Monday, August 17, 2020

চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে একটি শিক্ষণীয় গল্পঃ

 এক দেশে ছিলো এক পিপড়া। সে প্রতিদিন ৮ টায় অফিসে ঢুকতো। তারপর কারো সঙ্গে সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গে কাজে বসে যেত। সে যে পরিমাণ কাজ করত, তাতে কোম্পানির উৎপাদন হতো প্রচুর এবং এর ফলে সে আনন্দের সঙ্গেই জীবন নির্বাহ করত।

ওই অফিসের সিইও সিংহ অবাক হয়ে দেখত, এই পিঁপড়াটি কোনো ধরনের সুপারভিশন ছাড়াই প্রচুর কাজ করছে। সিংহ ভাবল, পিঁপড়াকে যদি কারও সুপারভিশনে দেওয়া হয়, তাহলে সে আরও বেশি কাজ করতে পারবে।
কয়েক দিনের মধ্যেই সিংহ একটি তেলাপোকাকে পিঁপড়ার সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ দিল। সুপারভাইজার হিসেবে এই তেলাপোকাটির ছিল দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, আর সে দুর্দান্ত রিপোর্ট লিখতে পারত।

তেলাপোকাটি প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিল, এই অফিসে একটি অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম থাকা উচিত। কয়েক দিনের মধ্যেই তেলাপোকার মনে হলো, তার একজন সেক্রেটারি দরকার, যে তাকে রিপোর্ট লিখতে সাহায্য করবে। … সে একটা মাকড়সাকে নিয়োগ দিল এই কাজে যে সব ফোনকল মনিটর করবে, আর নথিপত্র রাখবে।

সিংহ খুব আনন্দ নিয়ে দেখল যে তেলাপোকা তাকে প্রতিদিনের কাজের হিসাব দিচ্ছে আর সেগুলো বিশ্লেষণ করছে গ্রাফের মাধ্যমে। ফলে খুব সহজেই উৎপাদনের ধারা সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাচ্ছে এবং সিংহ সেগুলো বোর্ড মিটিংয়ে ‘প্রেজেন্টেশন’ আকারে পেশ করে বাহবা পাচ্ছে।

কিছুদিনের মধ্যেই তেলাপোকার একটি কম্পিউটার ও লেজার প্রিন্টার প্রয়োজন হলো এবং এগুলো দেখভালের জন্য আইটি ডিপার্টমেন্ট গঠন করল। আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ পেল মাছি।

আমাদের কর্মী পিঁপড়া, যে প্রতিদিন অফিসে এসে প্রচুর কাজ করে মনের সুখে গান গাইতে গাইতে বাসায় ফিরত, তাকে এখন প্রচুর পেপার ওয়ার্ক করতে হয়, সপ্তাহের চার দিনই নানা মিটিংয়ে হাজিরা দিতে হয়।

নিত্যদিন এসব ঝামেলার কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটায় উৎপাদন কমতে লাগল, আর সে বিরক্ত হতে লাগল। সিংহ সিদ্ধান্ত নিল, পিঁপড়া যে বিভাগে কাজ করে, সেটাকে একটা আলাদা ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করে সেটার একজন ডিপার্টমেন্ট প্রধান নিয়োগ দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়।

সিংহ ঝিঁঝিপোকাকে ওই ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিল। ঝিঁঝিপোকা প্রথম দিন এসেই তার রুমের জন্য একটা আরামদায়ক কার্পেট ও চেয়ারের অর্ডার দিল।
কয়েক দিনের মধ্যেই অফিসের জন্য স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান তৈরি করতে ঝিঁঝি পোকার একটি কম্পিউটার ও ব্যক্তিগত সহকারীর প্রয়োজন হলো। কম্পিউটার নতুন কেনা হলেও ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে ঝিঁঝিপোকা নিয়োগ দিল তার পুরোনো অফিসের একজনকে।

পিঁপড়া যেখানে কাজ করে, সেখানে আগে ছিল চমৎকার একটা পরিবেশ। এখন সেখানে কেউ কথা বলে না, হাসে না। সবাই খুব মনমরা হয়ে কাজ করে। ঝিঁঝিপোকা পরিস্থিতি উন্নয়নে সিংহকে বোঝাল, ‘অফিসে কাজের পরিবেশ’ শীর্ষক একটা স্টাডি খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। পর্যালোচনা করে সিংহ দেখতে পেল, পিঁপড়ার বিভাগে উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।

কাজেই সিংহ কয়েক দিনের মধ্যেই স্বনামখ্যাত কনসালট্যান্ট পেঁচাকে অডিট রিপোর্ট এবং উৎপাদন বাড়ানোর উপায় বাতলে দেওয়ার জন্য নিয়োগ দিল। পেঁচা তিন মাস পিঁপড়ার ডিপার্টমেন্ট মনিটর করল, সবার সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলল। তারপর বেশ মোটাসোটা একটা রিপোর্ট পেশ করল সিংহের কাছে। ওই রিপোর্টের সারমর্ম হলো, এই অফিসে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মী বেশি। কর্মী ছাঁটাই করা হোক।

পরের সপ্তাহেই বেশ কয়েকজন কর্মী ছাঁটাই করা হলো। বলুন তো, কে সর্বপ্রথম চাকরি হারাল? ওই হতভাগ্য পিঁপড়া। কারণ, পেঁচার রিপোর্টে লেখা ছিল, ‘এই কর্মীর মোটিভেশনের ব্যাপক অভাব রয়েছে এবং সর্বদাই নেতিবাচক আচরণ করছে, যা অফিসের কর্মপরিবেশ নষ্ট করছে।

এবার ভাবুন তো, আপনার পজিশানটা কী আপনার অর্গানাইজেশনে ?

গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদের মেয়াদ বাড়লে কী হতো

 বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের নতুন নিয়োগ নিয়ে আলোচনা সম্ভবত কখনো শেষ হবে না। বিশেষ করে এক ব্যক্তির জন্য আইন বদল করার এই উদাহরণ বাংলাদেশের জন্য বিরল উদাহরণ না হলেও ব্যতিক্রম তো বটেই। এ নিয়ে প্রথম আলোয় একটি উপসম্পাদকীয় লিখেছিলাম গত ২৭ জুলাই। সেই উপসম্পাদকীয়র প্রতিক্রিয়া নিয়েই এই লেখা। আগের লেখাটির নিচে লেখকের ই-মেইল ঠিকানা দেওয়া ছিল। তাতে কিছু প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। অনলাইনে পাঠকেরা তাৎক্ষণিক কিছু মন্তব্য করেছেন। তবে আমার লেখার বিষয় প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাওয়া দুটি টেলিফোন।

প্রথম টেলিফোনটি করেছিলেন দেশের একজন বিশিষ্ট নাগরিক। তিনি নিজেই একসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ গভর্নর ও সবচেয়ে ভদ্রলোক গভর্নর নিয়ে তাঁর নিজস্ব কিছু মতামত আছে। নানা বিষয় নিয়ে আলোচনার মধ্যেই তিনি পুরোনো একটি ঘটনার কথা বললেন। সেটি এখানে বলা যাক।

ফখরুদ্দীন আহমদ তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিশৃঙ্খলা করার দায়ে তিনি ১০ জন সিবিএ নেতাকে চাকরিচ্যুত করেছিলেন। স্বাভাবিক কারণেই তৎকালীন বিএনপি সরকারের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা সবাই ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মী। আবদুল মান্নান ভূঁইয়া তখন বিএনপির মহাসচিব। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর চাপ তৈরি হলো। কিন্তু গভর্নর অবিচল, তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়। গল্পের শেষটা হলো: একদিন ফখরুদ্দীন আহমদকে ডাকলেন সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বললেন, রাজনীতি করতে হয় সবাইকে নিয়ে। দলের মত মানতে হয়। তিনি যেন চাকরিচ্যুত ব্যক্তিদের কিছু লঘু শাস্তি দিয়ে আবার স্বপদে বহাল করেন। তখন ফখরুদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বলেছেন, তাঁর কথা অনুযায়ী সবাই যাঁর যাঁর পদে চাকরি ফিরে পাবেন। অফিসে ফিরে আজই আদেশ জারি করবেন, তবে তিনি নিজে আর পরের দিন থেকে আসবেন না। এ কথার পরে প্রধানমন্ত্রী আর কিছু বলেননি। ফখরুদ্দীন আহমদ মেয়াদের শেষ দিন পর্যন্ত গভর্নর পদে বহাল ছিলেন।

গল্পের প্রথম অংশ নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। কারণ, ঘটনাটি সে সময় যথেষ্ট প্রচার পেয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিশৃঙ্খলা ও গভর্নরের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কারণে তৎকালীন বিএনপি-সমর্থিত অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সিবিএর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৩ সালের ২৮ অক্টোবর এবং ১০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয় ৩০ অক্টোবর। তাঁরা আর চাকরি ফিরে পাননি। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎপর্বের সত্যতা বলতে পারবেন একমাত্র তাঁরাই। তবে এই গল্প এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রচলিত আছে।

দ্বিতীয় ফোনটি পাই লেখা ছাপা হওয়ার পরের দিন। এবারের ফোনদাতা একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। অর্থ মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছেন। সাবেক ও প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের সচিবালয়ে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর বলা ঘটনাটি ফখরুদ্দীন আহমদকে নিয়েই। তার আগে বলে রাখি, গভর্নরের মেয়াদ বাড়ছে—এই তথ্য নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরেই কাজ করছিলেন প্রথম আলোয় আমার সহকর্মী ফখরুল ইসলাম। তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র থেকে জানতে পারেন, এম সাইফুর রহমানও তাঁর সময়ের গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান মির্জ্জা এ বি আজিজুল ইসলামের মেয়াদ বাড়াতে মন্ত্রিপরিষদে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রিসভা সেই অনুমোদন দেয়নি। কিন্তু টেলিফোনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই সাবেক কর্মকর্তাটি জানালেন ভিন্ন একটি তথ্য। তিনি বললেন, এম সাইফুর রহমান ফখরুদ্দীন আহমদের মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর তা উত্থাপন করেননি, প্রস্তাবটি ফিরিয়ে আনেন।

কেন ফিরিয়ে আনেন? প্রথম ঘটনাটির সঙ্গে এর কিছুটা সংশ্লিষ্টতা আছে। সিবিএ নেতাদের চাকরিচ্যুতির ঘটনায় দলের মধ্যে একটি অংশ বিক্ষুব্ধ ছিল। নতুন করে বিরোধিতায় নামেন ব্যাংকের মালিকানা আছে, মন্ত্রিসভার এমন কয়েকজন সদস্য। এর মধ্যে তিনি বিশেষ করে বললেন এম মোরশেদ খান ও মির্জা আব্বাসের কথা। তাঁরা এর বিরোধিতা করে পাল্টা লবি শুরু করলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কথায় এম সাইফুর রহমান মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবটি মন্ত্রিপরিষদ থেকে প্রত্যাহার করে নেন। নইলে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।

সিনেমায় গল্প বলার নানান রীতি আছে। একসঙ্গে কয়েকটি ঘটনা এগিয়ে যায়, শেষটি এক বিন্দুতে মিলে যায়। শুরুতে পরস্পর সম্পর্কহীন মনে হলেও শেষে দেখা যায় সব ঘটনাই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এর নাম হচ্ছে হাইপার লিংক সিনেমা। হাইপার লিংক সিনেমার রীতি প্রথম দেখা গিয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ সিনেমায়। তবে এ জন্য বেশি বিখ্যাত মেক্সিকান পরিচালক আলেজান্দ্রো গনজালেস ইনারিতু। তাঁর ‘ডেথ ট্রিলজি’: ‘অ্যামোরেস পেররোস’, ‘২১ গ্রামস’ ও ‘বাবেল’ হাইপার লিংক সিনেমার সেরা উদাহরণ।

ওপরে বলা দুটি ঘটনার একটি হাইপার লিংক কিন্তু আছে। এর সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিতর্কটি জড়ানো যায়। বিএনপির নেতৃত্বের একটি অংশ ফখরুদ্দীন আহমদের মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে আপত্তি করলেও বিচারপতিদের বয়স ৬৫ থেকে ৬৭ করার প্রস্তাবে কোনো আপত্তি দেখেননি। এ জন্য সংবিধানের সংশোধনী আনতে হয়েছিল, যা সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী নামে পরিচিত।

‘বিএনপি: সময়-অসময়’ গ্রন্থে মহিউদ্দিন আহমদ এ নিয়ে লিখেছেন, ‘পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, এ নিয়ে বিএনপি ছক কষছিল। বিএনপি সরকার সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসর নেওয়ার বয়সসীমা ৬৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬৭ বছর করে। আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে যে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার মতলবেই এই সংশোধনী আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ বিচারপতি কে এম হাসানকে বিএনপির পছন্দের লোক হিসেবে প্রচার করে। এই প্রচারের সত্যতা ছিল। বিচারপতি হাসান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং এর আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। জিয়াউর রহমানের সরকার তাঁকে ইরাকের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেছিল। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য একবার তিনি বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন।’

বিচারপতিদের বয়স বাড়ানোর প্রবক্তা হিসেবে তৎকালীন আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদকে মনে করা হয়। ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র: ১৯৯১ থেকে ২০০৬’ গ্রন্থে মওদুদ আহমদ লিখেছেন, ‘বয়স বাড়ানোর এই প্রস্তাব কোনো অবস্থাতেই রাজনৈতিক বিবেচনাধীন বিষয় ছিল না। কারণ, কোনো বিচারপতি কীভাবে পরবর্তী কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার জন্য সর্বশেষ বিচারপতি হিসেবে কত দিন বেঁচে থাকবেন, তা কারও জানার কথা নয়। পুরোপুরিভাবে জাতীয় স্বার্থে বিচার বিভাগকে জোরদার করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টকে সংবিধানের রক্ষক হিসেবে কার্যকরভাবে কর্মসম্পাদনের জন্য যোগ্যতর নেতৃত্ব, মেধা ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে পরিচালনা করার উদ্দেশ্যেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।’

যে যা–ই যুক্তি দিক না কেন, বিচারপতিদের বয়স বাড়ানোর ফল মোটেই ভালো হয়নি। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী, ফলাফলও ছিল খারাপ এবং বিএনপির জন্য বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। তবে আজকের আলোচনা অন্য বিষয় নিয়ে। কে এম হাসান অপারগতা প্রকাশের পর রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেই বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনা হস্তক্ষেপে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে এই পদ ছেড়ে দিতে হলে সেই ফখরুদ্দীন আহমদই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন, যাঁর মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের মত ছিল না। আমরা সবাই জানি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে তিনি কিন্তু প্রথম পছন্দ ছিলেন না। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অপারগতা জানালে ফখরুদ্দীন আহমদ সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন।

আবারও আমরা সেই হাইপার লিংক সিনেমার গল্প বলার রীতিতে ফিরে যাই। গভর্নর হিসেবে ফখরুদ্দীন আহমদ মেয়াদ শেষ করেন ২০০৫ সালের ৩০ এপ্রিল। এম সাইফুর রহমান বয়স বাড়িয়ে মেয়াদ বৃদ্ধিতে সফল হলে ফখরুদ্দীন আহমদ ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিন পর্যন্ত এই পদে থাকতেন। তাহলে কি একজন কর্মরত গভর্নর হিসেবে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তাঁর নামটি বিবেচনায় আসত? সম্ভাবনা খুবই কম।

দুই বছর বয়স বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিতে গ্রহণ এবং আরেকটি প্রস্তাব ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি না ঘটলে ইতিহাস কি অন্য রকম হতে পারত? এমন এক প্রশ্নের আসলে যার উত্তর নেই। যে যাঁর মতো উপসংহারে যেতে পারেন অবশ্য।

শওকত হোসেন: সাংবাদিক।

Monday, August 10, 2020

আপনার মতে, রামায়ণ ও মহাভারতে সবচেয়ে অবহেলিত চরিত্র কে এবং কেন?

 প্রথমে রামায়ণ প্রসঙ্গেই কথা বলব: আমার মতে, রামায়ণ সবথেকে অবহেলিত চরিত্র উর্মিলা।

লক্ষণের স্ত্রীর নাম উর্মিলা। রাজা জনকের একমাত্র** কন্যা উর্মিলা, সীতা দেবীর বোন। তার স্বামী লক্ষণ অগ্নিসাক্ষী করে তাকে বিবাহ করেছিলেন, আর্য পুত্র বৈদিক মন্ত্র পাঠ করে তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালন লক্ষণ করেননি। এমনকি উর্মিলাকে বোঝার চেষ্টাও লক্ষণ করেননি।

রামের 14 বছর বনবাস হয়। সীতা, রামের সহধর্মিনী হওয়ায় রামচন্দ্রের সাথে বনে যেতে চেয়েছিলেন। স্বামীর সাথে স্ত্রীর যাবেন এটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু লক্ষণও তার দাদার সাথে 14 বছরের জন্য বনবাসের শাস্তি গ্রহণ করে। এবং 14 বছরের জন্য দাম্পত্য জীবন থেকে তার স্ত্রী উর্মিলাকে বঞ্চিত করেন। উর্মিলা চেয়েছিলেন রাম লক্ষণ এবং সীতার সাথে বনবাসে যেতে। তার জন্য তিনি কাকুতি মিনতিও করেন লক্ষণ এর কাছে। কিন্তু লক্ষণ কিছুতেই রাজি হননি উর্মিলা কে সঙ্গে নিয়ে যেতে। তিনি উর্মিলা কে আদেশ করেন, যে এই 14 বছর উর্মিলা যেন একনিষ্ঠভাবে তাদের পিতা-মাতার সেবা করেন।

উর্মিলা কে অবহেলিত করা হয়েছে। রঘুনন্দন লক্ষণ একজন সূর্যবংশীয় স্বামী হিসেবে তাকে অবহেলা করেছেন। রামচন্দ্র লক্ষণ কে বনবাসে যেতে বারণ করেছিলেন কিন্তু কখনই বলেননি যে, উর্মিলার প্রতি লক্ষণের একটা দায়িত্ব আছে এবং সেই দায়িত্বটা লক্ষণ পালন করছেন না।

অভিমানী উর্মিলা এর প্রতিশোধ নিয়েছিলেন নিজেকে কষ্ট দিয়ে। ওই 14 বছর সময়টায় তিনি ব্রহ্মচর্য পালন করেছিলেন। রাজকন্যা শুতেন খড় বিছিয়ে মাটিতে। ফল ছাড়া আর কিছু আহার করতেন না।

14 বছর পর যখন রামচন্দ্র, সীতা মাতা এবং লক্ষণ চলে আসেন। তখন উর্মিলা ভঙ্গ করেন তার ব্রহ্মচর্য। সংসার করেছেন লক্ষণের সাথে। অঙ্গদ এবং ধর্মকেতু নামের দুই সন্তানের জননী হয়েছিলেন।

উর্মিলার এই আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য। রাজস্থানের ভরতপুর জেলায় ১৮৭০ সালে ভরতপুর জেলার শাসক রাজা বলবন্ত সিং একটি মন্দির নির্মাণ করেন। ওই মন্দিরে উর্মিলা এবং লক্ষণের পুজো করা হয়।

মহাভারতের সবথেকে উপেক্ষিত চরিত্র বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় এর মতে সূর্যপুত্র কর্ণ। পথের পাঁচালী উপন্যাসে বিভূতিভূষণ ছোট্ট অপুর মুখ দিয়ে অসাধারণভবে ব্যক্ত করেছেন বীরযোদ্ধা কর্নের অবহেলার কাহিনী। ছোট্ট অপুর শিশু চোখ দিয়ে ঝরেছে বিভূতিভূষণের অশ্রু।

বিভূতি বাবুর অপরূপ, অসাধারণ, যুগান্তকারী সাহিত্যিক বর্ণনার ঊর্ধ্বে উঠে কোন কিছু লেখার ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু বিভূতিবাবু বোধহয় বন্দ্যোপাধ্যায় টাইটেল থাকার জন্যই সূর্য পুত্রের প্রতি আপনার দুর্বলতা তৈরি হয়ে গেল। মাস্টারমশাই। আপনার চোখ এড়িয়ে একলব্য বাদ চলে গেল, স্যার। দেখলেন না, ওই সিডিউল ট্রাইপ ছেলেটাকে।

দ্রোণাচার্যের কাছে অস্ত্র বিদ্যা শেখার উদ্দেশ্যে একলব্য এসেছিলেন। নিচু জাত বলে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো। বঞ্চিত করা হলো বিদ্যা লাভ করা থেকে। নিচু জাত আবার অস্ত্রশিক্ষা নিয়ে কি করবে, ট্যালেন্ট যদি থাকে তাহলেও সেই ট্যালেন্টএর মূল্য কি? ওদের কোদাল চালানো শেখা প্রয়োজন। দ্রোণাচার্যের কাছে অস্ত্রশিক্ষা নেবেন রাজপুত্ররা। রাজা ব্যাটা রাজা হবে।

দুর দুর করে একলব্য কে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন দ্রোণাচার্য। কিন্তু একগুঁয়ে সিডিউল ট্রাইব ছেলেটা গুরু দ্রোনাচার্যের মূর্তি তৈরি করে তাকে গুরু হিসেবে গ্রহণ করে ধনুর্বিদ্যা অনুশীলন করতে থাকলেন। নিষ্ঠা, তাকে ভারতের শ্রেষ্ঠ ধনুর্বিদে পরিণত করল। চন্দ্রবংশের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুর্বিদ অর্জুনকে পর্যন্ত টেক্কা দেওয়ার মতন ক্ষমতা অধিকার করলেন একলব্য।

হীরে অন্ধকারেও চকচক করে। প্রতিভা লুকিয়ে থাকে না। ধরা পরে গেলেন একলব্য। পড়বি তো পড় দ্রোণাচার্যের সামনেই।

-কিভাবে শিখলে এই ধনুর্বিদ্যা? কে তোমার গুরু?

অরণ্য প্রকৃতির কোলে থাকা সহজ সরল ছেলে একলব্য। ধনুর্বিদ্যা তে সে অনেক অনেক পারদর্শী, কিন্তু কুটকাচালি, কূটনীতি সে বোঝেনা। সরল ভাষায় উত্তর দিল-

"গুরু দ্রোণাচার্য আপনি আমার গুরুদেব। আপনি প্রত্যাখ্যান করার পর, আমি আপনার মূর্তি তৈরি করে, তার সামনে ধনুর্বিদ্যা অনুশীলন করেছি এবং আপনার আশীর্বাদে আমি আজ সফল হতে পেরেছি।"

দ্রোণাচার্য খুব ভালো মতনই জানতেন যে তার মাটির পুতুলটা হয়তো একলব্যের মধ্যে কনফিডেন্স গ্রো করেছে। কিন্তু ধনুর্বিদ্যায় একলব্য পারদর্শিতা অর্জন করেছেন অনুশীলনের মাধ্যমে। যার কোন বিকল্প হয় না।

রাজার ব্যাটাই রাজা হবে।

গুরু দ্রণ তার জীবিকা নির্বাহন কারী ধনুক বান পাশে সরিয়ে রাখলেন। একলব্য এর কাছে এগিয়ে গেলেন। অহংকারী ক্রুদ্ধ গলায় বললেন-

কাউকে না জানিয়ে তার জিনিস গ্রহণ করাকে চুরি বলা হয়, একলব্য।

-চুরি?!

- চুরি! চুরি! হ্যাঁ একে চুরি বলা হয়। একলব্য।

চুরির অপবাদ শুনে ভয় পেয়ে গেলেন একলব্য। এই ভয়টা ওদের আছে। এখনো এই ভয়টা ওদের আছে। দেখবেন মাত্র 10 হাজার টাকা ঋণ শোধ করতে না পারার জন্য একজন কৃষক গলায় দড়ি দেয়। ওদিকে 10 লক্ষ কোটি টাকা চুরি করে নিয়েও বুক বাজে বিদেশে চলে যায়, রাজার বেটা রাজা।

একলব্য কে একটু ভয় দেখানোটাই দ্রোণাচার্যের উদ্দেশ্য ছিল। এবার উনি আসল প্রসঙ্গে আসলেন। বললেন-.তুমি যে আমার কাছ থেকে এত সুন্দর ধনুর্বিদ্যা শিখে বিশ্বের সেরা ধনুর্ধর এ পরিণত হলে তার জন্য আমাকে গুরুদক্ষিণা দেবে না?

চমকের ওপর চমক। বিপুল সম্পদের অধিকারী রাজগুরু দ্রোণাচার্যকে কি গুরুদক্ষিণা দিতে পারে এক সাধারণ সিডিউল ট্রায়প ছেলে? কিবা আছে এদের কাছে? কি বা পেয়েছে এরা? দু'মুঠো ভাত জোগাড় করতেই তো কেটে যায় সারাবেলা কি দেবে একলব্য, গুরু দ্রোণাচার্যকে?

কেন?

আত্মত্যাগ, বড় হবার স্বপ্ন, মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ইচ্ছে, আর রাজার ব্যাটাকে রাজা করার প্রজাতান্ত্রিক মর্যাদা!

গুরু দ্রোণাচার্য সেদিন যদি একলব্যের প্রাণ চাইতেন তাহলে হয়তো তার ওপর একটু হলেও করুনা করা হত। দ্রোণাচার্য একলব্য এর কাছে চাইলেন। তার ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল।

মহাভারতে লেখা নেই। কিন্তু আমি জানি, সেদিন একলব্য চোখের জল ফেলেনি। কারণ হাজার হাজার বছর ধরে আত্মত্যাগ করতে করতে ওদের ডিএনএ গুলো চোখকে কাঁদতে বলার প্রোগ্রামিং মুছে দিয়েছে।

রাজার ব্যাটাই রাজা হল

একলব্য তার।কোমর থেকে তরোয়াল টা কে বার করে। তার ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল টা কেটে গুরুদক্ষিণা হিসেবে দিয়ে দিলেন চন্দ্রবংশের স্বনামধন্য গুরু দ্রোণাচার্য কে।

রাজার ছেলে রাজা হবেই

এখন বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী ভারতবর্ষে খেলার জন্য শ্রেষ্ঠ কোচকে দেওয়া হয় দ্রনাচার্য পুরস্কার। শ্রেষ্ঠ খেলোয়ারদের দেওয়া হয় অর্জুন পুরস্কার।

আমি জানিনা। তবে আমার মনে হয় ওই অনুষ্ঠান গুলি একলব্যরাও দেখে টিভির পর্দা দিয়ে। দাঁতে দাঁত চিপে তারা বিড়বিড় করতে করতে সেই সময় বলে- 'এবার রাজার ছেলে আর রাজা হবে না। রাজা সেই হবে যে রাজা হবার যোগ্য"।


মহাভারত এ অবহেলিত চরিত্র একাধিক রয়েছে। যেমন একাধিক চরিত্রের সহাবস্থান হয়েছে এই কাব্যে, সেরকম ভাবেই একাধিক চরিত্র তার প্রাপ্য সম্মান পায়ে নি বা ধরে নেওয়া যেতে পারে এই কাব্যের রচয়িতা বা রচয়িতারা সকলেই একই পথ অনুসরণ করেছেন।

১.যেমন অবহেলিত চরিত্র বলতে প্রথমেই সবার অঙ্গ রাজা কর্ণের কথা মনে হয়। সত্যিই সে অবহেলিত চরিত্র যদিও তাঁর চারিত্রিক কিছু দোষের উল্লেখ আমরা মহাভারতে পাই কিন্তু তিনি সূর্য পুত্র হলেও তাঁকে কিন্তু দেবতার চরিত্র বলে মহাভারতে বলা হয় নি। বলা হয়েছে একজন মানুষ হিসাবে, আর মানুষ হিসাবে তার মধ্যে দোষ আর গুণ দুটোই থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর দোষের থেকে তার প্রতি অনাচার আর অবহেলার ছবিটাই যেন বেশি স্পষ্ট তাঁর জীবনের শেষ লগ্ন পর্যন্ত।

২. হিরিম্বা হলো আর এক অবহেলিত চরিত্র। দাদা হিরিম্ব এর কথায় পঞ্চপান্ডব কে মেরে খাবার জন্য হিরিম্বা সেখানে পৌঁছে একমাত্র জাগ্রত ও পাহারারত ভীষন দেহী ভীম কে দেখে তাঁর প্রেমে পরে গেলেন এবং বিবাহ প্রস্তাব দিয়ে বসলেন। শেষে কিনা যুদীষ্ঠির এর কথায় ভীম বিবাহে রাজী হলেন এবং বিনিময় হিরিম্বা নিজের দাদাকে ভীম এর হাতে মরতে দিলেন। সেই বিবাহও ছিল কিন্তু শর্তসাপক্ষ। তবুও সে কিন্তু ভীমের পত্নী হবার যোগ্য প্রাপ্য পেলেন না, যেমনটা দ্রৌপদী পেলেন। যদিও দ্রৌপদীকে কিন্তু ভীম অর্জন করেননি করেছিলেন অর্জুন আর ভীম হিরিম্বাকে তাঁর দাদা হিরিম্ব কে লড়াইতে পরাস্ত করে।

৩. এবার হিরিম্বাপূত্র ঘটোৎকচের কথায়ে আসি। পিতা ভীম এর মতো অসীম সাহসী এবং পিতা ভীম এর ন্যায় অসীম দৈহিক বল ও ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন এই ঘটোৎকচ। কিন্তু তিনিও কিন্তু তাঁর মায়ের মতো যোগ্য সম্মান পেলেন না। সেটা কি কেবলমাত্র সে তাঁর মায়ের মতো অনার্য ছিলেন তাই? তার উপর তাঁকে কিনা ব্যবহার করা হলো যুদ্ধে বলির স্বরূপ হিসাবে। যাতে কিনা সেই অভাগা কর্ণ তাঁর ইন্দ্রের দেওয়া বাসব শক্তির প্রয়োগ তাঁর উপর করে এবং হত্যা করে। শুধুমাত্র অর্জুন কে কর্ণের হাত থেকে বাঁচাতে ঘটোতকচ কে বলি দেওয়া হলো।

৪. কৌরব আর পাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু কৃপাচার্য এর কথায় আসি। মহাভারতে দ্রোণাচার্য এর আগে কৃপাচার্য এর একটা সম্মানিত স্থান ছিল কৌরব বংশে। কিন্তু দ্রোণাচার্য আসবার পর থেকে কৃপাচার্যকে যেন ইচ্ছা করেই অনেক পিচ্ছনে ঠেলে দেওয়া হলো। সব স্থানেই আছেন কিন্তু যেন সেরকম কোনো ভূমিকাই নেই। সব সম্মান দ্রোণাচার্য নিয়ে গেলেন। যদিও ভীষ্ম কৃপাচার্যকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় মহারথী বলে সম্মানিত করেছিলেন কিন্তু নিজের বীরত্ব দেখাবার সেরকম জায়গা তিনি পেলেন না। সেটার কারণ তাঁর পাণ্ডব প্রীতি হতেও পারে।

৫. অর্জুনের চার পত্নী (দ্রৌপদী, উলুপী, চিত্রাঙ্গদা ও সুভদ্রা)। এরমধ্যে কেবল মাত্র দ্রৌপদী এবং সুভদ্রা ছাড়া বাকি দুজন কিন্তু মহাভারতে হঠাৎ দেখা উল্কাপাত এর মত আবির্ভাব হয়েই মিলিয়ে গেছে। অথচ এদের দুইজনেরই অর্জুন এর পত্নী হবার যোগ্য সন্মান পাওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু ঘটনার বিবর্তন এনাদেরকেও অবহেলা করেছেন। অথচ উলুপির পুত্র ইরাবান কিন্তু অর্জুনের পুত্র হবার দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পাণ্ডব পক্ষে যথার্থ যুদ্ধ করে বীরের মতো প্রাণ দিয়েছেন আবার চিত্রাঙ্গদা র পুত্র বভ্রুবাহণ কর্তৃক অর্জুন কিন্তু পরিশেষে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করেছেন।

৬. এবার আসি দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্রের কথায়। প্রতিবিন্ধ‍্য, সুতসোম, শ্রুতকর্মা, শতানীক ও শ্রুতসেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শেষদিন পর্যন্ত বীরের মত যুদ্ধ করেছেন এই পাঁচ ভাই নিজেদের পিতাদের পাশে দাড়িয়ে আর শেষে কিনা এই পাঁচ বীর যোদ্ধাকে রাত্রে ঘুমন্ত ও নিরস্ত্র অবস্থায় অশ্বত্থামা র হাতে মরতে হলো।

৭. এবার আসি এক শিশুশিল্পী র কথায়। একলব্য । মনেহয় মহাভারতের রচয়িতারা এনাকে ইচ্ছা করেই মনে রাখতে চাননি। যেন একটা অভিশাপ এনাকে মনেরাখা। যিনি কেবলমাত্র গুরুর মূর্তি নিজে হাতে গড়ে তার সম্মুখে ধনুর বান এর অভ্যাস করে এমন কীর্তির ছাপ রেখেছিলেন যে স্বয়ং অর্জুন ভয় পেয়ে তাঁর গুরুকে ভর্ৎসনা করেছিলেন। ফলে গুরুদক্ষিণা বাবদ একলব্য এর বৃদ্ধাঙ্গুলি টি কাটা পড়েছিল। ব্যাস অকেজো করে দেওয়া হলো এক প্রচন্ড প্রতিভা কে। বিভিন্ন জায়গাতেই দেখি সবাই কর্ণ আর অর্জুন এর তুলনা করেন কই কেউ তো একলব্য এর সাথে এদের তুলনা করেন না। আসলে সবাই জানে কে প্রকৃত ধনুর্বিদ। তাই মহাভারতের রচয়িতারা একলব্য কে চরম অবহেলা করলেও পাঠকগণ কিন্তু ওই Guest Apperance চরিত্রটিকে আজীবন মনে রেখেছেন তারা কিন্তু অবহেলা করেননি।

৮. শেষে আসি ভীষ্মের কথায়। সারা জীবনের সমস্ত সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করলেন অন্যের কথা ভেবে। পিতা শান্তনুর দ্বিতীয় বিবাহের কথা ভেবে এবং সেইমত সত্যবতীর বাবাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজে বিবাহ করলেন না সারাজীবন একা কাটালেন। এরপর শান্তনুর মৃত্যুর পরেও সিংহাসন এ বসলেন না বরঞ্চ দুই ভাই চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্র বীর্য এর শিশুকাল এ তাদের হয়ে রাজ্য শাসন করলেন। বিচিত্রবীর্য এর জন্য কাশী র সয়ম্ভর সভা থেকে তিন বোনকে ক্ষত্রিয় নিয়ম অনুযায়ী হরণ করে আনলেন আবার ধৃতরাষ্ট্র, পান্ডু ও বিদুর বড়ো না হওয়া পর্যন্ত তাদের হয়ে আবার রাজ্য শাসন করলেন। কিন্তু একবারও সিংহাসন পেলেন না বা রাজার মর্যাদা পেলেন না। এরপর চোখের সামনে কৌরব দের দুষ্ট কীর্তি আর কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পটভূমি তৈরি হতে দেখতে লাগলেন কিন্তু তাঁর মতপ্রকাশের কোনো স্বাধীনতা পেলেন না বা তাঁর কথা কেউ শুনলেন না। এরপর কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবদের হয়ে লড়াই করে নিজের কর্তব্য পালন করলেন, নিজে অপরাজেও জেনেও পাণ্ডবদের কাছে শিখণ্ডী র রহস্য ফাঁস করে দিলেন এবং তাঁকে পরাজিত করার রাস্তাও বলে দিলেন। সবথেকে পণ্ডিত, বেদজ্ঞ ও যুদ্ধাস্ত্রের প্রয়োগে তাঁর সমকক্ষ কেউ ছিল না, সমগ্র কৌরব বংশের এবং মহাভারতের মেরুদণ্ড ভীষ্মের প্রতি কিন্তু মহাভারত কাহিনী চরম অবহেলাই করেছেন।

এছাড়াও আরো ছোট বড় অনেক চরিত্র মহাভারতে তাঁদের কীর্তির ছাপ রেখে গেছেন। এবং ইনারা প্রত্যেকেই কিন্তু এই কাহিনীকে সম্পূর্ণতা দান করেছেন। কিন্তু আমরা সবাই শেষে ওই হাতেগোনা কয়েকজন কেই মনে রাখি। বাকিদের প্রতি কিন্তু অবহেলাই করি। তাই না?

এটা আমাদের বাস্তব জীবনে প্রত্যেকের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কতগুলো মানুষের সাথে আমাদের যুক্ত হতে হয় এবং এনারা প্রত্যেকেই আমাদের জীবন ও চিন্তন গঠনের জন্য কম বেশি দায়ী থাকে কিন্তু একটা সময় পর কতজন কে আমাদের গভীর চিন্তার জগতে সমান অধিকার দিতে পারি? মহাভারত তার ব্যাতিক্রম কিছু নয়। কথায় আছে যা নেই মহাভারতে, তা নেই ভু-ভারতে।

Wednesday, August 5, 2020

মায়ের_যৌনাঙ্গের_ছবিগুলো_ও_মান্টো

মান্টো মোবাইলফোনের স্ক্রিন স্ক্রল করে করে তার মায়ের যৌনাঙ্গের ছবিগুলো দেখছিল। কিছুক্ষণ পরেই মা এসে তার পাশে দাঁড়ালেন এবং তার হাত থেকে ছোঁ মেরে মোবাইলফোনটি নিয়ে নিলেন। গালে চটাস করে চর বসিয়ে বললেন, "কী দেখছিস"।

মান্টোর কোন ভাবলেস হলোনা। সে খুব ধীরে ধীরে মাথাটা ঘুরিয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকালো। তারপর চোখটা নামিয়ে বললো, "এই পথেইতো পৃথিবীতে এসছি মা। ওরাওতো এমন'ই পথের শেষে পৃথিবীর আলো দেখেছিল, যারা ছবিগুলো আমায় পাঠিয়েছে"। এই যে বুক তোমার, আমার ক্ষুধার কলশ, তোমার পেটের পেলবতা, আমার মিষ্টি বালুস। আমি তো এর বাইরে কোনদিন ঘুমাই নি।"

"আমার কাছে আর কী লুকোবে মা"।

মা দৌড়ে চলে গেলেন।

মান্টো ছিল সময়ের সবচেয়ে সুন্দর সন্তান। তার বাবা ছিলেন পঙ্গু এবং মা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষিকা।

মায়ের বয়স তখন আটত্রিশ এবং মান্টোর বয়স তখন ঊনিশের কোঠায়। সেই দুই বছর বয়স থেকে বা তারও আগে থেকে প্রতিদিন মা তাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন।

তার মনে পড়ে, কত কত মানুষ তার মায়ের দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকাতো! সে চোখের ভাষাগুলো মান্টো তখনও পড়তে পারে না। সে ছিল অবোধ বাচ্চাটা। মায়ের অবোধ শিশু। এমন অনেক চোখওয়ালা পুরুষও তাকে চকোলেট সাধতো। মান্টো কখনোই তাদের সে চকোলেট ছোঁয়নি।

মা মান্টোর হাত ধরে দ্রুত পাড় হতে চাইতেন যেসব রাস্তা, যেসব রাস্তাগুলোর ছিল নির্লজ্জ এনং সুক্ষ্ম চোখ।

আসা-যাওয়ার সময় মায়ের চোখে থাকতো ঘন উদ্বেগ এবং রাস্তাগুলোর প্রতি ঘৃণা। মান্টো মায়ের চোখ বুঝতে পারতো। মা যখন ক্লাসঘরে বসে বাচ্চাদেরকে পড়াতেন তখন মান্টো চুপচাপ মায়ের পাশে বসে থাকতো। মান্টো মাকে পড়তে চেষ্টা করতো।

মা যেন এক অদ্ভূত বেঁচে থাকার লড়াই। মা যেন কাঁধে অখন্ড পাথরের ভারে নুয়ে পড়া অভিশপ্ত দেবতা সিসিফাস। মা যেন চারপাশের অসংখ্য অলৌকিক প্রেতাত্মার ভয়ে নিয়মিত অস্থির। মান্টো জানেনা, নারী মানেই ঈশ্বরের অভিশাপ, মা জানেন।

নারীকে জানেনা বলেই মাকে নিয়ে মান্টোর দিনরাত এত চিন্তাভাবনা।

স্কুল শেষে মা আর মান্টো সেইসব চোখওয়ালা পথ দিয়ে ফিরে যেতো, যেই পথের কথা একটু আগেই বলেছিলাম।

বাড়ি এসে পঙ্গু বাবার সমস্ত পোশাক আশাক পরিবর্তন করে মা তাকে গোসল করিয়ে দিতেন। বাবা নির্লিপ্তের মতো তাকিয়ে থাকতেন মায়ের মুখের দিকে। কখনও তার চোখে অবিশ্বাস, কখনও হতাশা, কখনও যেন বাবার এক বিরাট দুর্ভিক্ষপীড়িত একটি মুখ মান্টোর চোখে ভেসে উঠতো।

বাবাকে খাইয়ে দিয়ে মা মান্টোকে গোসল করাতেন। তারপর মান্টোর মুখের কাছে খাবার নিয়ে এলে মান্টো মায়ের মুখের দিকে তাকাতো। মা তাকে তাড়া দেয়ার পরও মান্টো কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতো। তারপর মা তার নিজের খাবার মুখে তুলে নিলে মান্টো খেতে আসতো।

মান্টোর ছিল একটিমাত্র সবুজ রঙের ঘোড়া। মান্টো তার মায়ের সাথে লুকোচুড়ি খেলার সময় ঘোড়ার পেছন হয়ে মায়ের আঁচলের তলায় লুকাতো। তারপর একটি মিষ্টি কণ্ঠী কোকিলছানার মতো বলতো, "কুক"।

মা তখন মান্টোকে খুঁজতে থাকার ভান করতো এবং মান্টো দৌড়ে এসে মায়ের কোলের উপর আছাড় খেয়ে পড়তো।

[২]

মান্টোর মামা গতকাল এসে বলে গিয়েছিলেন, মাকে তিনি খুন করবেন। মান্টোর চোখে কোন হতাশা নেই, কোন ভয় নেই। কেবল তার চোখে মায়ের একটি ভাঙাচোরা বিদ্ধস্ত মুখের ছবি ভাসে।

মান্টো তার বাবার মুখের দিকে তাকায়। বাবার মুখও ভাবলেসহীন, যেন কোন বিপর্যয়ের ছায়াটুকু নেই। যেন ঈশ্বরের মতো একটি পবিত্র একটি সৌম্য সৌন্দর্য বাবা।

মায়ের কথিত অপরাধের বিষয়ে বাবার ইচ্ছাটুকু অনায়াসে বুঝে নেয় মান্টো। সমস্ত লোকেদের চোখে যা অপরাধ, সৌভাগ্যবান মান্টোর বাবার চোখে মা তা নন।

বাবার চোখে মা সেচ্ছায় তার ভাগ্যকে মেনে নেয়া একজন বঞ্চিত মহিওসী, যে তার শারীরবৃত্তীয় ইচ্ছা এবং অভাব কখনোই পুরোন করতে সচেষ্ট ছিলেন না এবং এক দিনের জন্য কোন এক পুরুষের কাছে সমর্পিত হওয়া ছিল তার জন্য অতি স্বাভাবিক।

মান্টোর চোখে একটি খুশীর ঝলক ঢেউয়ের মতো খেলে যায়। মান্টো সাহস পায় বড় হবার এবং কথিত সমস্ত সাধরণ মানুষকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।

"মান্টোর বাবা ছিল সময়ের সবচেয়ে সুন্দর বাবা"।

বাবার প্রতি মান্টোর সমস্ত শ্রদ্ধা বিগলিত হয়ে ঝরে পড়তে থাকে এবং বাবাকে মনে হয় সমস্ত সাধারণকে ছাড়িয়ে যাওয়া এক পাহাড় মানুষ।

শান্ত সকালের মতো মান্টোর ভেতরের সামান্যতম জটিলতাটুকুও দূর হয়ে যায়।

গত এক বছর যাবৎ মান্টোদের বাসায় যে লোকটি সবচেয়ে বেশি আসতো সে তার মায়ের স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান। যেদিনই মা পেনশনের টাকা তুলে নিয়ে আসেন সেদিনই সেই বানরমুখো লোকটি আসতো। মান্টো বুঝতে পারেনা। সে ভাবে, হয়ত মা ধারের টাকা নিয়মিত শোধ করে যাচ্ছেন।

তারপর যেদিন লোকটির সাথে মায়ের ঝগড়া হলো তার পরদিনই মামা এলেন মাকে খুন করতে। মান্টো কিছুই বুঝতে পারলো না। সে যথারীতি কলেজে গেলো এবং তার সব বন্ধুদের চাহনিতে অন্য রকম কিছু একটা দেখতে পেলো।

তারপর তাকে নিয়ে কেউ কেউ ঠাট্টা করলো, কেউ কেউ সমব্যথী হলো মান্টোর এমন মা এবং তার দুর্ভাগ্যের জন্য। কিছু শিক্ষক ভেতরগত কৌতুক নিয়ে তাকে শান্তনা দেবার চেষ্টা করলো। মান্টো ছিল বরাবরের মতোই নির্লিপ্ত।

চারেপাশের ফিসফিসানির মধ্যে একটু একটু জোড়াতালি হয়ে ঠিক মান্টোর কান পর্যন্ত চলে এসেছিল একটি ঘটনা।

মান্টো যখন ঘটোনাটি সমস্ত চেতনা দিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে, তখন তার চোখে ভেসে উঠলো গত এক বছর ধরে মায়ের পেনশনের সমস্ত টাকার কথা। মায়ের সংসার চালানোর দুরবস্থার কথা, বাবার চিকিৎসা এবং তার পড়ার খরচ দিতে গিয়ে একজন মহিলার প্রতিদিনকার ভেঙেচুড়ে যাওয়া চেহারাটির কথা!

মান্টোর কোন রাগ হলোনা। বরং গভীর রাত পর্যন্ত পড়ার সময় অক্লেশে টেবিলের পাশে বসে থাকা মায়ের সেই দুঃখী মুখটি বারবার ভেসে উঠতে লাগলো।

মান্টো পরদিন সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ছবিগুলোও পেলো। আলাদীনের চেরাগের মতো হুট করে পেলোনা, তার বন্ধুরা পরিকল্পিতভাবেই তার মোবাইলফোনে ছবিগুলো ট্রান্সফার করে দিয়েছিল।

মান্টো সেদিন বাড়ি চলে এলো। বরাবরের মতোই তার কোন ভাবলেস নেই। সে অখুশীও নয় খুশীও নয়।

তারপর থেকে মায়ের সেই ছবিগুলো বহুবার সে দেখেছে। ছবিগুলো ঠিক যেন মায়ের বিদ্ধস্ত মুখের মতোই ভাঙাচোরা। প্রতিটি ছবি যেন তার মায়ের এক একটি কুকড়ে যাওয়া মুহূর্ত।

প্রতিদিন স্নেহময়ী ক্লান্ত মায়ের প্রতি জেগে ওঠা শ্রদ্ধার মতোই মায়ের যৌনাঙ্গের ছবিগুলোর প্রতিও শ্রদ্ধায় মান্টোর মাথা বো-ডাউন হয়ে আসতে থাকে।

গল্পের শুরুতে বলেছিলাম, "মান্টো ছিল সময়ের সবচেয়ে সুন্দর সন্তান", মায়ের সমস্ত কিছুই যার কাছে ছিল শ্রদ্ধার।

[৩]

মান্টো তার বাবাকে ছবিগুলো দেখালো। বাবার ভেতরে প্রথমেই একটা ধাক্কা অনুভব করল মান্টো, তারপর শান্ত স্থিরতা। মান্টোর মনে হলো বাবার ভেতরে যেন বহুকালের যে একটা অতৃপ্তি ছিল সেটি আর নেই। বাবা যেন কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মনের মধ্যে একটি স্থির চিত্র গুছিয়ে নিয়েছেন। বাবা কি আত্মহন্তারক হতে চান, অথবা অন্য কোন কিছু?

মান্টো এই মুহূর্তে বাবাকে ঠিক বুঝতে পারেনা। সে বাবাকে পড়তে চেষ্টা করে এবং সে বাবার কাছে একটি ছবি দেখিয়ে বলে, "এই হলো আমার মানব জনমের সবচেয়ে প্রিয় পথ, সবচেয়ে পবিত্র পথ। এই হলো মায়ের বুক, আমার কাছে যা বেহেস্তের তলদেশে বয়ে যাওয়া মধু অথবা দুধের নহরের চেয়েও পবিত্র। আমি আমার পৃথিবীতে আসার পবিত্র পথকে শ্রদ্ধা করি"। মান্টোর সেইসব সন্তানদের কথা মনে পড়ে যারা তার বন্ধু হয়েছিল। অথচ ওদের এবং ওদের মায়েদের জন্য তার করুণা হয়।

মান্টোর বাবা স্নেহে সন্তানের চুল নেড়ে দেন। তারপর মাকে ডাকেন বাবা। মান্টো চলে যায় তার লাইব্রেরি ঘরে। বাবা এবং মা ততক্ষণে হয়ত অন্য কোন পরিকল্পনা করেন।

মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে যাওয়া মায়ের ছবিগুলো নিয়ে মানুষ কানাঘুষা করে। মান্টোর দিকে তাকায়। মান্টো কিছুই বলে না। মান্টো ভেবে পায়না মানুষের ভুলশুদ্ধ। সে ভাবে, মানুষেরা কত সাধারণ, কত অসহায়!

পরদিন আবার মামা আসেন। তিনি মাকে খুন করতে চান। তার হাতে থাকে একটি রুপালী ছুরি। রুপালী ছুরিতে রোদ পড়ে। মান্টো কিছুক্ষণের জন্য ভয় পায় এবং মায়ের পাশে এসে দাঁড়ায়। অকথ্য গালিগালাজে মান্টোর কান বন্ধ হয়ে আসে। মামা মায়ের চুল ধরেন এবং মাটিতে ফেলে দেন। মামা হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন এবং তারপর ছুটে চলে যান। মান্টো মাকে মাটি থেকে তুলে দেয় এবং লাইব্রেরী ঘরে চলে যায়।

অসংখ্য মানুষ যখন মামাকে অপমান আর টিটকারি করে মামার মাথায় তখন খুন চাপে। মামা প্রায়ই ছুরি নিয়ে দৌড়ে আসতে থাকেন এবং আবার ফিরে যান। মামাকে মান্টোর কাছে মনে হয় মায়ের চেয়েও বেশি অসহায় কেউ।

পরদিন আসে গ্রামের মুসুল্লিদল এবং তারা ঘটনাটিকে ব্যবচ্ছেদ করতে থাকে। কেউ কেউ মুচকি মুচকি হাসে। কেউ কেউ অযথা তরপাতরপি করে। মান্টো উঠোনে এসে দাঁড়ায়, ওদের কথা শোনে। ওদের মুখভঙ্গি এবং কথাগুলো মান্টোর কাছে ভয়ানক অসভ্যতার মতো মনে হয়।

তারপর ওরা একটি শব্দ উচ্চারণ করে। ওদের বিধানে ওটাই ছিল সবচেয়ে যোগ্য শব্দ। মান্টো শব্দটি প্রথম শোনে। ওরা নিয়ম বিধান আরও কী কী নিয়ে যেন আলোচনা করে। মান্টো বোঝেনা।

মান্টোর কলেজ থেকে এরপর আসেন তার সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক। তিনি কিছুক্ষণ মুসুল্লিদের সাথে আলাপ করেন এবং বলেন, ওনারা স্কুল কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছেন কিনা। ওনারা বলেছেন তিনি একজন সম্মানী মানুষ এবং ওনারা যান নি।

মান্টোর প্রিয় শিক্ষক চুপ করে থাকেন। তারপর আসে বৃষ্টি। ঝুৃ্ম বৃষ্টিতে ভিজে যায় উঠোনবাড়ি, গাছ এবং ঘরের সব চাল বেয়ে পড়ে মিষ্টি জল। মান্টো ঘরে আসে। মায়ের দুঃখী মুখের দিকে চেয়ে একই সাথে অনেগুলো গল্প পড়তে থাকে সে। মায়ের মুখমণ্ডল যেন কখনও কখনও এক একটি কালজয়ী গল্প হয়ে ওঠে মান্টোর কাছে।

[৪]

মান্টো এখন আর ঘর থেকে বের হয়না। ঘর থেকে বের হলে প্রায় সব মানুষ'ই ওর দিকে নিরীক্ষক দৃষ্টিতে তাকায়। হাসে। আপাদমস্তক খেয়াল করে। কেউ কেউ গালি দেয়। কেউ কেউ বলে, "তোর মাকে এক রাত এক দিন আমার কাছে থাকতে পাঠাস"।

মান্টো নির্লিপ্ত থাকে। ওদের দীনতা মান্টোকে মনে করিয়ে দেয় একটি ডেভেলপিং সাবকন্টিনেন্ট এর নিকট ভবিষ্যতের কথা এবং জনগনের জননী ও কন্যাদের দুর্ভাগ্য।

খুব নিকট ভবিষ্যতের প্রজন্মগুলো নারীকে মাংসের বাইরে চিন্তা করতে পারে না। প্রজন্মান্তরে হয়তবা আছে সুসংবাদ ও সুসংহতি।

মান্টো এখন নারী এবং পুরুষ বিষয়গুলোর জটিলতা বুঝতে শিখেছে।

এখন সে ভাবতে পারে শরীর ও সততার চিত্রগুলো। এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের সহজ পদ্ধতিগুলো। গত গল্পে একজন স্বশিক্ষিত সংশয়বাদী যা বলতে চেয়েছিলেন এবং বারবার তাকে থামিয়ে দেয়া হয়েছিল। মান্টো সেই স্বশিক্ষিত সংশয়বাদীকেও চিনতো এবং মান্টোর চিন্তাজগত এখন অনেক বিস্তৃত।

মান্টো ওদের কথা ভাবে। ভাবতে থাকে কতকাল লাগবে চলমান পরিস্থিতির প্রকৃত উন্নয়নকাল আসতে। মান্টোর ভেতরে অসংখ প্রশ্নের উদয় হতে থাকে। উন্নয়নশীলতা আসলে কী। কীসের উন্নয়ন একটি পৃথিবীর জন্য প্রকৃত প্রয়োজন।

পুজিবাদী সংস্কৃতি কি মান্টো এবং তার বন্ধু এবং নারীদের মুক্তি দিতে পারে? অথবা লেনিনবাদ বা তার অন্য কোন উকুইভ্যালেন্ট? মান্টো আকাশ পাতাল ভাবে। মান্টোর চোখে তার বন্ধু এবং কয়েক শিক্ষকের লোভাতুর চোখ ভেসে ওঠে। তার চোখে ভাসে অসহায় মায়ের পবিত্রতম এবং অসহায় যননাঙ্গের ছবিগুলো। "শ্রদ্ধা"।

তারপর চলতে থাকে আরও কয়েকটি অসভ্য দিন। নির্মম ও লোভাতুর কয়েকটি মানুষের চোখ নিয়মিত চোখের সামনে আনাগোনা করে। বর্ষার সময়টা সংখ্যাহীন এবং অসংযত দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে কেটে যেতে থাকে।

ধীরে ধীরে মায়ের ভেতর এক ভয়ানক বিষণ্ন নিরবতা বাসা বাঁধতে শুরু করে। অথচ মা নিজেই মান্টোকে বলতেন, "হেরে যাওয়া মানেই অন্যদের জিত"। মান্টো যেন মায়ের কথাগুলো এবং মাকে মেলাতে পারেনা। তার ভেতরে নিরব অস্থিরতা খেলা করে।

কিছুদিন পরই মান্টোর সেই প্রিয় স্যারের একটি চিঠি আসে। চিঠিটি খুব বড় নয়। অল্প কিছু শব্দ এবং কয়েকটি পঙক্তিতে গাঁথা। মান্টো চিঠিটি পড়ে। মান্টোর অসাধারণ ভালোলাগে সেদিন।

মান্টো তার প্রিয় শিক্ষকের কাছে ছুটে যায়। মান্টো তাকে বলে, যেন গ্রামের নবান্নে চিঠিটি পড়ে শোনানো হয়।

স্যার ঠিক তা'ই করতে চেয়েছিলেন। একই কাজ। তিনি চেয়েছিলেন কিছু কথা মানুষকে বলতে, যেগুলো মানুষের জানা দরকার ছিল।

স্যার ছিলেন এক স্থির চরিত্রের সত্যনিষ্ঠ দার্শনিকের মতো। স্যার ছিলেন ছেলেগুলোর বাবার মতো অথবা তাদের চেয়েও ধৈর্যশীল। তিনি ছিলেন শান্ত সুহৃদসম্মিত এবং শক্তিমান ব্যক্তিত্বের এক শ্রেষ্ঠ। তিনি ছিলেন চিন্তার মুক্তিকামনায় প্রবল বিশ্বাসী। তিনি ছিলেন স্বকীয়। নিজেকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য তিনি নিজেই ছিলেন সবচেয়ে যোগ্য।

অথচ তার চারপাশে ছিল অজস্র কুক্ষিগত চিন্তক ও নরকাবাসীরা। যারা কোনদিন বের হতে পারেনি প্রাচীনতম পরিকল্পনা থেকে। যারা নারী এবং বেঁচে থাকা এবং মৃত্যু সম্পর্কে প্রাগৈতিহাসিক ধারণাগুলো চেপে ধরে থাকতে ভালোবাসতো। যারা নিজের মা এবং জন্মমূল ভালোবাসতে পারেনা কোনদিন।

তারা বিদেহী আত্মাদের মতো ভীর করতো এবং চিৎকার করে সময়গুলো পাড় করে দিতো।

প্রিয় স্যার মান্টোকে শান্তনা দিতে চান'নি। কিন্তু মান্টোর নিজেকে মনে হয়েছিল ভীষণ শান্ত, সমৃদ্ধ। মান্টো নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছিল।

[৫]

তারপর একদিন নবান্ন আসে এবং গ্রামের সমস্ত মানুষ দহলিজে জড়ো হয়। মান্টোর প্রিয় স্যার সকলের সামনে একটি উঁচু টিলাবৎ খড়ের গাদায় উপবিষ্ট হন এবং তার পকেট থেকে একটি চিঠি বের করেন। তিনি ধীরে ধীরে চিঠিটির ভাজ খুললেন, যেমন প্রেমিকেরা ভাজ খোলে শাড়ি ও শরীরের। এটি খুব যত্ন সহকারে খোলা হয়েছিল।

তিনি মাত্র কয়েকটি লাইন পড়লেন। লাইনগুলো মান্টো দ্বিতীয়বার শুনলো। তার মনে হচ্ছিল চিঠিটি যেন এক অমরাবতী গল্পের মতো। সমস্ত মানুষ নীরব হয়ে কী যেন ভাবতে লাগলো। তাদের মুখ থেকে আর কোন কথা বের হলো না। তারা বাকরুদ্ধ হয়ে মাটিতে বসে পরেছিল। আসলে তারা প্রথমবারের মতো এমন সব কথা শুনেছিল যা তারা আর কোনদিন শোনেনি।

মান্টো ফিরে এলো। মায়ের হাতে চিঠিটি দিলো এবং মাকে স্যারের চিঠিটি পড়ার ধরণ ও জনতার ভঙ্গিগুলো একে একে বললো।

ছোট চিঠিটিতে লেখা ছিল, "আমাদের নৈতিকতা এবং ধর্মের বাইরেও এমন কিছু সত্য থাকে যা আমরা সকলেই আমাদের ভেতরে লালন করি। আমরা তা ধারণ করি অথচ স্বীকার করিনা। আমরা জিনগতভাবে প্রত্যেকেই মিথ্যুক। 'এক দিনের জন্য হলেও সত্য স্বীকার করুন এবং ভাবুন'।"

সবাই নির্বাক হয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকাতে লাগলো।

প্রিয় স্যার বললেন, "আমরা নারীর অব্যক্ত বাসনাগুলোকে কোনদিনই ভাবিনি। আমরা একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক চাহিদাকে নিয়ে হাস্যরস করি। অথচ নিজেদের ক্ষেত্রে তা সহসায় পুরণ করার ফন্দিতে আমরা সব সময়'ই প্রথম স্থান অধিকার করেছি।

যে নারী চিরকাল যৌবন বেঁধে রাখে আমরা তাকে জনতার সামনে বাহবা দেই অথচ সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করে তার শ্লীলতা হানির জন্য প্রতিনিয়ত নানান কৌশল রপ্ত করতে থাকি। একজন নারীর শরীরবৃত্তীয় স্বাধীনতাকে আমরা স্বীকার করতে অপারগ। কারণ আমরা জিনগতভাবে অটোক্রেট'ও।

মনে হচ্ছিল জনতা ধৈর্যহারা হয়ে যাবে। অথচ তাদের মধ্যে গুটিকয়েক প্রবীণ ও জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন, যারা ধমক দিলেন এবং বললেন, আপনারা চুপ করুন এবং কথাগুলো শুনুন।

কিছুক্ষণ থেমে গিয়ে স্যার আবার বললেন, "প্রতিজন পুরুষের মতো প্রতিজন নারীকেও ঈশ্বর শরীর ও কামনা দিয়েছেন। এটি বায়ুবীয় নয়, এটি মৃত্যুর মত ধ্রুব এবং সুন্দর ও সুখের। আমরা যদি তাকে সত্য মানি! অথচ আমরা বৈষম্যের ক্ষেত্রে অটল।

আমরা একজন পুরুষের অন্যায়কে নারীর উপরে চাপিয়ে দিই এবং বিকৃত আনন্দ আত্মহারা হই। অথচ আমরা জানিনা, আমাদের জানার বাইরেও আছে অসংখ্য সুমহান সত্য"।

স্যার বললেন, "নারীদের যৌন স্বাধীনতা মূল্যায়িত হোক, পুরুষের বিকৃত সুখ ও প্রভুত্ব লোপ হোক"।

স্যার নিচে নেমে এলেন এবং জনতার সাথে মিশে গেলেন।

কারো মুখে'ই কোন কথা নেই। সামান্য সময়ের জন্য সকলেই নিবিষ্ট কবি অথবা দার্শনিক। অথচ কে কতটুকু কী বুঝেছে কিছুই বলা গেল না। তবে সকলের মুখে যেন একটি পরিবর্তিত মুখোশ।

মান্টো ফিরে এসেছিল।

মান্টো এসেছিল তার লাইব্রেরী ঘরে। মূলত বইয়ে ঠাসা লাইব্রেরীটি ছিল তার একমাত্র শোবার ঘর'ও। সেদিন মান্টো নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে। সে স্বপ্ন দেখে অসংখ্য মানুষ সত্যকে ঘিরে গল্পে মশগুল।

মান্টোর মস্তক তার মায়ের যৌননাঙ্গের প্রতি শ্রদ্ধায় নুয়ে পড়ে। কারণ এটি কেবল সংগমদ্বার নয়, এটি পৃথিবীর একটি অনন্য সৃষ্টিদ্বার। এটি পৃথিবীর প্রাণ ও পূর্ণতার দ্বার, যার ভোতর দিয়ে মান্টো এসেছিল।

মান্টো তারপর একটি ছবি আঁকে। পিকাশোর 'ইরোটিক সেন্স অব ফিগার' বা 'নিউড ইন্টু দ্য ফরেস্ট' বা 'আলজিয়ার্স এর নারী'র মতো নয়, অথচ দেখতে ঠিক ওসব আবেদনময় ছবির মতোই। কারণ নারীর যোনিপথের এই ছবির মধ্যে যৌনতা নেই, আছে প্রাণের আবির্ভাব। যারা জ্ঞানী তারা সহসায় বুঝতে পারে।

মূলত এটি একটি জন্ম বৃত্তান্তের ছবি। মান্টো ছবিটি আঁকার সময় নিজেরই জন্মের কথা কল্পনা করতো। কল্পনা করতে থাকতো একটি সামান্য পথ ও তার আকৃতির কথা এবং মায়ের মৃত্যুর শতভাগ সম্ভাবনার কথা! সে কেঁপে উঠতো! মান্টো ছিল সময়ের সবচেয়ে সুন্দর সন্তান, আগেও বলেছিলাম।

মান্টোর চিত্রকর্মটি সকলের কাছে তৎক্ষণাৎ বোধগম্য না হলেও প্রিয় স্যার বুঝতে পেরেছিলেন। ওটি ছিল অনন্য। অথচ ঠিক মায়ের যৌনাঙ্গের ছবিগুলোর মতোই চিত্রটি প্রায় সকলের কাছেই ছিল লোভনীয়।

অথচ মাত্র একশ বছর পর অসংখ্য মানুষের কাছে প্রাণের আবির্ভাব নামের এই ছবিটি হয়ে উঠবে সবচেয়ে নন্দিত চিত্রকর্ম। যে ছবির পাশে থাকবে একটি চিঠি এবং একজন নারীর যৌন স্বাধীনতার ভাস্কর্য।

শেষ...

Tuesday, August 4, 2020

 এক বিএসএফের গুলিতে দুই বিএসএফ নিহত


Image may contain: one or more people, grass, outdoor and nature

এক বিএসএফের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ব্যাটেলিয়নের অপর ২ সেনার। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের ভাতুন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৩টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে।

ভাতুন গ্রাম পঞ্চায়েতের বিএসএফ এর ১৪৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের মালদাখণ্ড সীমান্ত চৌকিতে এ দিন গুলির শব্দে গোটা ক্যাম্প কেঁপে ওঠে। অভিযুক্ত জওয়ান উত্তম সূত্রধর গুলি চালান তারই দুই সহকর্মীকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বিএসএফ ইন্সপেক্টর মহিন্দর সিং ভাট্টি ও কনস্টেবল অনুজ কুমারের।

অল্প সময়ের মধ্যে নিজেই সীমান্ত চৌকির কমান্ডারের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ এর মালদাখণ্ড সীমান্ত চৌকিতে।

গুলিবিদ্ধ মৃত বিএসএফ ইন্সপেক্টর মহিন্দর সিং ভাট্টি ও কনস্টেবল অনুজ কুমারের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয় বিএসএফ। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রায়গঞ্জ থানার পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রায়গঞ্জ থানার ভাতুন গ্রামপঞ্চায়েতের ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার মালদাখন্ড সীমান্ত চৌকির বর্ডার রোডে চৌকির কাজে যুক্ত ছিলেন বিএসএফ এর ইন্সপেক্টর মহিন্দর সিং ভাট্টি, কনস্টেবল অনুজ কুমার এবং বিএসএফ জওয়ান উত্তম সূত্রধর। সোমবার রাতে তাঁরা সীমান্ত প্রহরায় দায়িত্বে ছিলেন। মঙ্গলবার ভোররাতে সাড়ে তিনটে নাগাদ আচমকাই বিএসএফ জওয়ান উত্তম সূত্রধর তার স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে অপর দুজনকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। সীমান্তেই ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় বিএসএফ ইন্সপেক্টর মহিন্দর সিং ভাট্টি ও কনস্টেবল অনুজ কুমারের। এরপর নিজেই মালদাখন্ড সীমান্ত চৌকির কমান্ডারের কাছে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন ঘাতক বিএসএফ জওয়ান উত্তম সূত্রধর।

এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে মালদাখন্ড সীমান্তচৌকি এলাকায়। ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসে রায়গঞ্জ থানার পুলিশ ও বিএসএফ এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত বিএসএফ জওয়ান উত্তম সূত্রধরকে রায়গঞ্জ থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পাশাপাশি ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছে বিএসএফ কর্তৃপক্ষ।

রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার সুমিত কুমার জানিয়েছেন, রায়গঞ্জ থানার বিএসএফ এর ১৪৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের মালদাখন্ড সীমান্ত চৌকির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ জওয়ানদের মৃতদেহ উদ্ধারে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছেছে। কেন জওয়ান গুলি করে তাদের হত্যা করল, তা জানতে পুলিশি তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসা হয়েছে।

সূত্র:হিন্দুস্থান টাইমস