্লেখ করা হয়েছে, সেইরুপে আলী (আ) নামও কোরানে কয়েকবার ছিল। ( ইবনে আবি হাতেম বর্ননা করেছেন, আবু সাঈদ খুদরী হতে উক্ত আয়াত হযরত আলীর শানে নাজেল হয়েছে। ইবনে মারদুইয়া ইবনে ওমর হতে বর্ননা করেন যে, আমরা উক্ত আয়াত রসুলের (আ) এর সামনে এইভাবে পড়তামঃ তফসীরে দোররে মনসুর; মোল্লা জালালউদ্দিন শিউতী; ২য় খন্ড, মিশর থেকে প্রকাশিত)
[ উক্ত আয়াতের সমর্থনে হাদিস দু’টো হলো “মান কুন্তুম মাওলাহু ফাহাজা আলীউন মাওলাহু (বোখারী, মেশকাত)”। হযরত রাসুল (সাঃ) যে হযরত আলী (আঃ) কে হারুন নবীর সাথে তুলনা করেছেন তার প্রমাণ বোখারী ২য় খন্ড ১৯৪ পৃষ্ঠায় এবং ৩য় খন্ডে ৫২৬ পৃষ্ঠায় এবং ইবনে হিসাম ২৭৭ পৃষ্ঠায়। সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্নিত আছে যে, রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ হে আলী, তুমি আমার নিকট ঐ স্থানে আছো যেখানে মুসার নিকট হারুন ছিল। কিন্তু আমি ব্যতীত নবী নেই আমি শেষ নবী। যদিও আরও অনেক প্রমাণ রয়েছে তবে আমি মনে করি জ্ঞানীদের জন্য এই দুটোই যথেষ্ট। ]
কিন্তু কথা হলো দীর্ঘ ২৩ বছর ইসলাম প্রচারের পরে, এত দুঃখ-কষ্ট সহ্য, যুদ্ধ-যন্ত্রনা সহ্য করার পরেও এমন কি জিনিস বাদ রয়ে গেল? যার জন্য রেসালাতই পুর্ন হবে না বলে আল্লাহ ঘোষনা করলেন?
এই আয়াত নাজেল হওয়ার সাথে সাথে রসুল পাক সেখানেই থামিয়া গেলেন এবং বাহন থেকে নেমে গেলেন। সবাইকে একত্র করলেন। সেখানকার “আকাশিয়া” নামক কাটা গাছগুলো পরিষ্কার করে ফেলা হলো। জোহরের নামাজ শেষে উটের গদিগুলো দিয়ে বেদী বা মঞ্চ করা হলো। যেহেতু দিনটি ছিল প্রচন্ড গরমের, সেহেতু বাবলা গাছের সাথে চাদর টানিয়ে রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করা হলো। তারপর তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ননা করলেন। আর বললেনঃ
“ নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস আমানত রেখে যাচ্ছি, যদি এ দু’টিকে আঁকড়ে ধর তাহলে কখনো গোমড়াহ হবেনা। তার একটি হলো আল্লাহর কেতাব-যা আসমান হতে জমিন পর্যন্ত প্রসারিত রজ্জু এওবং অন্যটি হল আমার আহলে বায়াত। এ দুটি কখনো পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হনে এবং এ অবস্থায়ই হাউজে কাউসার আমার সাথে মিলিত হবে। তাই লক্ষ্য রেখ তাদের সাথে তোমরা কিরুপ আচরন করবে” (তিরমিযী)
অন্য বর্ননায় উক্ত হাদিসের শেষে এ কথাটি রয়েছে যে, “আমি আমার আহলে বাইয়েত সম্পর্কে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করে দিচ্ছি”- এ কথাটি রাসুল (সাঃ) তিনবার করে বলেছিলেন। এ হাদিসটি তিরমিযী সুত্রে মেশকাতের ৫৮৯২ এবং ৫৮৯৩ নং হাদিসে সহী সুত্রে বর্নিত আছে হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) হতে এবং মুত্তাকী হিন্দী তাঁর “কানজুল উম্মাল” গ্রন্থে বর্ননা করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “আমি তোমাদেরকে অবশ্যই দুটি জিনিস নিয়ে জিজ্ঞাসা করব। আর তাহলো-কোরান ও আমার আহলে বায়াত। (আরবাইনাল আরবাইন এবং আল্লামা সিউতীর “ইহয়াউল মাইয়্যেত”)
তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মিম্বরে দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললেনঃ “আলাস্ত আওলা বেকুম মিন আনফুসিকুম” অর্থাৎ আমি কি তোমাদের আপন জীবন হতে অধিক প্রিয় নই? সবাই বললেনঃ “কালু বালা”-হ্যা ইয়া রসুলুল্লাহ(সাঃ)। সমবেত জনমন্ডলী হতে তিনবার এই সম্মতি নিবার পর রসুলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলী (আঃ) এর দু’বাহু সমবেত জনমন্ডলীর সামনে তুলে ধরলেন আর বললেনঃ
“মান কুন্তুম মাওলাহু ফাহাজাআলিউন মাওলাহু আল্লাহুম্মা ওয়ালে মান ওয়ালাহু, আদামান আদাহু, অন্সুর মান নাসারা অখ্জুল মান্ খাজালা, ফাল ইয়াছ হাদিল হাজেরুন খায়েরা”।
অর্থাৎ আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। হে আল্লাহ! তুমি তাকে বন্ধু রুপে গ্রহণ কর যে তাকে বন্ধু রুপে গ্রহন করে, তাকে শত্রু রুপে গ্রহন কর যে তার সাথে শত্রুতা করে, এবং তাকে সাহায্য কর যে সাহায্য করে, এবং লাঞ্ছনা দাও তাকে যে লাঞ্ছনা দেয়।
এ হাদীসটি-“আহমদ” সূত্রে “মেশকাতের” ১৫৭ পৃষ্ঠায় ৫৮৪৪ নং হাদিসে বর্নিত আছে, হযরত বারা ইবনে আযেব ও যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হতে। এ – হাদীসটির শেষে বর্ননাকারী বলেনঃ এরপর যখন হযরত আলী (আঃ) এর সাথে হযরত ওমর (রাঃ) এর সাক্ষাত হয়, তখন তিনি আলী (আঃ)-কে বললেনঃ
“ধন্যবাদ হে আবু তালিব পুত্র! তুমি সর্বময় প্রতিটি নারী-পুরুষের প্রশংসিত হয়ে রইল”।
“রেসালাত” মানে প্রতিনিধিত্ব। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহপাকের প্রতিনিধি এবং তাঁর বিদায়ের পুর্বে হযরত আলী (আঃ) –কে তাঁর প্রতিনিধি করে যাবেন এ-ই ছিল আল্লাহ পাকের নির্দেশ। সদর উদ্দিন চিশতী সাহেব তাঁর “মাওলার অভিষেক” বইয়ের ১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেনঃ “আলী (আঃ)-কে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিনিধি হিসাবে আলী (আঃ)-কে জনমন্ডলীতে রসুল (সাঃ) এর পরে তাঁর স্থলাবিষিক্ত করার নির্দেশক সংবাদ নাজিল করা হয়েছিল এর কিছুকাল আগেই। তবে তিনি তা পরে সবার সামনে উপযুক্ত পরিবেশে প্রকাশ করলেন কেননা তিনি ভাল করেই জানতেন হযরত আলী (আঃ) এর এ মাওলাইয়াত বা প্রতিনিধিত্ব হিংসার বশবর্তী হয়ে লোকেরা অস্বীকার করবে এবং আলী (আঃ) এর বংশধরের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলতে থাকবে যার ফলে ধর্ম বিনষ্ট হয়ে যাবে। তাই তিনি গাদীরে খুম নামক জায়গায় এসে জনসম্মুখে ইহা প্রকাশ করলেন; ইহার গুরুত্ব সবাইকে বোঝাবার জন্যই তিনি মক্কা থেকে ফেরার পথে “এহরাম বস্ত্র” পরিহিত অবস্থায় রওনা দিয়েছিলেন।
“গাদিরে খুমের” হাদিসটি “প্রতিনিধিত্ব” অর্থে প্রযোজ্য এবং এর পরেই উপস্থিত জনগন প্রতিনিধিত্ব স্বীকার করে বায়াত গ্রহন করেন। এ হাদিসটি “তাবরানী” ইবনে জরীর, হাকীম, তিরমিযী সবাই জায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হতে ঠিক এভাবেই হাদিসটির বিশুদ্ধতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এমনকি ইবনে হাজর তাঁর “সাওয়ায়েক” গ্রন্থের পঞ্চম পর্বের প্রথম অধ্যায়ের ২৫ পৃষ্ঠায় বর্ননা করে সহীহ হবার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সামান্য বর্ননার ভিন্নতার মাধ্যমে গাদিরে খুমের ঘটনাটি “মুসনদে আহমদ, খাসায়েসুল আলাভীয়া” কিতাবেও বর্ননা করেছেন সহীহ্ হিসাবে। ঐতিহাসিক এ হাদিসটি কমপক্ষে ১১০ জন সাহাবা, ৮৪ জন তাবেঈন, ৩৫৫ জন উলামা, ২৫ জন ঐতিহাসিক, ২৭ জন সংগ্রাহক, ১১ জন ফিকাহ্বিদ, ১৮ জন ধর্মতাত্ত্বিক ও ৫জন ভাষাতাত্ত্বিক কতৃক বর্নিত হয়েছে।
কিছু কিছু লেখক “গাদিরে খুমের” সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকেন, তাদের অজ্ঞতা এবং উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত প্রতিহিংসা হলো এর প্রধান কারণ। ইনারা মুনাফিক মুয়াবীয়া-ইয়াজিদ ও তাদের অনুসরণকারী মোল্লা মৌলবীদের ছিলছিলার প্রেতাত্বা বহন কারী কট্টর মৌলবাদ মুনাফিক। এজন্য তাদের কারো দ্বারা রচিত রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবনী কোন গ্রন্থে “গাদিরে খুমের” এ ঐতিহাসিক ঘটোনাটি পাওয়া যাবেনা। গাদিরে খুমের হাদিসটি – আল্লামা আল আমিনী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “আল গাদিরে” পুর্নতথ্যসহ বর্ননা করেছেন। এর জন্যই তিনি মৌলবাদী খারেজীদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলেন। তবে যারা আল্লাহর রসুল (সাঃ) ও তাঁর প্রতিনীধি মাওলা আলী (আঃ)-কে মনে প্রানে মেনে নিতে পারেনি তারাই এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে। অথচ আল্লাহ বলেন নবী (সাঃ) কোন কাজ করেননা, কোন কথা বলেনা যতসময় না তাঁর আদেশ না আসে।
আল্লামা সৈয়দ সাঈদ আখতার রিজভী রচিত “ইমামত” বইয়ের ৩৭ পৃষ্ঠায় উক্ত গাদিরে খুমের ঘটনা ও হাদিস বর্ননাকারীগণের একটী তালিকা পেশ করেছেন তা দেখে নেয়া যেতে পারে।
গাদিরে খুমের ঘটনার একটি প্রমান হলো, ইমাম আহমদ তাঁর “মুসনদ” গ্রন্থে রিয়াহ ইবনে হারিস হতে দুটি সূত্রে বর্ননা করেছেনঃ
একদল লোক হযরত আলী (আঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আমাদের মাওলা ! আপনার উপর ছালাম। হযরত আলী (আঃ) তাদেরকে প্রশ্ন করলেন তোমরা কারা? তারা বললঃ- হে আমিরুল মুমেনীন ! আমরা আপনার অনুগত ব্যক্তি। হযরত আলী (আঃ) বললেনঃ- আমি তোমাদের মাওলা কিরুপে হইলাম, তোমরাতো আরব! তারা বলল গাদিরের দিনে আমরা রসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি- “আমি যার মাওলা এ আলীও তাঁর মাওলা”।
রিয়াহ বলেন, যখন তারা ফিরে যাচ্ছিল তখন আমি তাদের অনুসরণ করলাম এবং তাদের প্রশ্ন করলাম, আপনার কারা? তারা বলল, আমরা মদীনার আনসার। তাদের মধ্যে আবু আইয়ুব আনসারীও ছিলেন।
হাদিসটি মুতাওয়াতির হবার পক্ষে অপর দলিল হলো এ হাদিস আবু ইসহাক সালবী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে সুরা মাআরিজের তফসীরে দুটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাঃ) গাদিরের দিনে যখন জনগণকে সমবেত করে হযরত আলী (আঃ) এর হাত ধরে ঘোষনা করলেনঃ “মান কুন্তুম মাওলাহু ফাহাজা আলীউন মাওলাহু” – এ খবরটি তখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। হারিস ইবনে নোমান ফিহরি তা শুনে উটে আরোহন করে রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট এসে উটটি বেধে রাসুল (সাঃ) কে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে মোহাম্মদ! তুমি একদিন নির্দেশ দিয়েছিলে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করতে এবং তোমাকে তাঁর নবী হিসাবে স্বীকার করতে, আমরা তা করেছি। পরবর্তীতে বললে, দিনে পাঁচবার নামাজ পড়তে তাও করলাম, যাকাত দাও- তাও দিলাম। পরে রমজান মাসে রোজার নির্দেশ দিলে তাও শুনলাম এবং হজ্জ্ব করার নির্দেশও পালন করলাম। এতো কিছুতেও তোমার সন্তুষ্টি হলো না, অবশেষে তোমার চাচাত ভাইয়ের হাত ধরে তাকে আমাদের উপর শ্রেষ্ট বলে ঘোষনা দিলে, “ আমি যার মাওলা, আলীও তার মাওলা”? – এ কথাটি কি তোমার নিজের পক্ষ থেকে নাকি আল্লাহর পক্ষ থেকে? নবী (সাঃ) বললেনঃ যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নাই সেই আল্লাহর শপথ করে বলছি, ইহা আল্লাহর পক্ষ হতে। হারিস তার বাহনের দিকে ফিরে যেতে যেতে বললো, হে আল্লাহ ! মোহাম্মদ যা বলেছে তা যদি সত্য হয় তবে আমাদের উপর আসমান হতে পাথর বর্ষণ করুন অথবা আযাব প্রেরন করুন। তখনো সে বাহনের নিকট পৌছায়নি, আকাশ থেকে একটি ছোট পাথর তার মাথায় এসে পড়ল এবং পায়খানার রাস্তা দিয়ে বের হয়ে গেল এবং সেখানেই সে মারা গেল। এ ঘটনাটি মাওলানা ফারমান আলী স্বীয় তফসীরে সুরা মা’আরিজের ১-৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন। এবং আরো বহু কিতাবে এর ঘটনাটি বিশ্বস্থ সুত্রে বর্নিত আছে। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একদল হাদিসবেত্তা এ হাদিসটি বীনা বাক্যে গ্রহন করেছেন। যেমন – আল্লামা শাবলানজী মিশরী হতে তাঁর “নুরুল আবসার” গ্রন্থের ১১ পৃষ্ঠায় হযরত আলী (আঃ) এর জীবনীতে হাদিসটি সহীহ সুত্রে বর্ননা করেছেন। হালাবী তাঁর “সীরাহ” গ্রন্থের ৩য় খন্ডের ২১৪ পৃষ্ঠায় বিদায় হজ্জ্বের আলোচনায় হাদিসটি বর্ননা করেছেন এবং “আল মুরাজায়াত” কিতাবের ২৩৬ পৃষ্ঠায় এ হাদিস উল্লেখ আছে এবং ২৪২ পৃষ্ঠায় ঘটনা উল্লেখ আছে।
একদল নির্বোধ কট্টর মৌলবাদী খারেজীগণ বুঝাতে চেষ্টা করেন যে, রাসুল (সাঃ) তাঁর চাচাত ভাই আলী (আঃ)-কে যখন ইয়ামেনে প্রেরণ করেন তখন হযরত আলী (আঃ) এর বিরুদ্ধে একদল নিন্দুকেরা রাসুল রাসুল (সাঃ) এর কাছে অভিযোগ করেছিল। তাই নবী (সাঃ) , আলী (আঃ) সন্তুষ্টি করতে গাদিরে খুম নামক স্থানে এ হাদিসটি প্রকাশ করেন। বাস্তবে আজকেও আমার সামনে একজন এই কথা বলে বসলেনঃ “ আরে ভাই আলী তার চাচাতো ভাই তাই ...আমরাও যেমন আমাদের ছেলে মেয়ে ভাই বোনকে খুশি করতে বলে থাকি অনেক কিছু...সেইরকম তিনিও করেছেন। কিতু গর্ধবের দল এটূকু বুঝেনা, সামান্য খুশি করাবার জন্যে আল্লাহ তায়ালা একটা আয়াত নাজিল করবেন না, নবী (সাঃ) ও এত বড় অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিবেন না। আসলে কান্ডজ্ঞানহীন সাইনবোর্ডধারী খারেজী তাদের স্বার্থাম্বেষী, পরশ্রীকাতর মুনাফিকির দ্বারা সত্য বিষয়টিকে ধামাচাপা দিয়ে যাচ্ছে যুগে যুগে।
হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেনঃ আমি আলী হতে, আলী আমা হতে। এ হাদিসটি সুনান লেখকদের মধ্যে নাসায়ী তাঁর “খাসায়েসুল আলাভীয়া” গ্রন্থে, আহমদ ইবনে হাম্বল তাঁর “মুসনাদের” ৪র্থ খন্ডে, হাকীম নিশাবুরী তাঁর “মুসতাদরাক” গ্রন্থের ৩য় খন্ডে, যাহাবী তাঁর “তালখিসে মুসতাদরাখ” গ্রন্থে বর্ননা করে বলেছেন যে, মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদিসটি সহীহ্। মুত্তাকী হিন্দী তাঁর “কানজুল উম্মাল” ৬ষ্ঠ খন্ডে ইবনে আবি শাউবাহ ও ইবনে জারীর হতে বর্ননা করেছেন এবং সহীহ বলে স্বীকার করেছেন।
হযরত ওমর (রাঃ) বায়াত গ্রহন করতে গিয়ে বললেনঃ ধন্যবাদ ধন্যবাদ হে আবু তালিবের পুত্র ! তুমি আজ হতে সকাল সন্ধ্যা মানে সর্বসময় প্রতিটি মুমীন নর-নারীর নিকট প্রশংসিত হয়ে রইলে। এ ঘটনাটি মেশকাতে ৫৮৪৪ নং হাদিসে বর্নিত আছে।
বায়াত সমাপ্ত শেষ হলে তখন কোরানের সর্বশেষ আয়াত নাজিল হয়ঃ
“ আল ইয়াওমা ইয়া ইসাল্লাযীনা...ইসলামা দ্বীনা (সুরা মায়েদাঃ ৩)”।
অর্থাৎ “আজ কাফের গন তোমাদের দ্বীন হতে নিরাশ হয়ে গিয়েছে। অতএব তাদেরকে আর ভয় করিও না, ভয় কর আমাকে। আজ তোমাদের দ্বীন পরিপুর্ন করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত পরিপুর্নতা দান করলাম এবং তোমাদের দ্বীন ইসলামের উপর আমি রাজি হলাম”।
এই আয়াতটি কোরানে নাজিল কৃত সর্বশেশ আয়াত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলী (আঃ)-কে তাঁর প্রতিনীধি বা স্থলাভিষিক্ত করে ইসলামের পূর্নতা ঘোষনা করলেন।
আজ থেকে ১৪২৪ বছর আগে দশম হিজরির এই দিনে (১৮ ই জিলহজ) বিদায় হজ শেষে
সুরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াত নাজেল হওয়ার পর বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ
(সা.) তাঁর চাচাতো ভাই ও জামাতা আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)-কে ‘গাদীর’
নামক স্থানে নিজের উত্তরসূরি বা স্থলাভিষিক্ত বলে ঘোষণা করেছিলেন।
এই দিনটি ঐতিহাসিক গাদীর দিবস বা ঈদে গাদীর হিসেবে খ্যাত। আজ সেই ঈদে গাদীর উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি ঈদ মুবারক।
সুরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন: "হে রসূল, পৌঁছে
দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি
আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে
মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন
করেন না।"
গাদীরের ওই সমাবেশে এক লাখ বিশ হাজারেরও বেশি সাহাবি ও হজযাত্রী উপস্থিত ছিলেন।
'জুহফা' নামক এলাকার কাছে 'গাদিরে খুম' জলাশয়ের পাশে বিশ্বনবী (সা.)
ঘোষণা করেছিলেন যে " মান কুনতু মাওলা ফাহাজা আলিয়ুন মাওলা" অর্থাত আমি
যাদের মাওলা আলীও তাদের মাওলা বা নেতা।
ইমাম বোখারীসহ ৩৬০ জন সুন্নি মনীষী এ সংক্রান্ত হাদিস বর্ণনা করেছেন। এই
হাদিসটির সনদ ১১০ সাহাবি কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে এবং ২৬ জন মুসলিম মনীষী এর
সনদ ও পন্থা সম্পর্কে আলাদা বই রচনা করেছেন।
বিশ্বনবী (সা.) নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে আলী (আ.)'র মাথায় নিজের হাতে
তাঁর একটি পবিত্র পাগড়ী পরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি গাদিরে খুমে তিন দিন অবস্থান
করেছিলেন। এই তিন দিন ধরে শীর্ষস্থানীয় সব সাহাবিগণসহ সব মুসলিম
নারী-পুরুষ পৃথকভাবে হযরত আলী (আ.)-কে আমিরুল মুমিনিন হিসেবে অভিনন্দন
জানিয়েছিলেন বলে নির্ভরযোগ্য সুন্নি বর্ণনায় এসেছে।
রাসূল (সা.) আরো বলেছেন: “এই আলী আমার ভাই, আমার ওয়াসি এবং আমার পর আমার
প্রতিনিধি হবে। তাই তাঁর আদেশ শোন, তাঁর আদেশ মত কাজ কর।” (তাফসিরে তাবারি,
১৯ খণ্ড, পৃ-১২১,
হযরত আলী সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, আলী প্রেম মানুষের পাপ এমনভাবে
ধ্বংস করে যেমনি আগুন জ্বালানী কাঠ ধ্বংস করে দেয়। একবার হযরত আলী (আ.)-কে
দেখে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছিলেন, তিনটি এমন বৈশিষ্ট্য তোমার রয়েছে
যেটা আমারও নেই, এই তিনটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তুমি এমন একজনকে শ্বশুর হিসেবে
পেয়েছে, যা আমি পাইনি, এমন একজনকে তুমি স্ত্রী হিসেবে পেয়েছে, যে কিনা
আমার কন্যা, আর তৃতীয়টি হচ্ছে তুমি হাসান- হুসাইনের মত সন্তানের পিতা যেটা
আমার নেই।
একবার বিশ্বনবী (সা.) কয়েকজন সাহাবির সঙ্গে ঘরে বসেছিলেন। সেখানে একটি
বিশেষ পাখীর মাংস খাবার হিসেবে আনা হয়েছিল। রাসূল (সা.) বললেন, হে আল্লাহ
তোমার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। এমন সময় দরজায় টোকা
দিলেন আলী (আ.)। রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে নিয়ে সেই মাংস খান।
জাবের বিন আব্দুল্লাহ আনসারি বলেছেন, একবার রাসূল (সা.)-র কাছে আলী (আ.)
এলেন। রাসূল বললেন, আলী (আ.) ও তার অনুসারীরা কিয়ামতে পরিত্রাণপ্রাপ্ত।
মহানবী বলেন, ‘আগামীকাল আমি যুদ্ধের পতাকা এমন একজনের হাতে তুলে দেব যাঁকে আল্লাহ ও রসুল অত্যন্ত প্রিয়ভাজন মনে করেন। তাঁর হাতেই আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত হবে’। হঠাৎ আমরা আলীকে দেখতে পেলাম। তখন সবাই বলে উঠল: তা হলে তিনি হলেন আলী। নবীজি আলীর হাতে পতাকা তুলে দিলেন। সে যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হলো। (সহি বোখারী, হাদিস নং ৮৯৯)
আলী করমুল্লাহ বলেছেন, যিনি বীজ অঙ্কুরোদ্গম করেছেন ও মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর শপথ, নবী-রসুল আমাকে অসিয়ত করে বলেছেন যে, মোমিন আমাকে ভালবাসবে আর মোনাফেক আমাকে ঘৃণা করবে।(মুসলিম)
আবু বকর মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ, মোহাম্মদ বিন বশির, জাকারিয়া, মাসায়াব, সাফিয়া প্রমুখ থেকে রেওয়ায়েত করে আয়েশা বলেন, একদিন সকালে রসুলে করিম একটি কালো চাদরে আবৃত ছিলেন। এমন সময় সেখানে হাসান বিন আলী এলে নবীজি তাঁকে চাদরের মধ্যে টেনে নিলেন। তারপর সেখানে হোসাইন বিন আলী এলেন। নবী করিম তাঁকেও চাদরের মধ্যে নিলেন। তারপর ফাতেমা তুজ জোহরা এলেন। নবী করিম তাঁকেও চাদরের মধ্যে প্রবেশ করালেন। তারপর হযরত আলী এলেন। তাঁকেও নবী সেই চাদরের ভেতর টেনে নিলেন। যখন এই পাঁচজনই চাদরে আবৃত হলেন তখন রসুলে করিম বললেন, এ পাঁচজনই আমার আহলে বাইত অর্থাৎ আদর্শিক গৃহের অধিবাসী। (মুসলিম, ২য় খ-, পৃ.২৮৩)
নবী করিম আম্মার ইয়াসারকে বললেন, হে আম্মার, তুমি যদি আলীকে কোনও পথে চলতে দেখ, এবং অপরাপর সাহাবাদের ভিন্ন পথে চলতে দেখ (আলীর পথ ভিন্ন) মনে রেখ, তখন আলীর পথেই তোমরা যাবে ও অন্য সকলের অনুসৃত পথ পরিত্যাগ করবে। কেননা আলী তোমাদের কখনও ক্ষতিকর পথে নেবেন না এবং হেদায়েতের পথ ছাড়তে দেবেন না। (কাঞ্জুল উম্মাল, ৬ষ্ঠ খ-, পৃ.১৫৬)
আরও একবার নবীজি বলেছিলেন, হে আলী, আমার উম্মতদের মধ্যে সে অতিনিকৃষ্ট হতভাগা যে তোমাকে হত্যা করবে। (আল বেদায়া ও নেহায়া, ৭ম খ-, পৃ. ৩২৬)
হে আলী, খুব শীঘ্রই আমার দেহত্যাগের পর এই উম্মত তোমার প্রতি অবাধ্যতা প্রকাশ করবে। যেহেতু তুমি আমার পথ অনুসরণ করবে এবং আমার সুন্নত প্রচার করবে সেহেতু তোমাকে হত্যা করা হবে। হে আলী, যে তোমাকে ভালবাসে সে আমাকেও ভালবাসে। এবং যে তোমাকে হিংসা করবে সে আমাকেও হিংসা করবে। [অতঃপর আলীর মাথা ও চুলের দিকে তাকিয়ে বললেন] আর এই পবিত্র দাড়ি ও এই মাথা রক্তে রঞ্জিত হবে। (কাঞ্জুল উম্মাল, ২য় খ-, পৃ.১৫৭)
আমি আলীর প্রাণ, আলী আমার প্রাণ। (ইউনাবিল মোয়াদ্দা, ১ম খ-, পৃ.১৭৩)
হাদিসে এসেছে, রাসূল
(সা.) বলেছেন, আমি জ্ঞানের নগর আর আলী হল তার দরজা। অর্থাত বিশ্বনবী
(সা.)’র জ্ঞানের শহরে প্রবেশের জন্য আলী (আ.) নামক মাধ্যম বা দরজা দিয়েই
ঢুকতে হবে।
এ কারণেই মহান আল্লাহর নির্দেশে বিশ্বনবী (সা.) আলী
(আ.)-কে তাঁর উত্তরসূরি বা স্থলাভিষিক্ত তথা মুসলমানদের ইমাম বা নেতা বলে
ঘোষণা করেছিলেন পবিত্র গাদীর দিবসে। এই ইমামত হচ্ছে নবুওতেরই ধারাবাহিকতা।
তাবুকের যুদ্ধে: রাসূলুল্লাহ (স.) আলী (আ.) এর উদ্দেশে বলেন-
“[হে আলী!] তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি আমার কাছে ঠিক তদ্রূপ যেমন
হারুন (আ.) ছিলেন মুসা (আ.) এর কাছে। তবে পার্থক্য এই যে, আমার পরে আর কোনা
নবী নেই (আসবে না)।’
অর্থাৎ যেভাবে হারুন (আ.) কোনরকম ব্যবধান ছাড়াই মুসা (আ.) এর স্থলাভিষিক্ত ছিলেন তুমিও আমার খলিফা ও স্থলাভিষিক্ত।
দশম হিজরিতে: বিদায় হজ থেকে ফেরার পথে ‘গাদীরে খুম’ নামক স্থানে
হাজিদের এক বিশাল সমাবেশে মহানবী (স.) আলী (আ.) কে মুসলমান ও মু’মিনদের
নেতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।
তিনি বলেন-
“আমি যার মাওলা (অভিভাবক) আলীও তার মাওলা।” এই বাক্যটি তিনি তিনবার
পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। এরপর বললেন:- “হে আল্লাহ! তাকে তুমি ভালবাসত যে
আলীকে ভালবাসে ও তুমি তার প্রতি শত্রুতা পোষণ কর যে আলীর প্রতি শত্রুতা
পোষণ করে; তুমি সহযোগিতা কর তাকে যে আলীকে সহযোগিতা করে, তুমি তাকে নিঃসঙ্গ
কর যে আলীকে একা রাখে এবং সত্যকে আলীর সাথে রাখ তা যে দিকেই থাক না কেন”।
হে লোকসকল! আপনারা অবশ্যই যারা উপস্থিত আছেন তারা এই বাণীটি অনুপস্থিতদের
নিকট পৌঁছিয়ে দিবেন। রাসূলের (সা.) বক্তব্য শেষ হলে জিবরাঈল (আ.) আবার
দ্বিতীয়বারের মত অবতীর্ণ হয়ে তাঁকে এই বাণীটি পৌঁছে দেন:
আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম ও আমার নেয়ামত বা অবদানকে তোমাদের
উপর সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা
মায়িদা-৩)
রাসূল (সা.) এই বাণী পেয়ে মহা-আনন্দিত হলেন এবং বললেন- মহান আল্লাহর শুকর
করছি যে তিনি দ্বীনকে পরিপূর্ণ ও তাঁর নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন এবং মহান
প্রভু আমার রেসালাতের বা নবুওতি দায়িত্বের ও আলীর বেলায়াতের বা
অভিভাবকত্বের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন।
মুষ্টিমেয় সংখ্যক লোক ছাড়া কেউ আলীর মর্যাদা তথা আল্লাহর বন্ধুত্ব রক্ষা করে না। সেকথা মহানবী আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে বলে গেছেন, আলীর বিরোধিতাই ইসলামের প্রথম ভাঙন। (ইউনাবিল মোয়াদ্দা, ২য় খন্ড, পৃ.৩১৩)
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আল্লাহর রাসূল (স.) তাঁর বক্তব্যের শুরুতে
বলেছিলেন: “আমি কি তোমাদের ওপর তোমাদের নিজেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব রাখি না?”
তখন উপস্থিত সব মুসলমান দাঁড়িয়ে রাসূল (স.) এর এ কথার প্রতি সম্মতি জানান।
অতএব, বিষয়টি হতে স্পষ্ট হয় যে, এই হাদিসে 'মাওলা' বলতে মু’মিনদের ওপর
শ্রেষ্ঠত্ব ও তাদের পূর্ণ কর্তৃত্বকে বোঝানো হয়েছে। অতএব, এটা স্পষ্ট যে,
আল্লাহর রাসূল (স.) যে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ছিলেন উম্মতের ক্ষেত্রে তা
তিনি আলী(আ.) এর জন্যও নিশ্চিত করে যান।
হযরত মুহাম্মাদ (সা.) -“‘মান কুনতু মাওলা ফাহাজা
আলিয়ুন মাওলা’ অর্থাৎ আমি যাদের মাওলা
আলীও তাদের মাওলা বা নেতা”-
কথাটি বলার পর ঐ স্থানে তিন দিন অবস্থান করেছিলেন। এর করণ ছিল, তখন সকলের নিকট হতে বাইয়াত
গ্রহণ করেছিলে। উপস্থিত সকল নারী ও পুরুষের নিকট হতে।
মোহাম্মদী ইসলামের সূচনাকাল থেকে আলী মহানবীর সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে ছিলেন। হেরাগুহা থেকে আরম্ভ করে প্রতিকূলতাময় জলে স্থলে রণাঙ্গনে সর্বত্রই তিনি ছিলেন নবীজির সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহকারী।
নবী নিজেই বলেছেন, আলী কোরানের সাথে, কোরান আলীর সাথে। (নূর উল আবসার, পৃ. ৮৯)
আমার পর আলী মোমিনদের অভিবাবক। (তিরমিজি, ৫ম খ-, পৃ.৬৩২)
আলী মোমিনদের মেরুদণ্ড। (কাঞ্জুল উম্মাল, ১২তম খ-, পৃ. ২০৪, হাদিস নং ১১৫৮)
আলী হলেন জাহান্নাম ও জান্নাতের বন্টনকারী। (ইউনাবিল মোয়াদ্দা, ১ম খ-, পৃ.১৬৩)
আলী অর্থ সর্বোচ্চ। আল্লা’র অপর এক নাম আলী।
## আলীর তুলনা ভাষার তুলিতে কখনও যায় কি আঁকা
##
অসীম সাগর কলসির মাঝে কখনও যায় না রাখা
# #
আল্লাহ তাআলা তাঁর "কুদরত" প্রকাশ করেছেন।
"অামিন"
No comments:
Post a Comment